ইসলামাবাদ: শুক্রবার, ২০০৮ সালের মুম্বই সন্ত্রাসবাদী হামলার মাস্টারমাইন্ড সাজিদ মীরকে গ্রেপ্তার করার দাবি করেছে পাকিস্তান। তাকে আট বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে ইসলামাবাদ। মজার বিষয় হল, দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে এই সাজিদ মীরই পাকিস্তানে নেই বলে দাবি করেছিল তারা। এমনকি, তাকে মৃত বলে দাবি করেছিল পাক সরকার। তবে এতে আর আশ্চর্যের কী আছে? মীরকে গ্রেফতার করা হলেও, এখনও সেই দেশে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে জইশ-ই-মহম্মদ প্রধান মৌলানা মাসুদ আজহার। সবাই জানে সে বহাল তবিয়তে তার আস্তানা বাহাওয়ালপুরেই রয়েছে। তবে পাকিস্তানের দাবি তাকে না কি খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।
ডেভিড হেডলি এবং অন্যান্য জঙ্গিদের হ্যান্ডলার ছিল। এই জঙ্গিদেরই মুম্বই সন্ত্রাসবাদী হামলার পরিকল্পনা, প্রস্তুতি এবং পরিচালনার দায়িত্ব দিয়েছিল লস্কর-ই-তৈবা। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া, ফ্রান্স, ডেনমার্ক এবং যুক্তরাজ্য-সহ প্রায় ছয়টি দেশেও বিভিন্ন হামলা চালিয়েছে সাজিদ মীর। মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টও তাকে মোস্ট ওয়ান্টেড সন্ত্রাসবাদী বলে ঘোষণা করেছিল। তার সম্পর্কে তথ্য দিলে ৫০ লক্ষ টাকা পুরস্কার দেওয়ার কথাও ঘোষণা করেছিল। তবে কীভাবে এলইটি গোষ্ঠীতে তার উত্থান, কে তার নেতা ছিল – কোনও তথ্যই পাওয়া যায় না। কয়েকটি প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে ১৬ বছর বয়সেই সে জঙ্গি দলে যোগ দিয়েছিল। অন্য কয়েকটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সে পাক সেনাবাহিনী বা আইএসআই-এর একজন কর্তা ছিল। পরে লস্করে যোগ দিয়েছিল।
এর আগে সাজিদ মীর মৃত বলে পাকিস্তানের তরফ থেকে দাবি করা হলেও, বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন সংস্থা তার হদিস জানিয়েছে। ২০২০ সালে জানা গিয়েছিল, পাক শহর রাওয়ালপিন্ডি বা লাহোরে সে পাক গুপ্তচর সংস্থা আইএসআই-এর সুরক্ষায় রয়েছে। তাকে আইএসআই-এর পক্ষ থেকে সপ্তম স্তরের সুরক্ষা দেওয়া হয়েছিল বলে দাবি করেছিল এক সূত্র। যে স্তরের নিরাপত্তা সাধারণত কোনও রাষ্ট্রপ্রধানকে দিয়ে থাকে আইএসআই। এমনকি, ২৬/১১ হামলার পর তার মুখ প্লাস্টিক সার্জারি করে বদলে দিয়েছিল আইএসআই, এমনটাও শোনা যায়।
তাহলে, এখন হঠাৎ করে কেন এই কুখ্যাত জঙ্গি নেতাকে গ্রেফতার করল পাকিস্তান? আসলে এখন ফিনান্সিয়াল অ্যাকশন টাস্ক ফোর্স বা এফএটিএফ-এর ধূসর তালিকাভুক্ত হওয়া থেকে বাঁচার আপ্রাণ চেষ্টা করছে ইসলামাবাদ। তারই অংশ হিসাবে এতদিন অস্বীকার করার পর, আচমকা সাজিদ মীরকে গ্রেফতারের নাটক করছে পাকিস্তান, এমনটা মনে করা হচ্ছে। অথচ একই সময়ে পুলওয়ামা হামলার মূল চক্রী মাসুদ আজহারকে ‘খুঁজেই পাচ্ছে না’ পাক পুলিশ। বারংবার চিনের বাধা সত্ত্বেও, ২০১৯ সালে রাষ্ট্রসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ তাকে বৈশ্বিক সন্ত্রাসী বলে ঘোষণা করেছিল।