ইসলামাবাদ : চিনের সঙ্গে পাকিস্তানের সখ্যতার কথা নতুন নয়। বিশেষ করে অর্থনৈতিক দিক থেকে চিনের উপর অনেকটাই নির্ভর করে থাকে ইসলামাবাদ। আর সেই অর্থনৈতিক নির্ভরতার উপরেই যদি সজোরে আঘাত হানা হয়, নিমেষে মুখ থুবড়ে পড়তে পারে পাকিস্তান। সম্প্রতি নাকি এমনটাই করেছে আমেরিকা। চিন-পাকিস্তান ইকোনমিক করিডর অথরিটির অভিযোগ, আমেরিকা নাকি তাদের কয়েকশো কোটি ডলারের প্রকল্প নষ্ট করে দিয়েছে। একেবারে কোমর ভেঙে দিয়েছে পাকিস্তানের।
উল্লেখ্য ২০১৫ সালে যখন চিনা প্রেসিডেন্ট শি চিনপিং পাকিস্তান সফরে এসেছিলেন, তখন তাঁর হাত ধরেই শুরু হয়েছিল চিন – পাকিস্তান ইকোনমিক করিডর। মূল লক্ষ্য ছিল, পশ্চিম চিনের সঙ্গে সড়ক ও রেল পথে দক্ষিণ পশ্চিম পাকিস্তানের সমুদ্র বন্দর গদরকে যুক্ত করা।
আজ করাচিতে চিন – পাকিস্তান ইকোনমিক করিডরের এক বৈঠক চলছিল। সেখানে এই দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য সংক্রান্ত বিষয়ে পারিস্তান প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহযোগী খালিদ মনসুর বলেন, “উন্নত ভূ-কৌশলগত অবস্থানের দিক থেকে দেখলে, একটি বিষয় স্পষ্ট: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সিপিইসির বিরোধী এবং এতে ইন্ধন রয়েছে ভারতের। এই চক্রান্ত কোনওভাবেই সফল হতে দেওয়া যাবে না। তার জন্য আমাদের নিজেদের মধ্যে একটি ঐক্যবদ্ধ সিদ্ধান্ত নিতে হবে।”
সিপিইসির বাণিজ্য চুক্তির মাধ্যমে বর্তমানে ২৭.৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের ৭১ টি চিনা প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত রয়েছে পাকিস্তান। চিনের বৈদেশিক বাণিজ্যের হিসেবে সপ্তম স্থানে রয়েছে পাকিস্তান। পাকিস্তানের ডন পত্রিকায় প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অনেক পশ্চিমের থিংক ট্যাঙ্ক এবং মন্তব্যকারীরা সিপিইসিকে একটি অর্থনৈতিক ফাঁদ হিসেবে ব্যাখ্যা করেছেন। যার ফলে ইতিমধ্যেই পাকিস্তানের জনসাধারণের মাথায় ঋণের বোঝাও বৃদ্ধি পেয়েছে এবং পাকিস্তানের অর্থনীতিতে চিনা প্রভাব আগের তুলনায় অনেক বেড়েছে।
এদিকে এখনওধূসর তালিকাতেই রয়ে যেতে হল পাকিস্তানকে। বৃহস্পতিবার সাংবাদিক বৈঠকে ‘ফিনান্সিয়াল অ্যাকশন টাস্ক ফোর্স’ (FATF)-এর প্রেসিডেন্ট মার্কাস প্লেয়ার জানিয়েছেন আপাতত ধূসর তালিকা (Grey List) থেকে মুক্তি পাচ্ছে না পাকিস্তান। জানা গিয়েছে, আগামী বছরের এপ্রিল মাসে ফের বৈঠকে বসবে ফিনান্সিয়াল অ্যাকশন টাস্ক ফোর্স। ততদিন পর্যন্ত এই তালিকাতেই থাকবে পাকিস্তান।
মূলত আর্থিক তছরূপ সংক্রান্ত মামলার ক্ষেত্রে কোনও উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ করতে দেখা যায়নি পাকিস্তানকে। পাশাপাশি সন্ত্রাস দমনেও ব্যর্থ ইসলামাবাদ। এফএটিএফের তরফে যে সব শর্ত দেওয়া হয়েছিল, তাও পূরণ করতে পারেনি পাকিস্তান। তাই এই তালিকায় পাকিস্তানের জায়গা বহাল থাকছে।
২০১৮ সালে সন্ত্রাসদমনে মোট ২৭টি শর্তপূরণ করতে বলা হয়েছিল পাকিস্তানকে। তার সবকটি পূরণ করা সম্ভব হয়নি, তাই ধূসর তালিকাতেই থাকতে হবে তাদের। ২০১৮ সালের জুন মাসে পাকিস্তানকে বলা হয়েছিল যাতে ২০১৯ শেষ হওয়ার আগে দেশের মাটিতে সন্ত্রাসবাদী সংগঠনগুলির বাড়বাড়ন্ত ও তাদের আর্থিক জোগান বন্ধ করতে পদক্ষেপ করার নির্দেশ দেওয়া হয়। কিন্তু ২০১৯ শেষ হতে হতে কোভিডের অতিমারি থাবা বসানোর পর পাকিস্তানকে দেওয়া সময়সীমার মেয়াদ আরও বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল।
আরও পড়ুন : Pakistan: পূরণ হচ্ছে না শর্ত! ধূসর তালিকা থেকে মুক্তি নেই পাকিস্তানের