বুদাপেস্ট: সম্ভ্রান্ত ঘরের মহিলা, তারই হাতে খুন হয়েছিলেন ৬০০-রও বেশি মানুষ! শুধু তাই নয়, নিজের যৌবন ধরে রাখতে সেই মহিলা তার শিকারদের রক্তও পান করত বলে অভিযোগ। ইতিহাসে তাকেই সবচেয়ে মারাত্মক মহিলা হত্যাকারী বলে গণ্য করা হয়। তার নাম কাউন্টেস এলিজাবেথ বাথরি। ১৫৬০ সালে এক ধনী জমিদার পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছিল সে। আধুনিক স্লোভাকিয়ার ক্যাচটিস ক্যাসেলে এক বিলাসবহুল জীবনযাপন করত সে। তবে, তার ডাকনাম ছিল ‘কাউন্টেস ড্রাকুলা’! কৃষক পরিবারের মেয়েদেরকে অপহরণ করে বন্দি করত সে, তারপর নৃশংস অত্যাচার ও হত্যা। এমনটাই শোনা যায়।
কী ধরণের অত্যাচার? ডেইলি স্টারের এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, কাউন্টেস বাথরি তার শিকারদের নির্যাতন করার জন্য যে যে নৃশংস পদ্ধতি ব্যবহার করত, তার মধ্যে ছিল – তাদের নখের নিচে পিন ঢুকিয়ে দেওয়া, তাদের স্তন কামড়ে ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া, তাদের ঠান্ডায় জমিয়ে তিল তিল করে হত্যা করা, তাদের আঙুল বা যৌনাঙ্গ কেটে নেওয়া ইত্যাদি। শুধু কৃষক পরিবারের মেয়েদেরই নয়, ভদ্র ঘরের এবং ধনী পরিবারের মেয়েদেরকেও হত্যা করেছিল সে। তাদের শিক্ষাদান করার অছিলায় সে তার দুর্গে আহ্বান জানাত।
সবচেয়ে ভয়ঙ্কর হল কাউন্টেস বাথরি, প্রতিটি হত্যার পর তার শিকারের রক্তে স্নান করত বলে শোনা যায়। তাদের রক্ত পান করতও বলে মনে করা হয়। কারণ, তার বিশ্বাস ছিল, রক্তপান তার যৌবনকে ধরে রাখতে সাহায্য করবে। ৩০ বছর বয়স হতেই সে বয়স বেড়ে যাওয়ার ভয় পেয়েছিল এবং হত্যাকাণ্ড শুরু করেছিল বলে জানা যায়। সমাজের উঁচু অংশের মানুষ, তাই দীর্ঘদিন ধরে হত্যাকাণ্ড চালিয়ে গেলেও, কেউ কাউন্টেস বাথরিকে ধরতে পারেনি। ১৫৯০ থেকে ১৬১০ – ২০ বছর পর্যন্ত একের পর এক হত্যালীলা চালিয়েছিল সে। অবশেষে, ১৬১০-এর ডিসেম্বরে, চারটি বিশ্বস্ত ভৃত্য-সহ গ্রেফতার করা হয়েছিল ‘কাউন্টেস ড্রাকুলা’কে।
হাঙ্গেরির তৎকালীন রাজা, দ্বিতীয় ম্যাথিয়াস তদন্তের দায়িত্ব দিয়েছিলেন গয়রজি থুরজো নামে একজন প্রভাবশালী ব্যক্তিকে। তিনি কয়েক ডজন সাক্ষীর বিবৃতি সংগ্রহ করেছিলেন। ১৬১১-য় ৮০ জন মেয়েকে হত্যার অভিযোগে বাথরিকে অভিযুক্ত করা হয়েছিল। সেইসঙ্গে তাকে একজন রক্তচোষা এবং শয়তানের সঙ্গে যৌন সম্পর্ক করার অভিযোগেও অভিযুক্ত করা হয়েছিল। মামলার এক সাক্ষী যদিও দাবি করেছিলেন যে তিনি কাউন্টেসের একটি ডায়েরি দেখেছেন, যেখানে সে তার শিকারের কথা লিখে রাখত। সেই ডায়েরি অনুযায়ী তার শিকারের আসল সংখ্যা হল ৬৫০!
‘কাউন্টেস ড্রাকুলার’ চার বিশ্বস্ত চাকরকে পুড়িয়ে মারা হয়েছিল। আর কাউন্টেসকে তার নিজের প্রাসাদেই আজীবন গৃহবন্দী করা হয়েছিল। ১৬১৪ সালে ৫৪ বছর বয়সে তার মৃত্যু হয়। বাথরির সমাহিত দেহাবশেষ কোনওদিন খুঁজে পাওয়া যায়নি। অনুমান করা হয়, তার দুর্গের মাটির নিচেও কোথাও সেই রয়েছে ইতিহাসের সবথেকে ভয়ঙ্কর মহিলা খুনির দেহাবশেষ।