ইসলামাবাদ: রাত ১০টার পর বিয়ের অনুষ্ঠান নিষিদ্ধ করা হল ইসলামাবাদ শহরে। বুধবার (৮ জুন) এমনই বিধি জারি করেছে পাকিস্তান সরকার। মূলত,বিদ্যুৎশক্তি সংরক্ষণ এবং তীব্র আর্থিক সংকটের মোকাবিলার লক্ষ্যেই এই সিদ্ধান্ত নিল পাক সরকার। পাক সংবাদমাধ্যম ‘জিও নিউজের’ প্রতিবেদন অনুযায়ী পাক প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরীফের নির্দেশেই পাকিস্তানের রাজধানীতে বিয়ের অনুষ্ঠানে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হল। জানা গিয়েছে, পাক সরকারের পক্ষ থেকে ইসলামাবাদ পুলিশ এবং ইসলামাবাদ শহর প্রশাসনকে এই নিষেধাজ্ঞা কঠোরভাবে কার্যকর করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সূত্রের খবর, এই বিধি লঙ্ঘনকারীদের বিরুদ্ধে ইসলামাবাদ প্রশাসনের পক্ষ থেকে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। জিও নিউজ আরও জানিয়েছে, ইসলামাবাদে কোনও বিয়ের অনুষ্ঠানে শুধুমাত্র একটি খাদ্যপদ পরিবেশন করার অনুমতি দেওয়া হবে। বুধবার থেকেই শহরে এই বিধি লাগু করা হচ্ছে। শীঘ্রইস এই সংক্রান্ত বিজ্ঞাপ্তি জারি করবে পাক সরকার।
বর্তমানে তীব্র বিদ্যুতের সংকটের মুখোমুখি পাকিস্তান। দিনকে দিন এই সংকট আরও গভীর হচ্ছে। বর্তমান বিদ্যুৎ সংকট প্রভাব ফেলেছে পাকিস্তানের অর্থনীতিতেও। লোডশেডিং-এর জ্বালা কমাতে বিদ্যুতের ব্যবহার কমানোর লক্ষ্য নিয়েছে পাক সরকার। এর জন্য সরকারের পক্ষ থেকে বিভিন্ন পদক্ষেপ করা হয়েছে। বিদ্যুতের ব্যবহার কমাতে পাকিস্তান কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা থেকে সরকারি অফিসে ফিরিয়ে আনা হয়েছে শনিবারের ছুটি। তারপরেও দিনে অন্তত দুই ঘণ্টা করে লোডশেডিং চলছে পাকিস্তানে। তবে, একমাস আগের থেকে, অবস্থা এখন অনেকটাই ভাল বলে, জানা গিয়েছে।
বর্তমানে পাকিস্তানের শাহবাজ শরীফ সরকারকে মোকাবিলা করতে হচ্ছে দুই বিরাট সমস্যার – অর্থনীতিতে বিপর্যয় এবং রাজনৈতিক অস্থিরতা। অর্থনীতির হাল দীর্ঘদিন ধরেই বেহাল হয়ে রয়েছে। সেই সংকট আরও বাড়িয়েছে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান ও তাঁর সমর্থকদের প্রতিবাদ বিক্ষোভে তৈরি হওয়া অস্থিতিশীলতা। অর্থনৈতিক পর্যবেক্ষকদের আশঙ্কা, এই বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা না নেওয়া হলে, শ্রীলঙ্কার পথ ধরে তলিয়ে যাবে পাকিস্তানও। মঙ্গলবার ইসলামাবাদে, এক প্রাক-বাজেট ব্যবসায়িক সম্মেলনে পাক প্রধানমন্ত্রী সাফ বলেছেন, ‘দেশে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা না আসলে অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতাও আসা সম্ভব নয়’।
বস্তুত, শ্রীলঙ্কার মতোই পাকিস্তানেরও বৈদেশিক মুদ্রার ভাণ্ডার ব্যাপক চাপের মুখে রয়েছে। এক সপ্তাহ আগেই পাকিস্তানের বৈদেশিক মুদ্রার মোট পরিমাণ ছিল ১০৩০৮ কোটি মার্কিন ডলার। কিন্তু, স্টেট ব্যাঙ্ক অফ পাকিস্তান জানিয়েছে, গত এক সপ্তাহে তাদের বৈদেশিক মুদ্রার পরিমাণ কমেছে ১৯ কোটি মার্কিন ডলার! এই অবস্থায়, অর্থনীতিকে চাঙ্গা রাখতে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল বা আইএমএফ-এর দিকেই তাকিয়ে আছে ইসলামাবাদ। ২০১৯ সালের চুক্তি অনুযায়ী আইএমএফ-এর কাছ থেকে ৬০০ কোটি মার্কিন ডলার ঋণ হিসাবে পাওয়ার কথা পাকিস্তানের। এখনও পর্যন্ত এই প্রস্তাবিত অর্থের অর্ধেক পেয়েছে পাকিস্তান। দুই পক্ষের মতপার্থক্য মিটে গেলে পাকিস্তান অবিলম্বে আইএমএফ-এর কাছ থেকে ১০০ কোটি টাকার ঋণ পাবে।