ওয়াশিংটন: মানব সভ্যতার ভবিষ্যত সুরক্ষিত করতে আত্মঘাতী অভিযানে চলেছে নাসা। আগামী সপ্তাহেই ডাবল অ্যাস্টেরয়েড রিডাইরেকশন টেস্ট বা ডার্ট (DART) মহাকাশযান পৃথিবী থেকে ১ কোটি ১০ লক্ষ মাইল দূরে একটি গ্রহাণুতে প্রবল বেগে গিয়ে ধাক্কা মারবে। এই প্রকল্পের কাজে শুধু নাসা নয়, জড়িত আছে ইউরোপীয় মহাকাশ সংস্থাও।
প্রায়শই পৃথিবীর অত্যন্ত কাছ দিয়ে উড়ে যায় বিভিন্ন মাপের গ্রহাণু। ছোটগুলিকে নিয়ে চিন্তা নেই, কিন্তু তার আকার বড় হলেই মুশকিল। ধ্বংস হয়ে যেতে পারে গোটা মানব সভ্যতা। যেভাবে অবলুপ্তি ঘটেছিল ডাইনোসরদের। আর তাই পৃথিবীর দিকে ছুটে আসা গ্রহাণুগুলিকে মহাকাশযান দিয়ে ধাক্কা মেরে টুকরো টুকরো করে প্রতিহত করা যায় কি না, তার পরীক্ষা করা হচ্ছে। সেই কারণেই এই আত্মঘাতী অভিযান। পরীক্ষা সফল হলে, পৃথিবীর প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার নতুন পথ তৈরি হবে।
২৩ সেপ্টেম্বর এই পরীক্ষা করা হবে। নাসা একটি ছোট আকারের উপগ্রহ পাঠাচ্ছে এই পরীক্ষার ছবি তোলার জন্য। ২৪ ঘন্টা পর সেটি পৃথিবীতে ফিরে আসবে। প্রসঙ্গত, এর আগে ১৯৯৮ সালের হলিউডি ফিল্ম ‘আর্মাগেডন’-এ দেখানো হয়েছিল, পৃথিবীর দিকে ছুটে আসা একটি বড়মাপের গ্রহাণুকে নাসা একটি মহাকাশযানের ধাক্কায় উড়িয়ে দিচ্ছে। এবার সিনেমার সেই কাহিনি বাস্তব হতে চলেছে।
ডার্ট মহাকাশযানটির আকার একটি ওয়াশিং মেশিনের প্রায় দ্বিগুণ। বক্স-আকৃতির এই মহাকাশযানের সঙ্গে দুটি ১৮ মিটার লম্বা সৌর প্যানেল সংযুক্ত থাকে। ২০২১ সালের ২৪ নভেম্বর ক্যালিফোর্নিয়ার ভ্যানডেনবার্গ এয়ার ফোর্স বেস থেকে স্পেসএক্স সংস্থার ফ্যালকন ৯ রকেটের মাধ্যমে মহাকাশযানটি যাত্রা শুরু করেছিল। প্রায় নয় মাস পর এটি পৃথিবী ও মঙ্গল গ্রহের মাঝে অবস্থিত ‘ডিডাইমোস’ গ্রহাণুর কাছাকাছি পৌঁছে গিয়েছে।
তবে, ৭৪৯ মিটার ব্যাসার্ধের ‘ডিডাইমোস’ গ্রহাণুটি নাসার লক্ষ্য নয়। ডিডাইমোসকে প্রদক্ষিণকারী আরও একটি ছোট আকারের গ্রহাণু রয়েছে। সেটির গায়েই ১৫,০০০ মইল প্রতি ঘণ্টা বেগে আঘাত করবে ডার্ট মহাকাশযান। আর যে ছোট আকারের উপগ্রহটি পাঠানো হবে, সেটি ওই ধাক্কার আগের, ধাক্কার সময়ের এবং তার পরের তথ্য সংগ্রহ করবে। নাসার আশা এই ধাক্কার ফলে ডিডাইমোসকে প্রদক্ষিণকারী ওই ছোট গ্রহাণুটির গতিতে এক শতাংশের একটি ভগ্নাংশের পরিবর্তন করবে।
মহাকাশ বিশেষজ্ঞরা ইতিমধ্যে অন্তত ২৬,০০০ নিয়ার আর্থ অবজেক্ট, অর্থাৎ, পৃথিবীর কাছাকাছি থাকা মহাজাগতিক বস্তু চিহ্নিত করেছেন। তার মধ্যে আনুমানিক ৪,৭০০ টি নিয়ে কপালে ভাঁজ রয়েছে নাসার। কারণ সেগুলির ব্যাসার্থ ৫০০ ফুটের বেশি। পৃথিবীর ৪৭ লক্ষ মাইলের মধ্যে ঢুকে পড়লে এগুলি প্রবল বেগে পৃথিবার বুকে আছড়ে পড়তে পারে। তাতে ভয়ঙ্কর ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে। ডিডাইমোস এর মধ্যে না পড়লেও, নাসা এবং ইএসএ-র এই পরীক্ষা সফল হলে, ভবিষ্যতে এই ধরণের বিপদ এড়ানো যাবে।