নয়া দিল্লি: জাপানের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে(Shinzo Abe)-র সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী(PM Narendra Modi)-র সখ্যতার কথা প্রায় সকলেরই জানা। কূটনৈতিক সম্পর্কের বাইরেও দুই দেশের প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে বন্ধুত্বের সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মঞ্চেও একে অপরের প্রশংসা করতে দেখা গিয়েছিল দুই রাষ্ট্রনেতাকে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর এই বিদেশনীতি বহুল চর্চিত। বন্ধুত্বের মাধ্যমে যেভাবে তিনি ভারতের সঙ্গে অন্যান্য দেশের কূটনৈতিক সম্পর্ককে জোরদার করে তুলেছেন, তা যে কতটা সফল, তার ফের প্রমাণ পাওয়া গেল। জাপানের প্রয়াত প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবের আত্মজীবনীতেও (Biography) করা হল প্রধানমন্ত্রী মোদীর ভূয়সী প্রশংসা।
২০২২ সালের ৮ জুলাই জাপানের পশ্চিমের নারা শহরে একটি জনসভা চলাকালীন হঠাৎ এক আততায়ী প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবেকে লক্ষ্য গুলি চালায়। সঙ্গে সঙ্গে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন তিনি। দ্রুত তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলেও শেষ রক্ষা হয়নি। কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই মারা যান শিনজ়ো আবে। যে চিকিৎসকেরা শেষ মুহূর্ত অবধি শিনজ়ো আবের চিকিৎসা করেছিলেন, তারা জানিয়েছেন গুলিটি হৃৎপিণ্ড ফুঁড়ে বেরিয়ে গিয়েছিল।
শিনজো আবের মৃত্যুর পরই টুইটে শোক প্রকাশ করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তিনি টুইটে বলেছিলেন, “প্রিয় বন্ধুকে হারালাম”। প্রধানমন্ত্রী মোদীর সঙ্গে প্রয়াত প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক এবং দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক নিয়ে একাধিক কাহিনি তুলে ধরা হল আবের আত্মজীবনীতে। জাপানি ভাষায় লেখা ওই বইটি বুধবার থেকেই সে দেশে বিক্রি শুরু হয়েছে। বিভিন্ন সময়ে শিনজো আবের ১৮টি সাক্ষাৎকারের উপরে ভিত্তি করেই এই বইটি লেখা হয়েছে। এই বইতে একদিকে যেমন চিন, রাশিয়ার প্রেসিডেন্টের সঙ্গে শিনজো আবের সাক্ষাৎ ও কূটনৈতিক সম্পর্কের কথা উল্লেখ করা হয়েছে, তেমনই আবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বে দুুই দেশের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্কের উন্নতি এবং বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের কথা বলা হয়েছে।
শিনজো আবের আত্নজীবনীতে বলা হয়েছে, “২০০৬-২০০৭ সালে ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের সঙ্গে কোয়াড সম্পর্কে কথা বলি। কিন্তু চিনের সঙ্গে সম্পর্কের কথা মাথায় রেখেই মনমোহন সিং ইতস্তত করেছিলেন। সেই তুলনায় পরবর্তীকালে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী অনেক বেশি গুরুত্ব দিয়ে বিষয়টি দেখেন। এমনকী নরেন্দ্র মোদী আমায় বলেছিলেন যে জাপান যদি প্রতিনিধিত্ব করে, তবে ভারত কোয়াডে যোগ দেবে।”
জাপানের প্রয়াত প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীর আত্মজীবনীতে অন্যান্য দেশের রাষ্ট্রনেতাদের প্রশংসাও করা হয়েছে, যেমন চিনের রাষ্ট্রনেতা শি জিনপিংকে ‘প্রখর বাস্তববাদী নেতা’ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। প্রাক্তন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে তিনি বিশ্বের নেতৃত্ব করার পরামর্শ দিয়েছিলেন। অন্যান্য রাষ্ট্রনেতাদের সঙ্গে বারাক ওবামার পার্থক্য়ের কথা বলতে গিয়ে শিনজো আবে বলেছিলেন যে রাজনীতির বাইরে অন্য কোনও বিষয় নিয়ে বিশেষ কথা বলেননি ওবামা। ব্যক্তিগত কোনও সম্পর্ক গড়ে ওঠেনি এর কারণে।
এই বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তোলার জায়গা থেকেই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। শিনজো আবের মৃত্য়ুর কথা জানতে পেরেই শোক প্রকাশ করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী। সেই সময়ই তিনি জানিয়েছিলেন, ভারতের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার আগেই, গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীন শিনজো আবের সঙ্গে তাঁর প্রথম পরিচয় হয়েছিল। প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর সেই বন্ধুত্ব আরও গভীর হয়। ২০১৪ সালে প্রধানমন্ত্রীর গদিতে বসার পর, নরেন্দ্র মোদী প্রথমবার যে দেশে বিদেশ সফরে গিয়েছিলেন, তা ছিল জাপান, সেই সময় প্রধানমন্ত্রী ছিলেন শিনজো আবে।
শিনজ়ো আবেও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক অনুষ্ঠানে বারংবার নরেন্দ্র মোদীকে ‘এক মহান দেশের এক অসামান্য নেতা’ বলেছিলেন। মোদীকে তাঁর ‘সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য এবং মূল্যবান বন্ধু’ বলেছিলেন। এমনকী, শিনজো আবে টুইটারে মাত্র তিনজনকে ফলো করতেন, তার মধ্যে একজন ছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। নমো প্রধানমন্ত্রীপদে বসার আগে থেকেই টুইটারে তাঁকে ফলো করতেন শিনজো আবে।
মোদী-আবের এই ব্যক্তিগত সৌহার্দ্য়পূর্ণ সম্পর্কের প্রভাব পড়েছিল ভারত-জাপান সম্পর্কের উন্নয়নেও। শিনজো আবের মৃত্যুর দিনই টুইট করে প্রধানমন্ত্রী মোদী লিখেছিলেন, “গত কয়েক বছরে আপনার নেতৃত্বে ভারত-জাপান অংশীদারিত্ব দারুণভাবে বেড়েছে”। মোদী-আবের আমলে বাণিজ্যিক এবং নিরাপত্তা সংক্রান্ত ক্ষেত্রে দুই দেশের সম্পর্কই ব্যাপক মজবুত হয়েছে। অসামরিক পারমাণবিক শক্তি থেকে শুরু করে সামুদ্রিক নিরাপত্তা, কোয়াড গোষ্ঠী, বুলেট ট্রেন, পরিকাঠামোর উন্নয়ন, অ্যাক্ট ইস্ট নীতি, ইন্দো-প্রশান্তমহাসাগরীয় অঞ্চলের সুরক্ষা কৌশল তৈরি – বিস্তৃত বিষয়ে সহযোগিতার সম্পর্ক গড়ে উঠেছে দুই দেশের মধ্যে।