কিয়েভ: ১০০ দিন পেরিয়ে গিয়েছে। তবে এখনও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধের কোনও লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। একের পর এক ইউক্রেনীয় শহর ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। শতাধিক শিশু-সহ মৃত্যু হয়েছে অসংখ্য মানুষের। ভিটে ছাড়া হয়েছেন এত মানুষ, যে বলা হচ্ছে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর এমনটা দেখা যায়নি। এই সব ট্র্যাজিক কাহিনির ভিড়ে অবশ্য মাথাচাড়া দিচ্ছে কিছু অভূতপূর্ব বীরগাথাও। এমনই বীরগাথার জন্ম দিয়েছে ১৫ বছরের ইউক্রেনীয় কিশোর আন্দ্রি পোকরাসা এবং তাঁর বাবা স্তানিস্লাভ পোকরাসাও। একটি খেলনা ড্রোন দিয়েই প্রবল পরাক্রমী রুশ ট্যাঙ্কের মোকাবিলা করেছেন এই বাবা-ছেলের জুটি। বর্তমানে দেশবাসীর কাছে এই বাবা-ছেলের জুটি নায়ক।
ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভের উপকণ্ঠেই এক গ্রামে পোকরাসাদের বাড়ি। যুদ্ধ শুরুর আগে, বিশ্বের আর পাঁচটি কিশোরের থেকে আলাদা ছিল না আন্দ্রির জীবন। পড়াশোনার পাশাপাশি ড্রোন ওড়ানো ছিল তার নেশা। তবে, ফেব্রুয়ারির শেষে রুশ হামলা শুরুর পরই বদলে গিয়েছিল তার জীবন। পরিবারের সঙ্গে আন্দ্রিকেও পোল্যান্ডে পাঠিয়ে দিয়েছিলেন তার বাবা স্তানিস্লাভ। নিজে থেকে গিয়েছিলেন ইউক্রেনীয় সেনাকে সহায়তার জন্য। কয়েক সপ্তাহ পরেই অবশ্য আন্দ্রি ফিরে এসেছিল। যোগ দিয়েছিল তার বাবার সঙ্গে।
তারপর থেকে বাবা-ছেলের এই জুটি, নিয়মিত রুশ ট্যাঙ্কগুলির গতিবিধি অনুসরণ করা শুরু করেছিলেন। রুশ ট্যাঙ্ক কখন, কোন রাস্তায় যাচ্ছে, তা দেখার জন্য আন্দ্রির একটি খেলনা ড্রোন ব্যবহার করেছিলেন তাঁরা। স্তানিস্লাভ নিজেও ড্রোন ওড়াতে পারেন। কিন্তু, ছেলে আন্দ্রি এই বিষয়ে অত্যন্ত দক্ষ। অবিলম্বে স্তানিস্লাভ সিদ্ধান্ত নেন, ছেলেই ড্রোন পরিচালনা করবে। তারপর থেকে ছোট্ট ড্রোনটি দিয়ে, তারা রুশ বাহিনীর অবস্থানের উপর নজরদারি করা শুরু করেছিলেন।
তাদের খেলনা ড্রোনের তোলা ছবি, অন্যান্য তথ্য তাঁরা জানাতেন ইউক্রেনীয় সেনা বাহিনীকে। স্থানীয় সংবাদমাধ্যমগুলির প্রতিবেদন অনুযায়ী, এর ফলে রাশিয়ার বিরুদ্ধে ওই অঞ্চলে ইউক্রেন বাহিনী দারুণভাবে প্রত্যাঘাত করতে পেরেছিল। বেশ কিছু রুশ ট্যাঙ্ক উড়িয়ে দিয়েছিল ইউক্রেনের প্রতিরোধ বাহিনী। সংবাদমাধ্যম অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস-কে আন্দ্রি জানিয়েছে, রুশ হামলা শুরুর দিনগুলিই তার ‘জীবনের ভয়ঙ্করতম মুহূর্ত ছিল। তিনি বলেন, ‘আমরা সশস্ত্র বাহিনীকে ছবি এবং রুশ ট্যাঙ্কের অবস্থান বলে দিতাম। বাহিনী সেই তথ্য ব্যবহার করে রুশ বাহিনীর অবস্থান আরও নিখুঁতভাবে খুঁজে বার করত। ওয়াকি-টকির মাধ্যমে তা যুদ্ধক্ষেত্রে থাকা সৈন্যদের পাঠিয়ে দিত। সেই তথ্য অনুযায়ী কামান সাজানো হত।’
ফলে, আন্দ্রি এবং তাঁর বাবা এখন ইউক্রেনের জনগণের চোখে নায়কের সম্মান পাচ্ছে। তবে, শেষ পর্যন্ত রুশ বাহিনীর হাতে বন্দি হওয়া এড়াতে গ্রাম ছেড়ে পালাতে হয়েছে তাঁদের। এই নজরদারির ফলে ঠিক কতটা সমস্যায় পড়েছিল রুশ বাহিনী, তার কোনও সঠিক পরিসংখ্যান নেই। তবে, আন্দ্রি ও স্তানিস্লাভের দাবি, তাঁদের দেওয়া তথ্যকে কাজে লাগিয়ে অন্তত ২০ টি রুশ ট্যাঙ্ক ধ্বংস করেছে ইউক্রেনীয় বাহিনী।