Sri Lanka Crisis: পাঁচদিন ধরে তেলের লাইনে দাঁড়িয়ে ছিল একটি ট্রাক, দরজা খুলতেই দেখা গেল মর্মান্তিক দৃশ্য
Sri Lanka Crisis: পাঁচ দিন ধরে জ্বালানি সংগ্রহের জন্য লাইনে অপেক্ষা করতে করতে বৃহস্পতিবার (২৩ জুন) মৃত্যু হল শ্রীলঙ্কার এক ৬৩ বছর বয়সী ট্রাক চালকের। এই নিয়ে জ্বালানির লাইনে মৃত্যু হল ১০ জনের। তবে, সেই দেশের প্রধানমন্ত্রী আরও খারাপ পরিস্থিতি নিয়ে সতর্ক করলেন।
কলম্বো: পাঁচ দিন ধরে ট্রাক নিয়ে লাইনে দাঁড়িয়ে ছিলেন তিনি। যদি একটু ডিজেল পাওয়া যায়। কিন্তু, জ্বালানি সংগ্রহের জন্য এই দীর্ঘ অপেক্ষা সইতে পারেনি তাঁর শরীর। বৃহস্পতিবার (২৩ জুন) মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েছেন ওই ৬৩ বছর বয়সী ট্রাক চালক। শ্রীলঙ্কায় পশ্চিম প্রদেশের আঙ্গুরুয়াটোটার ঘটনা। পুলিশ জানিয়েছে, এদিন সকালে ওই ট্রাকচালককে তাঁর গাড়ির ভিতরে মৃত অবস্থায় পাওয়া গিয়েছে। বর্তমানে গত ৭০ বছরের মধ্যে সবথেকে খারাপ অর্থনৈতিক সংকটের মুখোমুখি দ্বীপরাষ্ট্রটি। একদিন আগেই শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমাসিংঘে বলেছিলেন, কয়েক মাস ধরে খাদ্য, জ্বালানি ও বিদ্যুতের ঘাটতিতে দেশের ঋণগ্রস্ত অর্থনীতি ধ্বসে গিয়েছে। আমদানি করা তেল কেনার মতো ক্ষমতা নেই তাঁদের।
জানা গিয়েছে, এদিনের ঘটনা নিয়ে জ্বালানি সংগ্রহের লাইনে অপেক্ষা করতে করতে সেই দেশে মোট ১০ জনের মৃত্যু হল। নিহতদের সকলেই পুরুষ এবং তাঁদের বয়স ৪৩ থেকে ৮৪ বছরের মধ্যে বলে জানা গিয়েছে। শ্রীলঙ্কার সংবাদমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, অধিকাংশেরই মৃত্যু হয়েছে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে। এক সপ্তাহ আগে, রাজধানী কলম্বোর পানাদুরার একটি পেট্রল পাম্পে ঘন্টার পর ঘন্টা অপেক্ষা করতে গিয়ে হৃদযন্ত্র বন্ধ হয়ে মৃত্যু হয়েছিল এক ৫৩ বছর বয়সী অটোওয়ালার। জ্বালানি আমদানির জন্য ব্যাঙ্ক অফ সিলন লেটার অব ক্রেডিট না দিতে চাওয়ায় খুলতে জ্বালানি ঘাটতির পরিস্থিতি বর্তমানে আরও খারাপ হয়েছে। ন্যূনতম তিন মাসের জন্য পর্যাপ্ত জ্বালানি তেলের মজুদ করার মতো অর্থও জোগাড় করতে পারছে না সরকার। আর তাতেই পেট্রল পাম্পের লাইন আরও দীর্ঘ হচ্ছে।
এই পরিস্থিতির মোকাবেলায় ১৭ জুন থেকে সরকারি কর্মচারীদের সপ্তাহে শুক্রবারও ছুটি দেওয়া হয়েছে। ওই দিনটিতে, দেশের খাদ্য সংকট প্রশমিত করতে সরকারি কর্মচারীদের কৃষিকাজে যোগ দিতে বলা হয়েছে। আগামী তিন মাস এই ব্যবস্থা বলবৎ থাকবে। পরিবহণের সমস্যার কারণে স্কুলগুলিতেও বিশেষ ছুটি দেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে বেসরকারী মালিকানাধীন বাস অপারেটররা জানিয়েছে, জ্বালানী সংকটের কারণে তারা মাত্র ২০ শতাংশ পরিষেবা চালু রাখতে পেরেছে। এই অবস্থায় সাধারণ মানুষের ক্ষোভ বাড়ছে। গত শনিবারই মুল্লাইতিভুর বিশ্বমাড়ু এলাকার এক পেট্রল পাম্পের লাইনে দাঁড়ানো জনতা এবং লঙ্কান সেনার মধ্যে সংঘর্ষ বেধেছিল। একদিন পরে দুই দূতের কাছ থেকে আবেদনটি আসে। তার পরদিন, শ্রীলঙ্কায় নিযুক্ত মার্কিন এবং রাষ্ট্রসংঘের দূতরা প্রয়োজনীয় পণ্যের জন্য দীর্ঘ লাইনে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকা নাগরিকদের উপর শ্রীলঙ্কার নিরাপত্তা বাহিনীর বল প্রয়োগ করা উচিত নয় বলে মন্তব্য করেছিল। তাদের জনগণের হতাশা অনুভব করার প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দেন তাঁরা।
তবে, পরিস্থিতি শুধু জ্বালানি ঘাটতি বা খাদ্য ঘাটতির মধ্যেই আটকে নেই। বুধবারই সংসদে প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমাসিংঘে জানিয়েছেন, দেশের অর্থনীতি পুরোপুরি ভেঙে পড়েছে। তিনি বলেন, ‘আমরা এখন নিছক জ্বালানি, গ্যাস, বিদ্যুৎ এবং খাদ্যের ঘাটতির সম্মুখীন নই, পরিস্থিতি আরও গুরুতর। আমাদের অর্থনীতি পুরোপুরি ভেঙে পড়েছে। এটাই আজ আমাদের সামনে সবচেয়ে গুরুতর সমস্যা। বর্তমানে, সিলন পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশনের মাথায় ৭০ কোটি মার্কিন ডলারের ঋণের বোঝা রয়েছে। ফলে বিশ্বের কোনও দেশ বা তেল সংস্থা আমাদের জ্বালানি দিতে রাজি হচ্ছে না। এমনকি, নগদ অর্থের বিনিময়েও তারা জ্বালানি সরবরাহ করতে অনিচ্ছুক।’