টোকিয়ো: উষ্ণ প্রস্রবণে স্নান করা জাপানের সংস্কৃতির অন্যতম অঙ্গ। প্রতি বছর বহু বিদেশি পর্যটকও এই সংস্কৃতির স্বাদ নিতে আসেন। অথচ, এই উষ্ণ প্রস্রবণে মহিলাদের স্নান করারই ছবি-ভিডিয়ো তোলা হচ্ছিল গোপনে। গত ৩০ বছর ধরে এই জঘন্য কাজ চলছিল। হাজার হাজার মহিলা এর শিকার হয়েছেন। এর পিছনে ছিল এক বিরাট চক্র। চক্রের অংশ ছিল জাপানের অভিজাত ব্যক্তিবর্গ। অবশেষে চলতি মাসের শুরুতে এই চক্রের পর্দাফাঁস করেছে জাপানি পুলিশ। ষোলজন পুরুষকে গ্রেফতার করা হয়েছে। স্থানীয় সংবাদপত্রের প্রতিবেদন অনুযায়ী, এর এক বছর আগেই এই চক্রের মাথা, ৫০ বছর বয়সী কারিন সাইতোকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। তাকে জেরা করেই এই কুৎসিত কর্মকাণ্ডের সন্ধান পাওয়া গিয়েছে।
২০২১ সালের ডিসেম্বরে জাপানের হায়োগো প্রদেশ থেকে ধরা পড়েছিল সাইতো। তার বিরুদ্ধে ভয়ারিজম বা লুকিয়ে ছবি তোলার অভিযোগ আনা হয়েছিল। তাঁকে জেরা করে জানা গিয়েছে, গত ৩০ বছর ধরে জাপানের ৪৬টি প্রদেশ জুড়ে গোপনে ১০ হাজারেরও বেশি মহিলার স্নান করার ছবি ও ভিডিয়ো রেকর্ড করেছিল তারা। জেরায় সাইতো এই গোষ্ঠীর আরও ডজনখানেক সদস্যের নামও প্রকাশ করে। তার ভিত্তিতেই ১ ফেব্রুয়ারি ওই ১৬ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদের মধ্যে কর্পোরেট সংস্থার ঊর্ধ্বতন কর্তারা যেমন আছেন, আছেন সরকারি কর্মকর্তা এবং চিকিৎসকের মতো সমাজের উচ্চস্তরের ব্যক্তিরা।
এই চক্র মূলত খোলা আকাশের নীচে স্নানরত মহিলাদের নিশানা করেছিল। কয়েকশো মিটার দূরের পাহাড় থেকে লুকিয়ে লুকিয়ে টেলিফটো লেন্সের মাধ্যমে স্নানরত মহিলাদের ছবি ও ভিডিয়ো তোলা হত। উচ্চমানের ক্যামেরা, লেন্স ইত্যাদি ব্যবহার করত তারা। কীভাবে স্নানরত মহিলাদের ছবি ও ভিডিয়ো তোলা যায়, বাকিদের সেই শিক্ষা দিয়েছিল সাইতোই। ভিডিয়ো তোলার পর, তাতে সাবটাইটেলও যোগ রা হত। তারপর, ভিডিয়ো ফুটেজগুলি দেখার জন্য তারা এক জায়গায় জড়ো হত। শুধু তাই নয়, এই ব্যক্তিরা তাদের পরিচিত মহিলাদের ঘুমের ওষুধ খাইয়ে, তাদের আপত্তিকর ছবি ও ভিডিয়োও রেকর্ড করত। সেই সঙ্গে এমন সব পার্টির আয়োজন করা হত, যেখানে নিশ্চিন্তে বিভিন্ন বিকৃত কাজে লিপ্ত হত তারা।
জাপান হট স্প্রিংস অ্যাসোসিয়েশনের কার্যনির্বাহী পরিচালক ইউটাকা সেকি জানিয়েছেন, প্রযুক্তির উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে অবৈধ কাজকর্ম এবং অননুমোদিত ফটোগ্রাফি প্রতিরোধ করা কঠিন হয়ে পড়েছে। তিনি বলেছেন, “এটি মর্মান্তিক ঘটনা। গোপনে মহিলাদের নগ্ন ছবি যারা তুলেছে তাদের কঠোর শাস্তি হওয়া উচিত। উষ্ণ প্রস্রবণগুলিতে অবৈধ এবং অননুমোদিত ফটোগ্রাফি এবং ভিডিয়ো তোলা নিষিদ্ধ। কিন্তু, মিনিয়েচার ক্যামেরার মতো নতুন প্রযুক্তি অননুমোদিত ফটোগ্রাফি পুরোপুরি আটকানো কঠিন করে তুলেছে।