ওয়াশিংটন: মাধ্যাকর্ষণে অ্যালার্জি! অবিশ্বাস্য মনে হতে পারে, কিন্তু ঠিক এমনটাই দাবি করেছেন লিন্ডসি জনসন নামে এক মার্কিন মহিলা। ২৮ বছর বয়সী লিন্ডসির দাবি, তাঁর ‘মাধ্যাকর্ষণে অ্যালার্জি রয়েছে’ এবং এই কারণে তিনি দিনে অন্তত দশবার অজ্ঞান হয়ে যান। দিনের ২৩ ঘন্টাই প্রায় তাঁকে বিছানায় শুয়ে কাটাতে হয়। মাঝে মাঝে বিছানাতেই বসে থাকেন। শুধুমাত্র স্নান-খাওয়ার মতো প্রয়োজনীয় কাজের জন্য উঠে দাঁড়ান। চিকিৎসকদের মতে, এটা আসলে একটা অত্যন্ত বিরল স্বাস্থ্যগত সমস্যা।
দিনের বেশিরভাগ সময়ই তিনি বিছানায় কাটান, কারণ তাঁর দাবি মিনিট তিনেকের বেশি তিনি দাঁড়িয়ে থাকতে পারেন না। এর বেশি সময় দাঁড়ালেই তিনি সংজ্ঞা হারান। লিন্ডসি বলেছেন, “আমার মাধ্যাকর্ষণে অ্যালার্জি আছে। অবিশ্বাস্য শোনাচ্ছে, কিন্তু এটা সত্যি। ৩ মিনিটের বেশি সময় ধরে দাঁড়িয়ে থাকলেই আমি অজ্ঞান হয়ে যাই বা অসুস্থ বোধ করি। একমাত্র শুয়ে থাকলে আমি ভাল থাকি। তাই, দিনে ২৩ ঘন্টা আমি শুয়েই থাকি। আমি কখনও ভাবিনি যে মাত্র ২৮ বছর বয়সে আমাকে শাওয়ার চেয়ার ব্যবহার করতে হবে। আমি আর বাড়ি থেকেও বের হতে পারি না। এর কোন প্রতিকার নেই।”
তবে, জন্ম থেকে এরকম অবস্থা ছিল না লিন্ডসি জনসনের। একটা সময় তিনি মার্কিন নৌবাহিনীতে বিমানের ডিজেল মেকানিক হিসেবে কাজ করতেন। কিন্তু এখন, এই বিরল অবস্থার কারণে, সেই কাজ ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন। কীভাবে শুরু হয়েছিল এই অদ্ভূত অ্যালার্জি? লিন্ডসি জানিয়েছেন, প্রাথমিকভাবে তাঁর পেট এবং পিঠে ব্যথা শুরু হয়েছিল। ধীরে ধীরে উপসর্গ বাড়তে থাকে। শুরু হয় বার বার করে বমি হওয়া এবং ঘন ঘন অজ্ঞান হয়ে যাওয়া। সেই সময় তিনি নৌবাহিনীর কাজে বিদেশে ছিলেন। ডাক্তার দেখিয়েছিলেন, কিন্তু তাঁরা লিন্ডসির রোগ নির্ণয় করতে পারেননি। ২০১৮ সালের মে মাসে, সামরিক বাহিনী থেকে তাঁকে স্বাস্থ্যগত কারণে ছাঁটাই করা হয়। ততদিনে গাড়ি চালাতে গিয়ে, এমনকি, একটু ঝুঁকে দাঁড়ালেও অজ্ঞান হয়ে যেতে শুরু করেছিলেন লিন্ডসি জনসন।
অবশেষে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি তাঁর রোগ নির্ণয় করতে সক্ষম হয়েছেন চিকিৎসকরা। ডাক্তাররা জানিয়েছেন, লিন্ডসি জনসন আসলে ‘পোস্টুরাল টাকিকার্ডিয়া সিনড্রোম বা পিওটিএস (PoTS)’ রোগে আক্রান্ত হয়েছেন। যাকে তিনি বলছেন ‘মাধ্যাকর্ষণ থেকে অ্যালার্জি’। কী এই পিওটিএস? চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, এই রোগে আক্রান্তদের শরীরের বেশিরভাগ রক্ত শরীরের নীচের অংশে থাকে। এর ফলে এই রোগীরা যখনই দাঁড়িয়ে থাকেন, তখন তাঁদের হৃদস্পন্দন একলাফে অনেকটা বেড়ে যায়। রক্তের এই অস্বাভাবিক প্রবাহের ফলেই মাথা ঘোরা, অজ্ঞান হয়ে যাওয়া, দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে আসা, বমি-বমি ভাব, বমি হওয়া, পেটে ব্যথা, শরীর ফুলে যাওয়া, মাথা ঝিম ঝিম করা এবং মানসিক উদ্বেগ তৈরি হয়।
লিন্ডসি জনসনের এখন কী অবস্থা? তাঁর চিকিৎসা চলছে, অনেকটা সুস্থও হয়ে উঠেছেন, তবে পুরোপুরি নয়। লিন্ডসি জানিয়েছেন, আগে যেখানে দিনে দশবার অজ্ঞান হয়ে যেতেন, সেখানে এখন অজ্ঞান হওয়ার মাত্রা কমে দিনে তিনবারে দাঁড়িয়েছে। তবে এখনও স্বাভাবিক মানুষের মতো দৈনন্দিন কাজকর্ম করতে পারেন না তিনি। সব কাজেই তাঁকে তাঁর স্বামী জেমস জনসনের সহায়তা নিতে হয়। তিনিই লিন্ডসের পরিচর্যা করে থাকেন। এর জন্য স্বামীর প্রতি তিনি ‘অত্যন্ত কৃতজ্ঞ’ বলে জানিয়েছেন লিন্ডসি।
তিনি বলেছেন, “আমি এখনও সত্যিই কিছু করতে পারি না। এটা সত্যিই একটা দুর্বলতা। আমি কোনও কাজ করতে পারি না। জেমসকেই রান্না করতে হয়, সব কিছু পরিষ্কার করতে হয়। পাশাপাশি আমাকে স্নান করতেও সাহায্য করে ও। আমি কয়েক সপ্তাহ ধরে দাঁত ব্রাশ করি না। কারণ দাঁত মাজতেও আমায় অন্যের সাহায্য নিয়ে হবে, এটা ভাবলেই আমার খুব খারাপ লাগে। যদি কোনওদিন আমি একটি পদও রান্না করি, তাহলে আগামী তিন দিন আর কিছু করতে পারি না। যদি যতক্ষণ আমি শুয়ে থাকি, ভাল থাকি। কিন্তু যেই আমি উঠে দাঁড়াই, আমার মাথা ঘোরে এবং আমি অজ্ঞান হয়ে যাই। এই নতুন জীবনের সঙ্গে আমাকে খাপ খাইয়ে নিতে হয়েছে।”