কলম্বো: ঘরে খাবার মতো একটা শুকনো রুটি নেই, ফুরিয়ে আসছে জল। খাতায় কলমে বিদ্যুৎ সংযোগ থাকলেও দিনের ১৩-১৪ ঘণ্টাই অন্ধকারে ডুবে থাকতে হচ্ছে বাসিন্দাদের। বাজারে লেগেছে আগুন, অত্যাবশ্যকীয় পণ্য কেনার ক্ষমতা নেই তথাকথিত বিত্তশালীদেরও। সঙ্কটময় পরিস্থিতির মধ্য দিয়েই বর্তমানে দিন কাটাচ্ছেন শ্রীলঙ্কার (Sri Lanka) মানুষ। স্বাভাবিকভাবেই জমেছে সরকারের বিরুদ্ধে ক্ষোভও। সেই ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ হতেই, তা কড়া হাতে দমন করতে উদ্যত হল প্রশাসন। দেশে ফের একবার সরকার বিরোধী বিক্ষোভ শুরু হতেই জরুরি অবস্থার ঘোষণা করলেন শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপক্ষ (Gotabaya Rajapaksa)। শুক্রবার মধ্যরাত থেকে সেনাবাহিনীর হাতে দেশের শাসনভার দেওয়া হয়েছে। বিগত পাঁচ সপ্তাহে এই নিয়ে দ্বিতীয়বার জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা হল শ্রীলঙ্কায়। এর আগে এপ্রিলের শুরুতেও দেশে শান্তি শৃঙ্খলা বজায় রাখার স্বার্থে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা হয়েছিল।
করোনার ধাক্কা ও বৈদেশিক ঋণের বোঝায় শ্রীলঙ্কায় যে চরম অর্থনৈতিক সঙ্কট দেখা দিয়েছে, তার দ্রুত সমাধান হওয়ার কোনও সম্ভাবনা নেই। চলতি সপ্তাহেই দেশের অর্থমন্ত্রী জানিয়ে দিয়েছিলেন, কমপক্ষে আরও দুই বছর এই আর্থিক সঙ্কট থাকবে শ্রীলঙ্কায়। শুক্রবার দেশের ট্রেড ইউনিয়ন সরকারের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ প্রদর্শনে পথে নামে। তাদের সঙ্গে বিক্ষোভে যোগ দিয়েছিল পড়ুয়ারাও। পরিকল্পনা ছিল সংসদের সামনে বিক্ষোভ দেখানোর, কিন্তু মাঝপথেই আটকে দেয় পুলিশ। বিক্ষোভকারীদের রুখতে পুলিশ লাঠিচার্জ থেকে শুরু করে কাঁদানে গ্যাস, জল কামানের ব্যবহার করে। এর আগে বৃহস্পতিবারও বিক্ষোভকারী জনতার উপরে কাঁদানে গ্যাস ব্যবহার করা হয়েছিল বলে অভিযোগ।
সাধারণ মানুষ রাজাপক্ষ পরিবারের গদি ছাড়ার দাবি জানালেও প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রী- দুই ভাই-ই পদ ছাড়তে নারাজ। উল্টে বিক্ষোভকারীদের দমাতেই ফের একবার জরুরি অবস্থার ঘোষণা করলেন প্রেসিডেন্ট রাজাপক্ষ। এরফলে সেনাবাহিনীর হাতে দেশের শাসনক্ষমতা থাকবে। বিক্ষোভ দেখানো তো দূরের কথা, বিনা অনুমতিতে বাড়ি থেকে বের হওয়াও যাবে না।
বিগত দেড় মাসেরও বেশি সময় ধরে অর্থনৈতিক সঙ্কটের জেরে ধুঁকছে শ্রীলঙ্কা। স্বাধীনতার পর এটিই সবথেকে বড় আর্থিক সঙ্কট। ফুরিয়ে গিয়েছে দেশের জ্বালানি ও শস্য ভাণ্ডার। বিদেশি মুদ্রাও শেষের পথে। কোষাগারে যে সামান্য অর্থ পড়ে রয়েছে, তা দিয়ে চিনের বিপুল ঋণ মেটানো কোনওভাবেই সম্ভব নয়। ইতিমধ্য়েই নিজেদের ‘ঋণখেলাপী’ হিসাবে ঘোষণা করেছে সরকার।
দেশের আর্থিক দুর্দশায় সবথেকে বেশি ভুক্তভোগী সাধারণ মানুষই। মাসের পর মাস ধরে বিদ্যুৎ নেই দেশের একাধিক প্রান্তে। চরম সঙ্কট দেখা দিয়েছে খাদ্য, ওষুধের মতো অত্যাবশ্যকীয় পণ্যের। যেটুকু সামগ্রী মজুত রয়েছে, তার দামও আকাশছোঁয়া। জ্বালানির অভাবে ইতিমধ্যেই দেশে বন্ধ হয়েছে গণপরিবহনও।