কাবুল: যত সময় যাচ্ছে ততই পুরোনো ফর্মে ফিরছে তালিবান শাসন। উচ্চ শিক্ষার পর মহিলাদের চিকিৎসা পাওয়ার অধিকারও কার্যত কেড়ে নিল তারা। আফগানিস্তানের বাল্খ প্রদেশের ‘ডাইরেক্টরেট অব পাবলিক অ্য়াফেয়ার্স অ্যান্ড হিয়ারিং অব তালিবান অ্যাফেয়ার্স’ ঘোষণা করেছে পুরষ চিকিৎসকরা আর মহিলাদের চিকিৎসা করতে পারবেন না। প্রশ্ন উঠছে, তাহলে আফগান মহিলারা চিকিৎসা করাবেন কোথায়? সেই দেশে তো আর মহিলা চিকিৎসক উপচে পড়ছে না, আর মহিলাদের কাজ করতেও বাধা দেয় তালিবানরা। সম্প্রতি মহিলাদের উচ্চশিক্ষাও নিষিদ্ধ করা হয়েছে। কাজেই অদূর ভবিষ্যতে মহিলা চিকিৎসকের সংখ্যা বাড়বে, তারও সম্ভাবনা নেই। তাহলে কি অসুস্থ হলে পড়ে পড়ে মরতে হবে আফগান মহিলাদের?
আফগান সংবাদপত্র হাশত-ই-সুবাহ জানিয়েছে, তালিবান শাসকরা আরও ঘোষণা করেছে যে মহিলা এবং পুরুষ স্বাস্থ্য পরিষেবা কর্মীদের আলাদা আলাদা ঘর থাকবে। মহিলা রোগীরা তাঁদের সমস্যা নিয়ে শুধুমাত্র মহিলাদের স্বাস্থ্য পরিষেবা কর্মীদের ঘরেই যেতে পারবেন। মহিলা রোগীদের সঙ্গে কোনও পুরুষ সেই ঘরে প্রবেশ করতে পারবেন না। মহিলা স্বাস্থ্য পরিষেবা কর্মীদের জন্য নির্দিষ্ট ঘরে পুরুষদের প্রবেশই নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
এই ফতোয়া জারির পরই আফগান মহিলাদের চিকিৎসা পরিষেবা পাওয়া নিয়ে প্রশ্ন উঠে গিয়েছে। বস্তুত, ২০২১ সালের অগস্টে তালিবানরা আফগানিস্তানের ক্ষমতা পুনর্দখল করার আগে থেকেই আফগানিস্তানে চিকিৎসক এবং চিকিৎসা কর্মীর ঘাটতি ছিল। প্রতি ১০ হাজার মানুষ পিছু চিকিৎসকর্মী ছিলেন মাত্র ৪.৬ জন। তালিবানরা ক্ষমতা দখলের পর প্রাথমিকভাবে সব ক্ষেত্রেই মহিলাদের কাজ করতে বাধা দিয়েছিল। তবে, মাত্র সপ্তাহ দুয়েক পরই স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে কর্মরত মহিলাদের কাজে ফেরার নির্দেশ দিয়েছিল তারা। তালিবানরা তাদের কাজের অনুমতি দিলেও, ততদিনে তালিবানি কোপের আশঙ্কায় বহু মহিলা চিকিৎসক এবং মহিলা স্বাস্থ্য পরিষেবা কর্মী আফগানিস্তান থেকে পালিয়েছেন। কাজেই বর্তমানে মহিলা চিকিৎসক বা চিকিৎসাকর্মীর সংখ্যা যে অপ্রতুল, তা বলাই বাহুল্য।
এই অবস্থায় মহিলাদের উচ্চশিক্ষার অধিকার কেড়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত এই সমস্যাকে আরও বাড়িয়ে তুলেছে। চিকিৎসাকর্মীদের অভাবে, হাইস্কুল পাস করা বহু মহিলাকে চিকিৎসা পরিষেবা দেওয়ার প্রশিক্ষণ দেওয়া হত। দীর্ঘদিন ধরে আফগানিস্তানে মানবিক পরিষেবা দেওয়ার কাজ করেন হিউম্যান রাইটস ওয়াচের মহিলা অধিকার শাখার অ্যাসোসিয়েট ডিরেক্টর হিথার বার বলেছেন, “প্রতি বছর নার্স, মিডওয়াইফ, ডাক্তারদের একটি ব্যাচ গ্রাজুয়েট হবে, এমনটাই স্বাভাবিক। তাদের মধ্যে অনেক মহিলারাও থাকেন। কিন্তু, গত চলতি বছরে কোনও মহিলা হাই স্কুলই পাস করেনি। কাজেই কেউ প্রশিক্ষণ নিতে ভর্তিই হয়নি।”