দীর্ঘ ৩৫ বছর ধরে পাকিস্তানের জরাজীর্ণ এক চিড়িয়াখানাই ছিল ‘কাভান’-এর ঠিকানা। আট বছর আগে ২০১২ সালে সঙ্গিনী সহেলীর মৃত্যুর পর একদম একা হয়ে গিয়েছিল এই পুরুষ হাতিটি। তকমা পেয়েছিল ‘বিশ্বের নিঃসঙ্গতম হাতি’-র। অবশেষে মুক্তি হয়েছে কাভানের। পাকিস্তানের কয়েদ ছেড়ে সে পাড়ি দিয়েছে কম্বোডিয়ায়। খোলা আকাশের নীচে অন্যান্য হাতির দলের সঙ্গে এ বার থেকে থাকবে কাভান। একাকীত্বের জীবন আর কাটাতে হবে না তাকে।
গত আট বছর ধরে একাকীত্বই ছিল কাভানের একমাত্র সঙ্গী। শারীরিক ভাবে দুর্বল হয়ে পড়েছিল সে। দেখা দিয়েছিল মানসিক সমস্যাও। লোহার শিকল দিয়ে অন্ধকার, অপরিচ্ছন্ন জায়গায় বেঁধে রাখা হত কাভানকে। লোহার বেড়ির স্পষ্ট দাগ পড়ে গিয়েছিল তার পায়ে। তবে এখন এইসব কিছু থেকে মুক্তি কাভানের।
২০১৬ কাভানের মুক্তি জন্য আবেদন জানিয়েছিলেন সারা বিশ্বের পশুপ্রেমীরা। এই দলে ছিলেন মার্কিন পপ তারকা এবং অভিনেত্রী শের। কাভানকে ইসলামাবাদের জেল থেকে মুক্ত করার জন্য সমস্ত আইনি জটিলতার খরচ বহন করবেন বলেও জানান তিনি। অনেক দরজা বন্ধ হয়ে গেলেও শেষ পর্যন্ত লড়ে গেছেন শের এবং বাকি পশুপ্রেমী সংগঠন। আর সাফল্যও পেয়েছে তারা। কাভানের মুক্তির খবরে শের বলেছেন, “আমার ইচ্ছেপূরণ হয়েছে। কতদিন ধরে এই মুহূর্তটার জন্য অপেক্ষা করেছিলাম। অবশেষে মুক্তি পেয়েছে কাভান। এ বার আমাদের মধ্যেই থাকবে ও।“
আরও পড়ুন: করোনার ভয়ে মধ্যরাতের ক্রিসমাস সেলিব্রেশন নিষিদ্ধ, জানাল ইটালির স্বাস্থ্য দফতর
ইসলামাবাদের মারঘাজর পশুশালা থেকে বেরিয়ে কম্বোডিয়ার স্যাংচুয়ারিই আপাতত কাভানের নতুন ঠিকানা। তবে ৩৬ বছরের অতিরিক্ত ওজনের এই হাতিকে ইসলামাবাদ থেকে কম্বোডিয়া নিয়ে যাওয়ার কাজটা মোটেও সহজ ছিল না। কিছুতেই পাক সরকারের অনুমতি পাওয়া যাচ্ছিল না। শেষ পর্যন্ত গত অক্টোবরে ইসলামাবাদ হাইকোর্ট আমির খলিল নামে এক পশু চিকিৎসককে কাভানের স্থানাতরের ব্যাপারে অনুমতি দেয়। সেখানে বলা হয় কাভানের শারীরিক অসুস্থতার কথা বলে তাকে অন্যত্র সরানোর জন্য আদালতে আপিল করতে। এরপর চিকিৎসকের আবেদনের ভিত্তিতে কাভানকে কম্বোডিয়া পাঠানোর জন্য গ্রিন সিগন্যাল দেয় ইমরান খান সরকার।
গত ২৯ নভেম্বর আকাশপথে কম্বোডিয়া পৌঁছেছে কাভান। লোহার ক্রেটে চড়ে চার হাজার কিলোমিটার পাড়ি দিয়েছে এই পূর্ণবয়স্ক হাতি। সঙ্গে ছিলেন বিশেষ ডাক্তারদের দল। আর ২০০ কেজি খাবার। মন ভাল করেই সকলের সঙ্গে মিলেমিশে নতুন ঠিকানায় গিয়েছে কাভান।