পঞ্জশীর: তালিব সরকার মানতে নারাজ প্রতিরোধ বাহিনী (Resistance Front)। এ দিন পঞ্জশীরের প্রতিরোধ বাহিনীর তরফে তালিবান সরকারকে “অবৈধ্য” বলে ঘোষণা করা হল। একইসঙ্গে আফগানিস্তানের রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে মিলিত হয়ে আলাদা সরকার তৈরির কথাও জানালেন প্রতিরোধ বাহিনীর নেতা আহমেদ মাসুদ (Ahmed Masooud)।
১৫ অগস্ট আফগানিস্তানের ক্ষমতা দখলের পরও রাজধানী কাবুলের উত্তরে অবস্থিত পাহাড় ঘেরা পঞ্জশীর (Panjshir) দখল করতে পারছিল না তালিবান (Taliban)। দীর্ঘ এক সপ্তাহ ধরে লড়াই চালানোর পর সোমবার পঞ্জশীরের রাজধানীতে ঢুকে পড়ে তালিবান বাহিনী। গভর্নর হাউসে তালিবান পতাকা উত্তোলন করে তারা পঞ্জশীরে নিজেদের দখল ঘোষণা করে।
তবে হার মানতে নারাজ প্রতিরোধ বাহিনীও। তালিবানের তরফে আহমেদ মাসুদকে বন্দি বানানোর দাবি করা হলেও সেই জল্পনা উড়িয়ে দেন আহমেদ মাসুদ নিজেই। সোমবার রাতেই তিনি অডিয়ো বার্তায় বলেন, “প্রতিরোধ বাহিনী এখনও পঞ্জশীরেই রয়েছে এবং তারা তালিবানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালিয়ে যাবে।”
দেশের বাসিন্দা ও আন্তর্জাতিক মহলের কাছে আবেদন জানিয়ে তিনি বলেন, “সকলেরই উচিত তালিবান বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে যোগ দেওয়া। তালিবান বদলে গিয়েছে ঠিকই, তবে তারা আরও হিংস্র হয়ে উঠেছে।” তালিবানের সঙ্গে আলোচনায় বসায় তিনি রাষ্ট্রপুঞ্জকেও দোষারোপ করেন।
এ দিকে, গতকাল রাতেই নতুন সরকারের ঘোষণা করে তালিব বাহিনী। মন্ত্রিসভার ৩৩ সদস্যের নামও ঘোষণা করা হয়। প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পেয়েছেন মহম্মদ হাসান আখুন্দ, তাঁর ডেপুটি পদে থাকবেন আব্দুল গনি বরাদর। ইরান মডেলেই তৈরি এই সরকারের শীর্ষ স্থানে থাকবেন হিবাতুল্লাহ আখুন্দজাদা।
আফগানিস্তানের বিদেশ মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্বভার সামলাবেন আমির খান মুত্তাকি, তাঁর ডেপুটি হবেন আব্বাস স্তানিকজাই।। সরাজউদ্দিন হাক্কানি আফগানিস্তানের অভ্যন্তরীণ বিষয়ক মন্ত্রী হিসাবে দায়িত্ব পালন করবেন। দায়িত্বপ্রাপ্ত বিদেশ মন্ত্রী হলেন আমির খান মুত্তাকি। অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে মোল্লা হেদিয়াততুল্লা বাদরিকে। দায়িত্বপ্রাপ্ত শিক্ষা মন্ত্রী করা হয়েছে শেখ মৌলবি নুরউল্লাহ মুনির। সংস্কৃতি মন্ত্রী হলেন মোল্লা খাইরুল্লা খেরখান।
তালিবানের সরকার ঘোষণার পরই এ দিন প্রতিরোধ বাহিনীর তরফে জানানো হয়, তারা তালিবান সরকারকে মানে না। এই সরকার অবৈধ্য। প্রতিরোধ বাহিনীর সহ প্রতিষ্ঠাতা আহমেদ মাসুদ বলেন, “প্রতিরোধ বাহিনী একটি গণতান্ত্রিক ও বৈধ সরকার গঠন করবে যা সাধারণ মানুষের ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিত হবে এবং আন্তর্জাতিক মহলের স্বীকৃতিও পাবে।”
তিনি আরও যোগ করে বলেন, “তালিবানের অবৈধ্য সরকার গঠনেই স্পষ্টত বোঝা যাচ্ছে যে আফগানিস্তানের মানুষের শত্রু এই সরকার এবং আফগানিস্তান তথা গোটা বিশ্বের নিরাপত্তা ও সুরক্ষার জন্য বিপদ।” যদিও এই সরকার কবে গঠন করা হবে এবং কাদেরই বা সমর্থনে সরকার গঠন করা হবে, সে সম্পর্কে কিছু জানানো হয়নি এখনও।
সূত্রের খবর, আপাতত তাজিকিস্তানে রয়েছেন প্রতিরোধ বাহিনীর প্রধান আহমেদ মাসুদ। অন্যদিকে, প্রতিরোধ বাহিনীর বাকি সদস্য়রা লুকিয়ে রয়েছে পঞ্জশীরের পার্বত্য অঞ্চলগুলিতেই। সুযোগ বুঝেই তারা ফের তালিবানের উপর হামলা চালিয়ে পঞ্জশীর তালিব দখলমুক্ত করতে পারে। এই পরিস্থিতিতে প্রতিরোধ বাহিনীর নতুন সরকার গঠনের ঘোষণা তালিবানকে আরও বিপাকে ফেলতে পারে।
আরও পড়ুন: পাকিস্তানের আঙুলেই নাচছে তালিবান! হাক্কানিদের অতিরিক্ত প্রাধান্যে চিন্তায় ভারত