ওয়াশিংটন: আক্ষরিক অর্থে চাঁদের হাট। বৃহস্পতিবার (২২ জুন), রাতে হোয়াইট হাউসে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সম্মানে আয়োজন করা হয়েছিল রাষ্ট্রীয় নৈশভোজের। হোয়াইট হাউসের এই নৈশভোজের লক্ষ্য ছিল দুই দেশের সাংস্কৃতিক বন্ধনকে আরও শক্তিশালী করা এবং দুই দেশের বন্ধুত্বের উদযাপন। ব্যবসা, প্রযুক্তি, ফ্যাশন, বিনোদন, রাজনীতি – প্রায় সব জতের বিশিষ্ট ভারতীয়-মার্কিন ব্যক্তিত্বদের উপস্থিতিতে সেই লক্ষ্য যে দুর্দান্তভাবে পূরণ হল, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। মার্কিন কংগ্রেসের যৌথ অধিবেশনে ভাষণ দেওয়ার পর, ফের হোয়াইট হাউসে ফিরে আসেন প্রধানমন্ত্রী মোদী। সেখানে তাঁর জন্য অপেক্ষা করছিলেন রাষ্ট্রপতি জো বাইডেন এবং ফার্স্ট লেডি জিল বাইডেন। প্রধানমন্ত্রীকে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানান তাঁরা।
ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী সম্মানে মার্কিন সরকারের আয়োজিত এই রাষ্ট্রীয় নৈশভোজের অতিথিদের তালিকায় কে ছিলেন না? ফ্যাশন ডিজাইনার রাল্ফ লরেন, টেনিস কিংবদন্তি বিলি জিন কিং, মানবাধিকার কর্মী তৃতীয় মার্টিন লুথার কিং, হলিউটি চলচ্চিত্র পরিচালক এম নাইট শ্যামলান, গ্র্যামি পুরস্কার বিজয়ী বাদ্যকার জোশুয়া বেল, উদ্যোগপতি ফ্রাঙ্ক ইসলাম। নৈশভোজে যোগ দিয়েছিলেন গুগল সংস্থার ভারতীয় সিইও সুন্দর পিচাই এবং তাঁর স্ত্রী অঞ্জলি পিচাই-সহ প্রযুক্তি জগতের বহু বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব। ভারতীয় শিল্পনেতাদের মধ্যে ছিলেন রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজের চেয়ারম্যান মুকেশ অম্বানি এবং তাঁর স্ত্রী নীতা অম্বানি, মাহিন্দ্রা গ্রুপের চেয়ারম্যান আনন্দ মাহিন্দ্রা, জিরোধা সংস্থার সহ-প্রতিষ্ঠাতা নিখিল কামাথ প্রমুখ। ছিলেন প্রমীলা জয়পাল, শ্রী থানেদার, রো খান্না, অ্যামি বেরা, রাজা কৃষ্ণমূর্তিদের মতো ভারতীয় বংশোদ্ভূত মার্কিন আইন প্রণেতারা। বাইডেন পরিবার থেকে নৈশভোজে যোগ দেন হান্টার বাইডেন, অ্যাশলি বাইডেন, জেমস বাইডেন এবং নাওমি বাইডেন নিল। উপস্থিত ছিলেন মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিসও। এছাড়া, ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল, বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর এবং বেশ কয়েকজন মার্কিন কূটনীতিক এবং বাইডেন প্রশাসনের সদস্যরা এই নৈশভোজে অংশ নেন।
অতিথিদের খাবারের বিভিন্ন বিধিনিষেধ মেনেই তৈরি করা হয়েছিল খাদ্য তালিকা। আন্তর্জাতিক বাজরা বছরে, হোয়াইট হাউসের রাষ্ট্রীয় নৈশভোজে বাজরার তৈরি বিভিন্ন খাদ্যপদ ছিল। যেমন, ক্রিস্পড মিলেট কেক এবং ম্যারিনেটেড মিলেট। প্রধানমন্ত্রী মোদী নিরামিষাশী বলে, নিনা কার্টিস নামে নিরামীষ পদ রান্নায় পারদর্শী এক রন্ধনশিল্পীকে রান্নার দায়িত্ব দিয়েছিলেন ফার্স্ট লেডি জিল বাইডেন। হোয়াইট হাউসের এক্সিকিউটিভ শেফ ক্রিস কমরফোর্ড এবং হোয়াইট হাউসের এক্সিকিউটিভ পেস্ট্রি শেফ সুসি মরিসনের সঙ্গে যৌথভাবে তিনি এই রাষ্ট্রীয় নৈশভোজের প্রতিটি পদ তৈরি করেন। সংবাদ সংস্থা এএনআই-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, খাদ্যতালিকায় ছিল লেমন-ডিল দই সস, স্কোয়াশের তরকারি, গ্রিলড কর্ন কার্নেল স্যালাড, তরমুজ, ট্যাঙ্গি অ্যাভোকাডো সস, স্টাফড পোর্টোবেলো মাশরুম, কেশর দেওয়া ক্রিমি রিসোটো, গোলাপ ও এলাচ দেওয়া স্ট্রবেরি শর্টকেক ইত্যাদি।
সাধারণত ভিন্ন দেশের রাষ্ট্রনেতা বা রাজাকে সম্মান জানাতে হোয়াইট হাউসে এই রাষ্ট্রীয় নৈশভোজের আয়োজন করা হয়। রাষ্ট্রীয় সফরের অংশ হিসেবেই এই নৈশভোজের আয়োজন করা হয়। এইভাবে ওই রাষ্ট্রপ্রধান এবং তাঁর স্ত্রীকে বিশেষ সম্মান এবং আতিথেয়তা জানায় আমেরিকা। এটি আসলে দুই দেশের সম্পর্ককে মজবুত করতে এক কূটনৈতিক চাল বলা যেতে পারে। হালকা মেজাজের এই নৈশভোজের আসরে, নেতা ও বিশিষ্ট ব্যক্তিদের আলোচনায় এমন অনেক বিষয়ও উঠে আসে, যেগুলি নিয়ে পরবর্তী সময়ে গুরুতর আলোচনা এগিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়।