নেইপিড: ভেবেছিল জঙ্গিরা লুকিয়ে রয়েছে স্কুলের ভিতরে। একসঙ্গে সকলকে খতম করতে তাই হেলিকপ্টার থেকেই নির্বিচারে গুলি চালানো হয় স্কুল লক্ষ্য করে। লুকিয়ে থাকা সমস্ত জঙ্গি নিকেশ হয়েছে কি না, তা খতিয়ে দেখতে ভিতরে ঢুকতেই দেখা গেল অন্য চিত্র। স্কুলের ভিতরে জঙ্গিদের লুকিয়ে থাকার কোনও চিহ্ন নেই। মাটিতে পড়ে রয়েছে শুধু পড়ুয়াদের রক্তাক্ত দেহ। মায়ানমারের এই ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে রাষ্ট্রসঙ্ঘের শিশু অধিকার সংস্থাও। তাদের তরফে জানানো হয়েছে, মায়ানমারের জুন্তা বাহিনীর এয়ারস্ট্রাইকেই প্রাণ হারিয়েছে কমপক্ষে ১১ জন স্কুল পড়ুয়া।
গত বছর ফেব্রুয়ারি মাসে দেশের শাসক আন সুকিকে গ্রেফতার করার পরই মায়ানমারে জারি হয়েছে সেনাশাসন। ক্ষমতা দখলের পর থেকেই জুন্তা বাহিনীর বিরুদ্ধে সাধারণ নাগরিকদের উপরে অত্যাচার এবং নারকীয়ভাবে হত্যার অভিযোগ উঠেছে। এখনও অবধি প্রায় ২৩০০ সাধারণ নাগরিককে হত্যা করেছে জুন্তা বাহিনী, এমনটাই দাবি স্থানীয় বাসিন্দাদের।
জানা গিয়েছে, মায়ানমারের উত্তর পশ্চিমে সাগাইং অঞ্চলে বিগত কিছুদিন ধরেই একটি স্থানীয় বিদ্রোহী জঙ্গি গোষ্ঠী মায়ানমারের সেনার বিরুদ্ধে লড়াই শুরু করেছে। ওই গ্রামকে তারা অস্ত্রশস্ত্র লেনদেনের জন্য ব্যবহার করছিল। জুন্তা বাহিনী সেই সংগঠনকে দমন করতেই গত সপ্তাহে ওই গ্রামে হানা দেয়। গোপন সূত্রে তাদের কাছে খবর ছিল যে, গ্রামের স্কুলেই লুকিয়ে রয়েছে জঙ্গিরা। তাদের নিকেশ করতেই সেনা হেলিকপ্টার থেকে গুলি চালানো শুরু করে। পরে যখন তারা ঘটনাস্থল খতিয়ে দেখতে যায়, দেখতে পান যে কোনও জঙ্গি নয়, গুলিতে মৃত্যু হয়েছে কমপক্ষে ১১ জন পড়ুয়ার। আরও কয়েকজন পড়ুয়া গুরুতর আহত হয়েছে বলেই জানা গিয়েছে। গোটা গ্রামটিকেই জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে বলেও অভিযোগ।
রাষ্ট্রসঙ্ঘের শাখা সংগঠন ইউনিসেফ শুক্রবারের এই ঘটনার তুমুল সমালোচনা করে। সোমবার ইউনিসেফের তরফে বিবৃতি জারি করে বলা হয়েছে, “গত ১৬ সেপ্টেম্বর, স্থানীয় এলাকায় আকাশপথে হামলা চালানো ও নির্বিচারে গুলি চালানোর ঘটনায় কমপক্ষে ১১ জন শিশুর মৃত্যু হয়েছে। ওই স্কুলেরই কমপক্ষে ১৫ জন শিশু এখনও নিখোঁজ। ওই শিশুদের দ্রুত উদ্ধার করতে হবে। স্কুল কখনওই হামলার নিশানা হওয়া উচিত নয়।”
ইতিমধ্যেই স্থানীয় সংগঠনের তরফে একটি ভিডিয়োও পোস্ট করা হয়েছে, যেখানে দেখা গিয়েছে স্কুলের ক্লাসরুমের ভিতরে রক্ত পড়ে রয়েছে। ছাদেরও ক্ষতি হয়েছে। মেঝেতে পড়ে রয়েছে শিশুদের মৃতদেহ।
জুন্তা বাহিনীর তরফেও গোটা ঘটনাটি স্বীকার করে নেওয়া হয়েছে। তারা জানিয়েছেন, কাচিন ইন্ডিপেনডেন্স আর্মি নামক একটি বিদ্রোহী গোষ্ঠী সেনা বিরোধী কার্যকলাপ চালাচ্ছিল, এমন কথা জানতে পেরেই তারা হেলিকপ্টারে করে সেনা পাঠায়। ওই সন্ত্রাসবাদীরা সাধারণ নাগরিকদের মানব-ঢাল হিসাবে ব্যবহার করছিল। এয়ারস্ট্রাইকেই বেশ কিছু শিশুর মৃত্যু হয়েছে। ওই গ্রাম থেকে বেশ কিছু বিস্ফোরকও উদ্ধার করা হয়েছে বলে দাবি করেছে জুন্তা বাহিনী।