তেহরান: জ্বলছে ইরান। হিজাব বিরোধী আন্দোলন ধীরে ধীরে গোটা দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। প্রথমে ইরানের উত্তর-পশ্চিমে কুর্দিশ অঞ্চল থেকে শুরু হলেও এখন তার রেশ পড়েছে এখন গোটা দেশেই। নারী-পুরুষ নির্বিশেষে পা মিলিয়েছে এই প্রতিবাদ মিছিলে। মেয়ে-মহিলারা আকাশে উড়িয়েছেন উড়িয়েছেন হিজাব। আগুনে পুড়েছে সেই হিজাব। প্রকাশ্য রাস্তায় নিজের চুল কেটেছেন তাঁরা। উল্লাস করে হাততালি দিয়ে তাঁদের উৎসাহ দিতে এগিয়ে এসেছেন ইরানের পুরুষরা। এই হিজাব বিরোধী আন্দোলনে সামিল হলেন ইরানের জনপ্রিয় দুই অভিনেত্রী- হেনগামেহ গাজিয়ানি (Hengameh Ghaziani) ও কাটায়ুন রিয়াহি (Katayoun Riahi)। সোশ্যাল মিডিয়ায় সে সংক্রান্ত প্ররোচনামূলক পোস্ট করায় তাঁদের আটকও করেছে ইরানের পুলিশ।
হেনগামেহ তাঁর ইনস্টাগ্রাম প্রোফাইলে একটি ছবি আপলোড করেছিলেন। সেই ভিডিয়োতে ৫২ বছর বয়সী এই অভিনেত্রীকে দেখা গিয়েছে একটি ব্যস্ত রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকতে। তাঁর পরনে ছিল না কোনও হিজাব। এই হিজাব ইরান পরা বাধ্যতামূলক। কেউ তা অমান্য করলে তাঁর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া হয়। আর এর প্রতিবাদেই ইরানে পথে নেমেছে লক্ষ লক্ষ মানুষ। সেই ভিডিয়ো পোস্ট করে তিনি জানিয়েছেন, এটাই হয়ত তাঁর শেষ পোস্ট। তিনি লিখেছেন, ‘এই সময় থেকে আমার সঙ্গে যাই হোক না কেন আপনারা জেনে রাখুন, আমার শেষ নিঃশ্বাস অবধি আমি ইরানের মানুষের পাশে আছি।’
ইরানের স্থানীয় সংবাদ মাধ্যম অনুযায়ী, পরে এই একই কারণে ৬০ বছর বয়সী এক জনপ্রিয় অভিনেত্রী কাটায়ুনকে গ্রেফতার করেছে ইরানের পুলিশ। গত সেপ্টেম্বরে তিনি হিজাব না পরে লন্ডন ভিত্তিক একটি টেলিভিশন চ্যানেলে সাক্ষাৎকার দিয়েছিলেন। ২২ বছরের মাহসা আমিনির পুলিশি হেফাজতে মৃত্যুর জন্য শোক প্রকাশ করেছিলেন তিনি। আর তারপরই পড়তে হল পুলিশের রোষানলে। প্রসঙ্গত, হিজাব না পরার জন্য গত সেপ্টেম্বরেই ইরানের নীতি পুলিশের হেফাজতে মৃত্যু হয়েছিল মাহসা আমিনির। তারপর থেকে বিক্ষোভে ফুঁসছে দেশ। সম্প্রতি ইরানের প্রাক্তন সুপ্রিম নেতা আয়াতুল্লাহ খামেনেইয়ের পৈত্রিক বাড়িতে আগুনও ধরিয়ে দিয়েছিলেন প্রতিবাদীরা। এদিকে পুলিশের বিক্ষোভ দমনে এখনও পর্যন্ত ৩০০ জনেরও বেশি জনের মৃত্যু হয়েছে। ইরান হিউম্যান রাইটস (IHR)-র মতে এখনও পর্যন্ত গ্রেফতার হয়েছেন ১৫,০০০ জন। তবে এখনও চলছে হিজাব বিরোধী প্রতিবাদ। ঝাঁঝ বাড়ছে পুলিশি দমনেরও।