জেরুসালেম: গাজা শহর ঘিরে ফেলেছে ইজরায়েল। তবে, সুড়ঙ্গের জাল ব্যবহার করে তাদের প্রতিহত করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে হামাস। আর হামাসের সুড়ঙ্গের এই জটিলতা দূর করতে ইজরায়েল এক নয়া অস্ত্র ব্যবহার করতে পারে বলে শোনা যাচ্ছে – ‘স্পঞ্জ বোমা’। ইজরায়েলের দাবি, এই নয়া উদ্ভাবনী বোমা, কোনও বিস্ফোরণ ছাড়াই গাজার তলায় হামাসের সুড়ঙ্গের জাল ছিন্ন করে দিতে পারে। ইজরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী ‘স্পঞ্জ বোমা’ নিয়ে মুখ খুলতে নারাজ। কিন্তু, সামরিক বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, স্পঞ্জ বোমা হামাসের সুড়ঙ্গগুলির প্রবেশপথই বন্ধ করে দিতে পারে। ফলে, হামাসের প্রতিরোধ গড়ার আর কোনও পথ থাকবে না। কিন্তু, কী এই স্পঞ্জ বোমা? কীভাবেই বা কাজ করে এই অত্যাধুনিক অস্ত্র?
স্পঞ্জ বোমা কী
‘স্পঞ্জ বোমা’ বোমা বলা হলেও, আর পাঁচটি বোমার মতো এতে কোনও বিস্ফোরক থাকে না। এটি মূলত একটি রাসায়নিক অস্ত্র। আক্ষরিক অর্থে বিস্ফোরণ না ঘটলেও, এই বোমা প্রয়োগ করলে আকস্মিকভাবে ফোমের বিস্ফোরণ ঘটতে থাকে। অর্থৎ, হঠাৎ করে বিপুল পরিমাণ ফেনা তৈরি হয়। এই ফেনা দ্রুত প্রসারিত হয় এবং কিছুক্ষণের মধ্যে জমাট বেঁধে শক্ত হয়ে যায়। কাজেই গাজার তলার সুড়ঙ্গের মতো সংকীর্ণ জায়গায় এই বোমা নিক্ষেপ করলে, জমাট ফেনায় বন্ধ হয়ে যেতে পারে সুড়ঙ্গগুলির মুখ।
স্পঞ্জ বোমা কীভাবে কাজ করে?
এই অত্যাধুনিক বোমাগুলি প্লাস্টিকের পাত্রে রাখা থাকে। বোমাটিতে মূলত দুটি পৃথক তরল যৌগ থাকে। ওই দুই তরল যৌগের মাঝে থাকে একটি ধাতব বাধা। ওই বাধার জন্য়ই রাসায়নিক দুটি একে অপরের সংস্পর্শে আসতে পারে না। কিন্তু, সেই বাধা সরে গেলে যৌগগুলি মিশ্রণ ঘটে, আর সেটাই আকস্মিকভাবে বিপুল পরিমাণ ফোম বা ফেনা তৈরি করে। সাধারণত, যেমন পিন খুলে গ্রেনেড নিক্ষেপ করা হয়, সেভাবেই ধাতব বাধাটি সরিয়ে স্পঞ্জ বোমাগুলি সুড়ঙ্গে বা অন্য কোনও সংকীর্ণ জায়গায় নিক্ষেপ করা হয়।
স্পঞ্জ বোমার প্রশিক্ষণ
স্পঞ্জ বোমা নিয়ে এই মুহূর্তে মুখে কুলুপ এঁটেছে ইজরায়েলি বাহিনী। সূত্রের খবর ২০২১ সালেই ইজরায়েলি সেনাদের হাতে এই বোমা তুলে দিয়েছিল ইজরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী। বর্তমানে, গাজা ভূখণ্ডে স্থলপথে হামলা চালাচ্ছে আইডিএফ। এই হামলা চালানোর আগে, গাজা সীমান্তের কাছে জেলিম সেনা ঘাঁটিতে একটি ছদ্ম সুড়ঙ্গ তৈরি করে সেখানে স্পঞ্জ বোমা প্রয়োগের কঠোর প্রশিক্ষণ নিয়েছে। আইডিএফ-এর ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের আওতায় সেনাবাহিনী গ্রাউন্ড এবং এরিয়াল সেন্সর, গ্রাউন্ড-পেনিট্রেটিং রাডার দিয়ে টানেল নেটওয়ার্ক শনাক্ত করা এবং বিশেষ ড্রিলিং সিস্টেম-সহ সেই সুড়ঙ্গে এগোনোর অনুশীলন করেছে। এছাড়া, ইজরায়েলি সেনারা যাতে ভূগর্ভস্থ অন্ধকারেও দেখতে পায়, তার জন্য তাপীয় প্রযুক্তি ব্যবহার করা নাইট ভিশন যন্ত্র তুলে দেওয়া হয়েছে তাদের হাতে। এছাড়া, এমন এক অভিনব রেডিয়ো ব্যবস্থা ব্যবহার করছে ইজরায়েল, যা মাটির নীচেও কাজ করতে পারে।
ঝুঁকি, জটিলতা এবং আরও অনেক কিছু
তবে, স্পঞ্জ বোমা ব্যবহার করার ক্ষেত্রে কিছু ঝুঁকিও রয়েছে। স্পঞ্জ বোমাগুলি উদ্বায়ী তরল ইমালসন দিয়ে তৈরি। এই ইমালসন এর আগে অনেক দুর্ঘটনার কারণ হয়েছে। ইজরায়েলি সেনার অনেকে এই তরলের প্রভাবে অন্ধ হয়ে গিয়েছেন বলে শোনা যায়। এই বিপদের ঝুঁকি থাকায়, ইজরায়েল এই বোমা ফেলার জন্য জন্য রোবট বা ড্রোন ব্যবহার করতে পারে ইজরায়েল।