লন্ডন: বৃহস্পতিবারই (৭ জুলাই), ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দিলেন বরিস জনসন। আগেই শোনা গিয়েছিল এদিনই তিনি প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দিতে চলেছেন। বিবিসি থেকে শুরু করে একাধিক ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যমে দাবি করা হয়েছে, ইতিমধ্যেই একটি খসরা ইস্তফাপত্র পর্যন্ত তৈরি করা হয়ে গিয়েছে। এরপর জাতির উদ্দেশ্যে এক ভাষণ দিয়ে তিনি ইস্তফা দেওয়ার কথা ঘোষণা করলেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী। তিনি জানান, দলের সতীর্থদের দাবি মেনেই তিনি সরে যাচ্ছেন। নিজের মেয়াদ সম্পূর্ণ না করার জন্য তিনি দুঃখিত বলে জানান। তবে, রাজনীতিতে কেউই অপরিহার্য নয় বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি। আরও বলেছেন, নতুন প্রধানমন্ত্রীর প্রতি তাঁর পূর্ণ সমর্থন থাকবে।
এদিন, আনুষ্ঠানিকভাবে ভাবে পদত্যাগের কথা ঘোষণা করলেও, ৫৮ বছরের ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী আপাতত কাজ চালিয়ে যাবেন। আগামী অক্টোবর মাসে কনজারভেটিভ পার্টি বা টোরি পার্টির সম্মেলন হবে। সেখানেই দলের নতুন নেতা বেছে নেওয়া হবে। তারপরই প্রধানমন্ত্রীর পদ ছাড়বেন তিনি। বরিসের উত্তরসুরি হিসাবে নাদিম জাহাউই ছাড়াও দৌড়ে রয়েছেন ঋষি সুনাক এবং সাজিদ জাভিদ।
বস্তুত, যত দিন যাচ্ছিল, পদ ছাড়ার জন্য চাপ বাড়ছিল বরিসের উপর। একের পর এক মন্ত্রী তাঁর ক্যাবিনেট থেকে পদত্যাগ করছিলেন। বুধবার রাত পর্যন্ত অবশ্য পদ ছাড়তে নারাজ ছিলেন বরিস। তবে, বৃহস্পতিবার নবনিযুক্ত শিক্ষামন্ত্রী মিশেল ডোনেলান ইস্তফা দেন। নবনিযুক্ত অর্থমন্ত্রী নাদিম জাহাউই-ও প্রধানমন্ত্রীকে সরে দাঁড়ানোর জন্য। আহ্বান করেছিলেন। এরপরই, লড়াইয়ের ময়দান ছেড়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী।
গত মঙ্গলবার (৫ জুলাই), সামান্য কিছু সময়ের ব্যবধানে পদত্যাগ করেছিলেন ব্রিটিশ অর্থমন্ত্রী ঋষি সুনাক এবং স্বাস্থ্যমন্ত্রী সাজিদ জাভিদ। তারপর থেকে গত কয়েকদিনে যেন ইস্তফার স্রোত বইছিল বরিস জনসন ক্যাবিনেটে। ৪০ জন সাংসদ মন্ত্রিসভা এবং সরকারি বিভিন্ন পদ থেকে ইস্তফা দেন। তবে, চূড়ান্ত আঘাতটি এসেছে বৃহস্পতিবার। দুই দিন আগেই ঋষি সুনাকের পরিবর্তে ইরাকি বংশোদ্ভূত নাদিম জাহাউইকে নয়া অর্থমন্ত্রী বেছে নিয়েছিলেন বরিস। এদিন সেই জাহাউই এক লিখিত বিবৃতি টুইট করে বলেছেন, ‘প্রধানমন্ত্রী এটি (সরকার) টেকসই নয়। আপনার জন্য, কনজারভেটিভ পার্টির জন্য এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল সমগ্র দেশের জন্য অবস্থা আরও খারাপ হবে। আপনার সঠিক কাজ করা উচিত এবং এখনই সরে যাওয়া উচিত।’ প্রসঙ্গত, বরিসের চেয়ারে বসার দৌড়ে এই নাদিম জাহাউই-ই সবথেকে এগিয়ে আছেন বলে শোনা যাচ্ছে।
Prime Minister: this is not sustainable and it will only get worse: for you, for the Conservative Party and most importantly of all the country. You must do the right thing and go now. pic.twitter.com/F2iKT1PhvC
— Nadhim Zahawi (@nadhimzahawi) July 7, 2022
খোলা চিঠিতে জাহাউই লিখেছেন, ‘প্রধানমন্ত্রী, আপনি মনে মনে জানেন কোনটি সঠিক কাজ। মনের সেই ডাক মেনে নিয়ে এখনই সরে যান। আপনার এই পদে থেকে যাওয়ার আমি কোন উপায় দেখতে পাচ্ছি না। কিন্তু, আপনাকে অপসারণের কোনও আনুষ্ঠানিক প্রক্রিয়া নেই। তাই আমরা যারা মন্ত্রিসভায় রয়েছি তাদের আপনার উপর জোর করাটই একমাত্র উপায়।’ তিনি আরও লেখেন, ‘আমার এক নম্বর অগ্রাধিকার হল এই মহান দেশ। সর্বদা তাইই থাকবে। গতকাল আমি ১০ নম্বর ডাউনিং স্ট্রিটে আমার সহকর্মীদের সঙ্গে গিয়েছিলাম। প্রধানমন্ত্রীকে স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছি, তাঁর মর্যাদার সঙ্গে চলে যাওয়া উচিত।’
বরিস জনসনের প্রায় বছর দুয়েকের প্রধানমন্ত্রিত্ব, শুরু থেকেই বারংবার বিতর্কে জড়িয়েছে। শেষ আঘাতটি এসেছে, টোরি দলের ক্রিস পিঞ্চারের বিরুদ্ধে ওঠা যৌন অসদাচরণের বিষয়ে জেনেশুনেও কোনও ব্যবস্থা না নেওয়ার কারণে। তার থেকেও বড় কথা বিষয়টি নিয়ে বরিসের মিথা ভাষণ ধরা পড়ে গিয়েছে। প্রথমে বিষয়টি জানেন না বলে দাবি করছিলেন। পড়ে অবশ্য স্বীকার করেন তিনি সবটাই জানেন।