কলম্বো: বিক্ষোভের আঁচে পুড়ছে দেশ। আর্থিক সঙ্কটে দেশ ডুবে যেতেই সরকারের বিরুদ্ধে পথে নেমেছে সাধারণ মানুষ। দফায় দফায় দেশের নানা প্রান্তে চলছে প্রতিবাদ-বিক্ষোভ। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে ইতিমধ্যেই দু’বার জরুরি অবস্থার ঘোষণা করেছে শ্রীলঙ্কার (Sri Lanka) সরকার। চলতি সপ্তাহে প্রধানমন্ত্রীর ইস্তফার পরই জল্পনা শুরু হয়েছে, এবার হয়তো সেনার শাসন শুরু হতে পারে শ্রীলঙ্কায়। তবে সে দেশের সরকার এই দাবি মানতে নারাজ। বুধবারই প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপক্ষ (Gotabaya Rajapaksa) জানান যে আগামী সপ্তাহের মধ্যেই দেশে নতুন প্রধানমন্ত্রী নির্বাচন করা হবে। তৈরি করা হবে নতুন মন্ত্রিসভাও। অন্যদিকে, প্রতিরক্ষা বাহিনীর তরফেও জানানো হয়েছে, রাজনৈতিক পরিস্থিতি যতই টালমাটাল হোক না কেন, দেশে সেনা শাসন (Military Rule) জারি করা হবে না।
প্রায় দুই মাসের বেশি সময় ধরেই চরম আর্থিক সঙ্কটের মুখে পড়েছে শ্রীলঙ্কা। বিদেশি ঋণের বোঝা ও করোনাকালে পর্যটন ব্যবসা সম্পূর্ণরূপে থমকে দাঁড়ানোয় ভেঙে পড়েছে শ্রীলঙ্কার অর্থনীতি। আর আর্থিক সঙ্কট দেখা দিতেই সমস্যায় পড়েছেন সাধারণ মানুষ। সরকারের বিরুদ্ধেই তারা প্রতিবাদ শুরু করেছেন। চলতি সপ্তাহের শুরু থেকে চরমে ওঠে সেই বিক্ষোভ। চাপের মুখে পড়ে বাধ্য হয়েই ইস্তফা দেন প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপক্ষ। কিন্তু এতেও বিক্ষোভের আঁচ নেভেনি। প্রধানমন্ত্রী-প্রেসিডেন্টের পৈত্রিক ভিটে থেকে শুরু করে দেশের নেতা-মন্ত্রীদেরও বাড়িঘর পুড়িয়ে দেওয়া হয়। বিক্ষোভকারী জনতার সঙ্গে নিরাপত্তা বাহিনীর সংঘর্ষে কমপক্ষে ৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছেন কমপক্ষে ২৫০ জন। এই ঘটনার পর থেকেই গত দু’দিন ধরে শ্রীলঙ্কার রাস্তায় হাজার হাজার বাহিনী মোতায়েন করা রয়েছে। দেশে অঘোষিতভাবেই জারি রয়েছে কার্ফু। রাস্তায় রাস্তায় চলছে পেট্রোলিং। যদি কাউকে সরকারি সম্পত্তি নষ্ট করতে দেখা যায়, তাকে গুলি করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে কলম্বোর সেনাবাহিনীকে পথেঘাটে ঘুরতে দেখেই জল্পনা শুরু হয়েছে যে এবার হয়তো সেনাশাসন শুরু হবে। সোশ্যাল মিডিয়াতেও এই নিয়ে একাধিক পোস্ট শেয়ার হয়েছে। যদিও প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের সচিব কমল গুণরত্ন বলেন, “যখন দেশে পরিস্থিতি ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠে, তখন সেনাবাহিনীর হাতেই ক্ষমতা তুলে দিতে হয়। কখনওই এটা ভাববেন না যে আমরা ক্ষমতা কেড়ে নিতে চাইছি”। শ্রীলঙ্কার প্রতিরক্ষা প্রধানও জানিয়েছেন, দেশজুড়ে যে ভয়ঙ্কর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে, দফায় দফায় সংঘর্ষে সাধারণ মানুষের প্রাণ যাচ্ছে, তা রুখতেই সেনা মোতায়েন করা হয়েছে।
এদিকে, বিরোধী নেতা সাজিথ প্রেমাদাসার দাবি, দেশের অস্থির অবস্থার অজুহাতে সেনা শাসন জারি করতে চাইছে রাজাপক্ষ পরিবার।