মস্কো : যুদ্ধ ছাড়া আর কোনও উপায় ছিল না। এই বলেই সামরিক অভিযানের কথা ঘোষণা করেছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। বিশ্বের একাধিক দেশ শান্তির বার্তা দেওয়ার পরও সে সব তোয়াক্কা না করে বৃহস্পতিবার ভোরেই অভিযানের কথা ঘোষণা করেন পুতিন। আর সেই ঘোষণার পরই ইউক্রেন জুড়ে তৈরি হয়েছে সঙ্কট। একের পর এক প্রদেশে প্রবেশ করে কার্যত ধ্বংসলীলা চালাচ্ছে রুশ সেনা। ঘোষণার ২৪ ঘণ্টা পর যখন রাশিয়া সাফল্যের খতিয়ান দিচ্ছে, অন্যদিকে তখন রাশিয়ার রাজপথেই উঠল যুদ্ধ-বিরোধী রব। রাস্তায় নেমে যুদ্ধের বিরুদ্ধে স্লোগান তুললেন বহু রাশিয়ান।
বৃহস্পতিবার ভোর ৬ টায় অভিযানের কথা ঘোষণা করেছেন পুতিন। আর ওই দিন সন্ধেতেই রাশিয়ার রাস্তায় দেখা গেল বহু বিক্ষোভকারীকে। যুদ্ধ নয়, যুদ্ধ নয় বলে স্লোগান দিতে শুরু করেন তাঁরা। ইউক্রেনের প্রতি সমবেদনা জানিয়ে, তাঁদের আর্জি যুদ্ধ বন্ধ করা হোক। বৃহস্পতিবার সন্ধেয় রাশিয়ার সেন্ট পিটার্সবার্গের রাস্তায় জড় হন কয়েক হাজার রুশ নাগরিক।
এ দিন সন্ধ্যা ৭ টা নাগাদ রাস্তায় মানুষ জড় হতে শুরু করে। পরে বিক্ষোভের আকার বড় হলে সামাল দিতে রাস্তায় নামে রুশ পুলিশ। কিছুক্ষণের মধ্যে ধড়পাকড়ও শুরু করে পুলিশ। কয়েক শ বিক্ষোভকারীকে গ্রেফতার করে তুলে নিয়ে যাওয়া হয় পুলিশ ভ্যানে। তারপরও থামেনি স্লোগান। কারও কারও হাতে দেখা যায় বেলুন আর ইউক্রেনের পতাকা।
এক বিক্ষোভকারী বলেন, ‘আমি আজ এখানে এসে একটুও লজ্জিত নই। কিন্তু সকালে খুব লজ্জা করছিল।’ তাঁদের দাবি, যতক্ষণ বিক্ষোভ হবে, প্রতিবাদ হবে, ততক্ষণই আশা বাঁচিয়ে রাখা যাবে। কয়েকজনকে চ্যাংদোলা করেও তুলে নিয়ে যায় পুলিশ। পুলিশের সঙ্গে ধস্তাধস্তির মাঝেও কেউ বলেন, ‘ইউক্রেন আমাদের শত্রু নয়’, কেউ বলেন, ‘পুতিন একজন হত্যাকারী, পুতিন আমাদের লজ্জা।’ গ্রেফতারির পরও আরও বেশি মানুষকে রাস্তায় নামতে দেখা যায়।
শুধু সাধারণ মানুষই নয়, যুদ্ধের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়েছেন রাশিয়ার সাংবাদিক থেকে শুরু করে প্রশাসনিক কর্তারাও। একাধিক সংবাদমাধ্যের তরফে ইউক্রেনে রুশ অভিযানের বিরুদ্ধে আবেদন জানানো হয়েছে। এ ছাড়া রাশিয়ার মিউনিসিপ্যালিটিগুলির দায়িত্বে থাকা ডেপুটিরাও প্রতিবাদ জানিয়েছেন, রুশ হামলার নিন্দাও করেছেন তাঁরা।
তবে এত প্রতিবাদের পরও একটুও পিছপা হয়নি রাশিয়া, বরং প্রথম দিনের সাফল্যের হিসেব কষছে। ইউক্রেনে প্রথম দিনের অভিযানকে সফল অ্যাখ্যা দিয়েই রাশিয়ার বিদেশমন্ত্রক জানিয়েছে, ইউক্রেনে সামরিক অভিযানে প্রথম দিনের যে লক্ষ্যমাত্রা স্থির করা হয়েছিল, তা পূরণ করা সম্ভব হয়েছে। স্থলভাগে মোট যে ৮৩টি জায়গাকে নিশানা হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছিল, তা ধ্বংস করা গিয়েছে। অন্যদিকে, ইউক্রেন পুলিশের তরফেও জানানো হয়েছে, বৃহস্পতিবার সকাল থেকে রাত অবধি রাশিয়া প্রায় ২০৩টি হামলা চালিয়েছে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে।