কাবুল: মহিলাদের অধিকার নাকি অক্ষুণ্ণ রাখা হবে। কাজে ফিরতেও তাদের কোনও অসুবিধা হবে না। পড়াশোনাতেও থাকবে না কোনো বাধা। নতুন করে আফগানিস্তান (Afghanistan) দখল করার পর এমনই অনেকে কথা শোনা গিয়েছিল তালিবানের (Taliban) গলায়। কিন্তু দিন যত এগোচ্ছে, ততই প্রকাশ পাচ্ছে স্বরূপ। কিছুদিন আগেই কাবুল বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি ছবিতে দেখা গিয়েছিল, কী ভাবে মাথা থেকে পা পর্যন্ত কালো কাপড়ে শরীর ঢাকতে বাধ্য করা হয়েছে মেয়েদের। আর এবার বন্ধ করে দেওয়া হল আফগানিস্তানের মহিলা বিষয়ক মন্ত্রক। বদলে দেওয়া হল নাম।
সম্প্রতি একটি ছবি প্রকাশ্যে এসেছে, সেখানে দেখা গিয়েছে মহিলাদের জন্য সেই মন্ত্রকের নাম বদলে দেওয়া হয়েছে। এখন সেটা ‘ভাইস অ্যান্ড ভার্চু’ বা পুন্য ও ন্যয় বিষয়ক মন্ত্রক। ওই মন্ত্রকের ভবনের বাইরে সাইন বোর্ডে যা লেখা তার বাংলা অর্থ হয়, ‘ন্যয়ের সুরক্ষা ও অন্যায়ের প্রতিরোধের মন্ত্রক।’ অর্থাৎ মহিলা বিষয়ক মন্ত্রকের আর কোনও অস্তিত্বই থাকল না।
A major setback for 17 million women of Afghanistan : Ministry of Women’s Affairs with 1000 employees erased, replaced by Taliban Ministry of Vice & Virtue (moral policing) pic.twitter.com/n4ay52LTam
— From The Afghan Women (@HearAfghanWomen) September 17, 2021
ইতিমধ্যেই তালিবানি ফতোয়ায় বন্ধ হয়েছে মহিলাদের কাজ। তাদের পড়াশোনার অনুমতি দেওয়া হলেও কাজের অনুমতি দেওয়া হচ্ছে না। কর্মরত মহিলারা যত বার কাজে ফেরার চেষ্টা করেছেন, ততবারই তাদের ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে। সফল হননি তাঁরা। ওই মন্ত্রকের কর্মরত এল মহিলা জানান, তিনিই পরিবারের রোজগেরে সদস্য। তাঁর কথায়, ‘মহিলাদের মন্ত্রকই যখন রইল না, তখন আফগান মহিলারা কী করবে?’ গত ৭ সেপ্টেম্বর যখন তালিবানের মন্ত্রিসভা ঘোষিত হয়, তখনই বাদ পড়ে মহলা বিষয়ক মন্ত্রকের মন্ত্রীর নাম।
আফগানিস্তানের ক্ষমতা দখলের পরই প্রশ্ন উঠেছিল নারী সুরক্ষা ও স্বাধীনতা নিয়ে। কাবুল সহ একাধিক শহরের মহিলাদের তালিবানের বিরুদ্ধে মিছিল করতে দেখা যায়। শিক্ষা ও চাকরির অধিকারের দাবি জানিয়ে তাদের আন্দোলন করতে দেখা যায়। সেই আন্দোলন রুখতে তালিবানদের শূন্যে গুলি চালাতে ও চাবুক দিয়ে আঘাত করতেও দেখা যায়। কিছুদিন আগে মহিলাদের শিক্ষা নিয়েও নয়া নির্দেশিকা দেয় তালিবান। ফতোয়ায় বলা হয়েছিল, মহিলারা বিশ্ববিদ্যালয়ে যেতে পারলেও তারা ছাত্রদের সঙ্গে একই কক্ষে বসতে পারবেন না। স্বামী বা রক্তের সম্পর্ক রয়েছে, এমন কোনও পুরুষ সঙ্গীর তত্বাবধানেই তারা বিশ্ববিদ্যালয়ে আসবেন। শিক্ষকদের ক্ষেত্রেও বলা হয় একমাত্র মহিলা শিক্ষিকারাই ছাত্রীদের পড়াতে পারবেন। একান্তই যদি শিক্ষিকা না পাওয়া যায়, তবে ভাল চরিত্রের কোনও বয়স্ক শিক্ষককে নিয়োগ করা হবে।
৯৬-র দশকে তালিবানরা আফগানিস্তানের দখল নেওয়ার পর জারি করা হয়েছিল শরিয়া আইন। শতাব্দী প্রাচীন ওই আইনে বলা হয়েছে, মহিলাদের শিক্ষা ও কাজ করার কোনও অধিকার নেই। তাদের বাড়িতেই থাকা উচিত। কোনও প্রয়োজনে বাড়ি থেকে বের হতে হলে স্বামী বা রক্তের সম্পর্ক রয়েছে, এমন কোনও পুরুষ সঙ্গীকে নিয়ে বের হতে হবে। সর্বদা হিজাব বা বোরখা পরা অত্যাবশক। পরপুরুষের কানে যাতে বাড়ির মহিলাদের কন্ঠস্বর না পৌঁছয়, তার জন্য সর্বদা নীচু স্বরে কথা বলা উচিত। হিল জুতো পরাও নিষিদ্ধ ছিল মহিলাদের। ২০ বছর পর আবারও সেই শৃঙ্খলেই বন্দি হচ্ছেন মহিলারা।