ওয়াশিংটন: ‘মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ’। রাষ্ট্রসঙ্ঘের মানবাধিকার কার্যালয়ের প্রতিবেদনে চিনের বিরুদ্ধে এমন গুরুতর অভিযোগ করা হল। বুধবার (৩১ অগস্ট), চিনের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় প্রদেশ শিনজিয়াং-এ উইঘুর এবং অন্যান্য সংখ্যালঘুদের আটক করার বিষয়ে এই রিপোর্টটি আরও আগেই প্রকাশিত হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু, মূলত চিনের বাধাতেই এই রিপোর্ট এতদিন প্রকাশ করা যায়নি। অবশেষে বুধবার দেরিতে হলেও সেই রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে। আর সেখানে স্পষ্ট বলা হয়েছে, সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে চিন সরকারের পদক্ষেপগুলিকে ‘মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ’ বলে গণ্য করা যেতে পারে।
৪৫ পৃষ্ঠার এই প্রতিবেদন অবিলম্বে বেজিং-এর কাছে সকল বন্দিকে নির্বিচারে মুক্তি দেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে। উইঘুর সম্প্রদায়ের অনেককেই খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না বলে দাবি করে তাদের পরিবার। ওই নিখোঁজ ব্যক্তিদের অবস্থান স্পষ্ট করতে বলা হয়েছে। সেই সঙ্গে চিনের অভ্যন্তরীণ সুরক্ষা সম্পর্কিত আইনগুলির পর্যালোচনা করে সমস্ত বৈষম্যমূলক আইন বাতিল করার আহ্বান জানানো হয়েছে। প্রসঙ্গত, বুধবারই মেয়াদ শেষ হয়েছে রাষ্ট্রসঙ্ঘের মানবাধিকার কমিশনের প্রধান মিশেল ব্যাচেলেটের মেয়াদ ফুরিয়েছে। তাঁর মেয়াদ শেষ হওয়ার মাত্র ১৩ মিনিট আগেই এই রিপোর্ট প্রকাশ করা হয়।
মিশেল ব্যাচেলেটের নেতৃত্বাধীন কমিটিই ৪ বছর আগে জাতি বৈষম্য দূর করার বিষয়ে এক রিপোর্টে জানিয়েছিল, শিনজিয়াং-এর ১০ লক্ষেরও বেশি বাসিন্দাদের বিভিন্ন বন্দি শিবিরে আটকে রেখেছে বেজিং। ওই রিপোর্ট প্রকাশের পর থেকেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, ফ্রান্স বেজিং-এর বিরুদ্ধে উইঘুর গণহত্যার অভিযোগ তুলতে শুরু করেছিল। ব্যাচেলেটের সাম্প্রতিক রিপোর্টে গণহত্যার অভিযোগ না তোলা হলেও, বলা হয়েছে, “শিনজিয়াং-এ চিন সরকার সন্ত্রাস দমন এবং চরমপন্থা-বিরোধী কৌশল প্রয়োগের নামে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছে। স্বেচ্ছাচারী এবং বৈষম্যমূলকভাবে উইঘুর এবং অন্যান্য প্রধানত মুসলিম সংখ্যালঘু গোষ্ঠীর সদস্যদের আটক আন্তর্জাতিক অপরাধের সামিল। বিশেষ করে মানবতা বিরোধী অপরাধ বলে গণ্য করা যেতে পারে।”
এই প্রতিবেদন, ‘চিনকে অপবাদ দেওয়ার লক্ষ্যে চিন বিরোধী শক্তির সাজানো তথ্য এবং মিথ্যার উপর ভিত্তি করে তৈরি’ বলে উড়িয়ে দিয়েছে বেজিং। এই প্রতিবেদন চিনের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ বলেও দাবি করেছে চিন। এক চিঠিতে, রাষ্ট্রসঙ্ঘের চিনের স্থায়ী মিশন বলেছে, তারা দৃঢ়ভাবে এই প্রতিবেদন প্রকাশের বিরোধিতা করেছে। চিঠিতে বলা হয়েছে, “সুখি জীবন যাপন করা প্রাথমিক মানবাধিকার। সন্ত্রাসবাদ ও চরমপন্থার বিরুদ্ধে লড়াই করার লক্ষ্যে চিন সরকারের পদক্ষেপের কারণে শিনজিয়াং-এর সমস্ত জাতিগোষ্ঠী সুখে জীবন যাপন করছে।” এই চিঠির সঙ্গে শিনজিয়াং সরকারের তথ্য দফতরের সংকলিত, ‘শিনজিয়াংয়ে সন্ত্রাসবাদ এবং চরমপন্থার বিরুদ্ধে লড়াই: সত্য এবং তথ্য’ নামে একটি ১২২-পৃষ্ঠার প্রতিবেদনও প্রকাশ করা হয়েছে।