ইসলামাবাদ: পড়শি দেশের অর্থনৈতিক সঙ্কট এখন সর্বজনবিদিত। এক মুঠো আটার জন্য সেখানে নাগরিকদের হাহাকার গোটা বিশ্ব দেখেছে। অর্থনৈতিক সঙ্কটের (Economic Crisis) সাঁড়াশি চাপে এখন নাভিঃশ্বাস উঠেছে প্রশাসনেরও। আন্তর্জাতিক অর্থ তহবিল থেকে ঋণ পাওয়ার বিষয়ে এখনও নিশ্চয়তা পায়নি পাকিস্তান। ধীরে ধীরে আরও অন্ধকারে ডুবছে সেদেশ। এই অর্থনৈতিক সঙ্কটের ভয়াবহ প্রভাব পড়েছে চিকিৎসা ব্যবস্থাতেও। পাকিস্তানে এখন প্রয়োজনীয় ওষুধ পাওয়ার জন্যও কসরত করতে হচ্ছে সাধারণ মানুষদের। দেশে বিদেশি মুদ্রার ভাণ্ডার তলানিতে ঠেকায় প্রয়োজনীয় ওষুধ এবং দেশে ওষুধ তৈরিতে প্রয়োজনীয় সামগ্রী আমদানি করার ক্ষেত্রেও প্রভাব পড়েছে ।
এর ফলে স্থানীয় ওষুধ প্রস্তুতকারকরা নিজেদের উৎপাদন কমিয়ে আনতে বাধ্য হয়েছে। আর ওষুধ ও চিকিৎসাগত সরঞ্জামের ঘাটতির কারণে ডাক্তাররা অস্ত্রোপচার করতে প্রস্তুত নন। কোনও গুরুত্বপূর্ণ ও বড় অস্ত্রোপচারের ক্ষেত্রে অ্য়ানাস্থেশিয়ার প্রয়োজন হয়। হার্ট, ক্যানসার ও কিডনির অস্ত্রোপচারের ক্ষেত্রে তো তা ব্যবহার করতেই হয়। কিন্তু পাকিস্তানের স্থানীয় সংবাদ মাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, অপারেশন থিয়েটারে মাত্র দু’মাসেরই অ্যানস্থেশিয়া করার সামগ্রী রয়েছে। এর ফলে পাকিস্তানের হাসপাতালে চাকরিও হারাতে পারেন অনেকে।
এই পরিস্থিতির জন্য ওষুধ প্রস্তুতকারকরা দেশের অর্থনৈতিক অবস্থাকেই দায়ী করেছেন। তাঁদের অভিযোগ, বাণিজ্য ব্যাঙ্কগুলি আমদানির জন্য লেটার অব ক্রেডিট দিতে প্রস্তুত নয়। এক্ষেত্রে উল্লেখ্য, পাকিস্তানের ওষুধ উৎপাদন অনেকাংশে কাঁচামাল আমদানির উপর নির্ভরশীল। ভারত ও চিন সহ একাধিক দেশ থেকে ৯৫ শতাংশ কাঁচামালই আমদানি করে পাকিস্তান। ব্যাঙ্কিং সিস্টেমে ডলারের ঘাটতির জন্য ওষুধ প্রস্তুতকারকদের মধ্যে বেশিরভাগেরই কাঁচামাল করাচি বন্দরে আটকে রয়েছে। ওষুধ উৎপাদনকারী সংস্থাগুলি জানিয়েছে, ক্রমবর্ধমান জ্বালানির দাম, পরিবহন খরচ বৃদ্ধি এবং পাকিস্তানি রুপির তীব্র অবমূল্যায়নের কারণে ওষুধ তৈরির খরচ ক্রমাগত বাড়ছে। সম্প্রতি পাকিস্তান মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন (পিএমএ) পরিস্থিতিকে বিপর্যয়ে পরিণত হওয়া থেকে বিরত রাখতে সরকারের হস্তক্ষেপের আহ্বান জানিয়েছে। তবে কর্তৃপক্ষ তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ নেওয়ার পরিবর্তে এখনও ঘাটতির পরিমাণ নির্ধারণের চেষ্টা করছে।
পাকিস্তানের পঞ্জাবের ওষুধের খুচরো বিক্রেতারা জানিয়েছেন যে সরকারি সমীক্ষা দলগুলি গুরুত্বপূর্ণ ওষুধের কতটা ঘাটতি রয়েছে তা নির্ধারণের জন্য পরিদর্শন করছে। খুচরো বিক্রেতারা জানিয়েছেন কিছু সাধারণ কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ ওষুধের ঘাটতি বেশিরভাগ গ্রাহককে প্রভাবিত করছে। এই ওষুধগুলির মধ্যে রয়েছে প্যানাডল, ইনসুলিন, ব্রুফেন, ডিসপ্রিন, ক্যালপল, টেগ্রাল, নিমেসুলাইড, হেপামার্জ, বুসকোপান এবং রিভোট্রিল ইত্যাদি। এর আগে জানুয়ারিতে পাকিস্তান ফার্মাসিউটিক্যাল ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের (পিপিএমএ) কেন্দ্রীয় চেয়ারম্যান সৈয়দ ফারুক বুখারি বলেছেন, বর্তমানে প্রায় ২০-২৫ শতাংশ ওষুধ উৎপাদন মন্থর রয়েছে। তিনি আরও বলেন, ‘আগামী চার থেকে পাঁচ সপ্তাহের জন্য বর্তমান নীতি (আমদানি নিষেধাজ্ঞা) বহাল থাকলে দেশে সবচেয়ে ভয়াবহ ওষুধ সংকট দেখা দেবে।’