কাবুল : কাবুলের মাটিতে আস্তানা গেড়ে ছিল জঙ্গি সংগঠন আল-কায়দা প্রধান আয়মান আল-জ়ওয়াহিরি। ৩১ জুলাই মিসাইল হামলা চালিয়ে ৯/১১-র ঘটনার অন্যতম চক্রীকে খতম করেছে আমেরিকা। সোমবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট নিজে এই খবর নিশ্চিত করেছেন। তবে আফগানিস্তানের মাটিতে আমেরিকার এই সন্ত্রাস দমন অভিযান ভাল চোখে নেয়নি তালিবান প্রশাসন। আমেরিকার এয়ার স্ট্রাইকের কয়েক ঘণ্টার পরই তালিব সরকারের মুখপাত্র জ়াবিহুল্লাহ মুজাহিদ এই হামলার নিন্দা করেছেন। এবং হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, আমেরিকার এই ধরনের অভিযানের ফলে আফগানিস্তান ও আমেরিকার সম্পর্কে প্রভাব পড়তে পারে।
এক বিবৃতিতে তিনি জানিয়েছেন, ‘দ্য ইসলামিক এমিরেট অব আফগানিস্তান এই হামলার তীব্র নিন্দা করছে। স্পষ্টতই এই অভিযানে আন্তর্জাতিক নীতি ও দোহা চুক্তি লঙ্ঘিত হয়েছে। গত ২০ বছরের ব্যর্থ অভিজ্ঞতার পুনরাবৃত্তি এই ধরনের অভিযান। এবং আমেরিকা, আফগানিস্তান ও এই অঞ্চলের স্বার্থের পরিপন্থী এই ঘটনা।’ সেই বিবৃতিতে আরও জানানো হয়েছে, ‘ইসলামিক এমিরেটের নিরাপত্তা ও গোয়েন্দা সংস্থা এই ঘটনার তদন্ত করছে এবং দেখা গিয়েছে আমেরিকার ড্রোনের মাধ্যমে এই হামলা করা হয়েছে। এই ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি হলে বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা নষ্ট করবে।’ আমেরিকাকে একপ্রকার হুঁশিয়ার দেওয়া হয়েছে তালিবান প্রশাসনের মুখপাত্রের বিবৃতিতে। ভবিষ্যতে আফগানিস্তানের মাটিতে এই ধরনের অভিযান না চালানোর জন্য সতর্ক করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, গত বছর ১৫ অগস্ট কাবুলের দখল নেয় তালিবান। আফগানিস্তান ভূমে দ্বিতীয়বারের জন্য তালিবান ধ্বজা ওড়ে। আফগানিস্তান থেকে আমেরিকার সেনাবাহিনী প্রত্যাহার করার কথা ঘোষণা করার পরই তালিবানরা নিজেদের ক্ষমতা কায়েম করার জন্য আগ্রাসী হয়ে ওঠে। গত বছর অবশেষে নিজেদের উদ্দেশে সফল হয় তারা। আফগানিস্তানের মাটিতে শুরু হয় তালিবান ২.০ শাসন। তারপর থেকেই আফগান নাগরিকদের উপর তালিবানদের বিভিন্ন খামখেয়ালি ফতোয়া জারির ছবি বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমেই ছবি আকারে বা প্রতিবেদন আকারে উঠে এসেছে। এই বিভিন্ন ফতোয়া জারিকে কেন্দ্র করে সংবাদ শিরোনামে থেকেছে তালিবানরা। এবার আফগানভূমে আল-কায়দা প্রধানকে আশ্রয় দেওয়ার অভিযোগ উঠল তাদের বিরুদ্ধে। দোহা চুক্তি ভেঙে তারা জ়ওয়াহিরিকে আশ্রয় দিয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন আমেরিকার সেক্রেটারি অব স্টেট। সংবাদ সংস্থা রয়টার্স সূত্রে খবর, আমেরিকার সেক্রেটারি অব স্টেট অ্য়ান্টনি ব্লিনকেন জানিয়েছেন, আল-জ়ওয়াহিরিকে আশ্রয় দিয়ে দোহা চুক্তি ভেঙেছে তালিবান। সোমবার এক বিবৃতি দিয়ে তিনি জানিয়েছেন, ‘নিজেদের দেওয়া প্রতিশ্রুতি মেনে চলতে তালিবানের অনিচ্ছা বা অক্ষমতা সত্ত্বেও আমরা ত্রাণ দিয়ে আফগান জনগণদের সহায়তা করতে থাকব। এবং তাঁদের মানবাধিকার রক্ষায় বিশেষত মহিলা ও মেয়েদের অধিকার রক্ষায় সমর্থন অব্যাহত রাখব।’ এদিকে তালিবানের প্রতিশ্রুতি সত্ত্বেও সেখানে আল-কায়দা প্রধানের নিকেশে মুখ পুড়েছে তালিবদের। আর তাই কাবুলে জ়ওয়ারহিরিকে নিকেশ করায় তালিব প্রশাসনের আঁতে ঘা লেগেছে বলেই মনে করছেন আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞরা। তালিবরাও হুঁশিয়ারি দিয়েছে, এই হামলার মাধ্যমে দোহা চুক্তি ভেঙেছে আমেরিকা।
দোহা চুক্তি কী?
১৮ বছর ধরে আফগানিস্তানে যুদ্ধ শেষে প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে ২০২০ সালে কাতারের রাজধানী দোহাতে আমেরিকা ও তালিবানের মধ্যে একটি চুক্তি সই হয়। এই চুক্তি মোতাবেক আফগানিস্তান থেকে ধীরে ধীরে সেনা প্রত্য়াহার করে নেওয়ার কথা ছিল আমেরিকার। চুক্তি মোতাবেক আমেরিকা তা করেও। সেই চুক্তি মোতাবেক তালিবানও প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল আল-কায়দা সহ কোনও সন্ত্রাসবাদী জঙ্গি সংগঠন বা ব্যক্তিকে আফগানিস্তানের ভূখণ্ড ব্যবহার করে আমেরিকা ও তার মিত্র দেশগুলির বিরুদ্ধে কোনও সন্ত্রাসবাদী অভিযান চালাতে দেবে না তারা। এদিকে খোদ আল-কায়দার প্রধান জ়ওয়াহিরিকে কাবুলে আশ্রয় নেওয়ার অনুমতি দেওয়ায় দোহা চুক্তি ভঙ্গের অভিযোগ আমেরিকারও।