Donald Trump: একেই বলে ব্যবসা! মাত্র ৪৩ কোটি টাকা দিলেই আমেরিকার নাগরিকত্ব
Donald Trump: ওভাল অফিসে বসে ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষণা করেছেন, এবার থেকে ৫ মিলিয়ন ডলার দিলেই মিলবে গোল্ড কার্ড। যার মাধ্যমে পাওয়া যাবে মার্কিন নাগরিকত্ব। সেটা কী রকম? আপনি যদি দীর্ঘ দিন ভিসা নিয়ে আমেরিকায় থাকেন তাহলে একটা নির্দিষ্ট সময় পর নিয়ম মেনে গ্রিন কার্ডের জন্য আবেদন করতে পারেন

মেক্সিকো বর্ডারে খোলা আকাশের নীচে শুয়ে আছেন কাতারে কাতারে মানুষ। চোখে মুখে উদ্বেগ। আমেরিকায় ওদের ঢোকার আশা বন্ধ হয়ে গিয়েছে। তবে টাকা থাকলে ওরা দিব্যি আমেরিকায় ঢুকে পড়তে পারতেন। না, বর্ডার গার্ডকে ঘুষ দিয়ে নয়। রীতিমতো মাথা উঁচিয়ে জামাই আদরে আমেরিকায় পা। টাকা অবশ্য কম নয়। ভারতীয় মুদ্রায় লাগবে প্রায় সাড়ে ৪৩ কোটি। ইমিগ্র্যান্টরা স্বপ্নেও এত টাকা বোধহয় কখনও দেখেননি। ঠিক শুনছি তো। টাকা দিয়ে আমেরিকায় ঢোকা যায় নাকি। এতদিন যেত না। এবার যাবে। শুধু ঢোকা নয়, মিলে যাবে ইউএস সিটিজেনশিপও। তবে আমাদের মতো সাধারণ মানুষের অবশ্য সে সৌভাগ্য হবে না। কারণ, আমেরিকান ড্রিম অ্যাচিভ করতে চাইলে খসাতে হবে সাড়ে ৪৩ কোটি টাকা।
ওভাল অফিসে বসে ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষণা করেছেন, এবার থেকে ৫ মিলিয়ন ডলার দিলেই মিলবে গোল্ড কার্ড। যার মাধ্যমে পাওয়া যাবে মার্কিন নাগরিকত্ব। সেটা কী রকম? আপনি যদি দীর্ঘ দিন ভিসা নিয়ে আমেরিকায় থাকেন তাহলে একটা নির্দিষ্ট সময় পর নিয়ম মেনে গ্রিন কার্ডের জন্য আবেদন করতে পারেন। গ্রিন কার্ড হল permanent resident card. সোজা কথায় ভোটাধিকার ছাড়া মার্কিন নাগরিকত্ব। গ্রিন কার্ড পেয়ে গেলে তারপর আপনি ষোলো আনা মার্কিন নাগরিকত্বের জন্য অ্যাপ্লাই করতে পারেন। ট্রাম্প জানিয়েছেন, তাঁর নতুন গোল্ড কার্ড, গ্রিন কার্ডের চেয়েও এগিয়ে থাকবে। মানে, গ্রিন কার্ড থেকে নাগরিকত্ব পাওয়ার চেয়ে গোল্ড কার্ড থেকে US সিটিজেনশিপ পাওয়া বেশি স্মুথ হবে। এতদিন আমেরিকায় EB-5 নামে একটা প্রোগ্রাম ছিল। এ প্রোগ্রামের আওতায় অভিবাসীরা আমেরিকায় বিনিয়োগ করলে, কর্মসংস্থান তৈরি করলে, গ্রিন কার্ডের জন্য অ্যাপ্লাই করতে পারতেন। ট্রাম্পের Secretary of Commerce Howard Lutnick জানিয়েছেন, গোল্ড কার্ড চলে এলে এই EB-5 প্রোগ্রামটা তুলে দেওয়া হবে। মানে, আমেরিকার অর্থনীতির জন্য আমি কী করেছি, সেসব আর বুঝিয়ে বলার দরকার নেই। নগদ নারায়ণ হাতে ধরিয়ে দিলেই হল।
ডোনাল্ড ট্রাম্প একজন পাক্কা ব্যবসায়ী। তিনি জানেন যে ইউএস সিটিজেনশিপ একটা হাই-ডিমান্ড কমোডিটি। তাই তিনি সেটাকে হাই-প্রাইসে বেচবেন বলে ঠিক করেছেন। ট্রাম্পের কথায়, গোল্ড কার্ড থেকে পাওয়া টাকা সরাসরি সরকারি তহবিলে চলে যাবে। ধনী ব্যক্তিরা এই কার্ড কিনে আমেরিকায় আসতে পারবেন। তাঁরা এখানে এসে খরচ করবেন, কর্মসংস্থান তৈরি করবেন, কর দেবেন। ফলে, আমাদের লাভই লাভ। তিনি জানিয়েছেন, দু’সপ্তাহের মধ্যেই নতুন ব্যবস্থা চালু হয়ে যাবে। তবে, ঠিক কীভাবে সবটা হবে তা খোলসা করেননি মার্কিন প্রেসিডেন্ট।
আর এখানেই উঠে আসছে কয়েকটা প্রশ্ন। প্রথমত, আমেরিকায় টাকা দিয়ে নাগরিকত্ব কেনার নিয়ম নেই। বিশেষজ্ঞদের একাংশ বলছেন যে এটা করতে গেলে সংবিধান সংশোধন করতে হবে। আদালতে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হবে। ফলে, ট্রাম্পের কাছে সবটা মোটেই সহজ হবে না। দ্বিতীয়ত যেটা বলার তা হল, কিছু কিছু দেশে এখনই টাকা দিয়ে নাগরিকত্ব পাওয়ার নিয়ম রয়েছে। সেসব জায়গায় কিন্তু একলপ্তে টাকা দিয়ে বরাবরের জন্য সিটিজেন হওয়া যায় না। নির্দিষ্ট সময় অন্তর মোটা টাকা খসিয়ে সিটিজেনশিপ রিনিউ করাতে হয়। আবার টাকা দিলেই সকলে যে নাগরিকত্ব পেয়ে যান, এমনও নয়। কোটা থাকে। ফলে, ট্রাম্প প্রশাসন নাগরিকত্বের টোপ দিয়ে দুনিয়ার বড়লোকদের কাছ থেকে টাকা তোলার স্কিম শুরু করে দিতে পারে, এরকম সম্ভাবনাও অনেকে উড়িয়ে দিচ্ছেন না। আর আমেরিকার মতো দেশে টাকার বিনিময়ে নাগরিকত্বের নিয়ম চালু হলে অন্য বিপদও আছে। দেশটা সেক্ষেত্রে স্ক্যামস্টারদের সেফ হেভেন হয়ে উঠতে পারে। ললিত মোদীকে মনে আছে তো। ২০০৮-এ আইপিএলের শুরু থেকে ২০১০ পর্যন্ত টুর্নামেন্টের চেয়ারম্যান ছিলেন তিনি। দুর্নীতির অভিযোগ ওঠার পর, সেই যে বিদেশে গা ঢাকা দিয়েছেন, আর ফেরেননি। দীর্ঘদিন ছিলেন ব্রিটেনে। এখন বিপুল টাকা দিয়ে কিনে নিয়েছেন ভানুয়াতুর নাগরিকত্ব।
