কুয়ালালামপুর: যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত নিল মালয়েশিয়া। মৃত্যুদণ্ড অপসারণ করার বিষয়ে আইনি সংস্কারের অনুমোদন দিল মালয়েশিয় সংসদ। সোমবার (৩ এপ্রিল), এই বিষয় সংসদে একটি বিল পাস হয়েছে। এই বিলে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হবে, এমন অপরাধের সংখ্যাও কমানো হয়েছে। সেই সঙ্গে আমৃত্যু কারাদণ্ডের সাজাও বাতিল করা হয়েছে। সংবাদ সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, সংশোধনী অনুযায়ী মৃত্যুদণ্ডের পরিবর্তে, এখন থেকে চাবুক মারা, ৩০ থেকে ৪০ বছরের কারাদণ্ডের মতো বিকল্প সাজা দেওয়া হবে। একই সঙ্গে আমৃত্যু কারাদণ্ডের বিষয়ে পূর্ববর্তী সমস্ত বিধান প্রতিস্থাপন করা হবে। তবে, যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের সাজা বহাল থাকছে। মালয়েশিয়ার আইন অনুযায়ী যার মেয়াদ ৩০ বছর। উল্লেখ্য, মালয়েশিয়াতে ২০১৮ সালেই মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার উপর স্থগিতাদেশ জারি করা হয়েছিল।
কাঙ্ক্ষিত ফল মেলেনি
মালয়েশিয় সংসদে বিলটির বিষয়ে বিতর্কের সময়, সেই দেশের সহকারি আইনমন্ত্রী রামকরপাল সিং বলেন, “মৃত্যুদণ্ড একটি অপরিবর্তনীয় শাস্তি। এই শাস্তি অপরাধের কমানোর জন্য কার্যকর হয়নি। মৃত্যুদন্ড কাঙ্ক্ষিত ফলাফল দিতে পারেনি।”
হত্যা এবং মাদক পাচারে আর নেই মৃত্যুদণ্ড
এতদিন পর্যন্ত মালয়েশিয়ায় মোট ৩৪টি অপরাধের ক্ষেত্রে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া যেত। সেই তালিকায় ছিল হত্যা এবং মাদক পাচারের মতো গুরুতর অপরাধ। এখন থেকে এই ধরনের অপরাধগুলির ক্ষেত্রে মৃত্যুদন্ড দেওয়া যাবে না।
সাজা পুনর্বিবেচনা
পাশাপাশি, মালয়েশিয়ায় বর্তমানে ১,৩০০ জনেরও বেশি মানুষ, হয় মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হওয়ার অপেক্ষা করছেন, অথবা, আমৃত্যু কারাদণ্ড ভোগ করছেন। তাদের সকলেরই অন্যান্য সকল আইনি পথ বন্ধ হয়ে গিয়েছে। নতুন বিল পাস হওয়ায়, এই সাজাপ্রাপ্তরা সংশোধিত বিধানের অধীনে তাদের সাজা পুনর্বিবেচনা করার আবেদনও করতে পারবেন।
যুগান্তকারী পদক্ষেপ
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন দেশে, গত কয়েক বছরে মৃত্যুদণ্ডের ব্যবহার ক্রমে বাড়তে দেখা যাচ্ছে। গত বছর, সিঙ্গাপুরে মাদক চোরাচালানের অপরাধে ১১ জনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে। ভারতের প্রতিবেশী মায়ানমারে সামরিক শাসন চলছে। সেই দেশে প্রথম চারজনকে সামরিক সরকার বিরোধী কাজে জড়িত থাকার অপরাধে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে। এরই মধ্যে মৃত্যুদণ্ড বাতিলের মতো যুগান্তকারী পদক্ষেপ নিল মালয়েশিয়া। অন্য কোনও দেশ তাদের দৃষ্টান্ত অনুসরণ করে কি না, সেটাই এখন দেখার।
ভারতে মৃত্যুদণ্ড
ভারতে সাধারণত বিরলের মধ্যে বিরলতম অপরাধের ক্ষেত্রে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। অনেক ক্ষেত্রে মৃত্যুদণ্ডের সাজা কমিয়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়। মৃত্যুদণ্ড বাতিল করার কোনও উদ্যোগ না নেওয়া হলেও, সুপ্রিম কোর্টে বর্তমানে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার উপযুক্ত উপায় নিয়ে বিচার বিবেচনা চলছে।