কারাকাস: প্রার্থনা করতে সপরিবারে স্থানীয় গির্জায় গিয়েছিলেন ৪৩ বছরের ট্যাক্সিচালক আর্মান্দো এস্কালোনা। আচমকা গির্জার ভিতর ঝাঁপিয়ে পড়েছিল তীব্র জলস্রোত। কিছু বুঝে ওঠার আগেই বুক অবধি উঠে গিয়েছিল জল। বউ ও ৫ বছরের ছেলেকে আঁকড়ে ধরেছিলেন তিনি। কিন্তু হঠাৎ একটা ভারি কিছু ভেসে এসে আঘাত করেছিল তার মাথায়। সংজ্ঞা হারিয়েছিলেন। জ্ঞান ফেরার পর আর বউ-ছেলের দেখা পাননি। তিনি একাই নন, তাঁর মতো অবস্থা হয়েছে মধ্য ভেনেজ়ুয়েলার তেহেরিয়াস শহরের বহু মানুষের। শনিবার তীব্র বন্যা ও ধসে এই শহরের অন্তত ২৫ জনের মৃত্যু হয়েছে এবং এখনও অন্তত ৫২ জনের কোনও খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না।
ভেনেজ়ুয়েলার রাজধানী কারাকাস থেকে ৬৭ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থিত তেহেরিয়াস শহর। স্থানীয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, শনিবার রাত ও রবিবার ভোরে, মাত্র আট ঘণ্টার মধ্যে এখানে প্রায় এক মাসের বৃষ্টি হয়েছে। যার জেরে স্থানীয় পাঁচটি ছোট নদীতে বন্যা দেখা দিয়েছিল। দামাল জলের স্রোত, আশপাশের পাহাড় থেকে ভাসিয়ে নিয়ে এসেছিল বড় বড় গাছ, বোল্ডার, কাদামাটি। যার তলায় চাপা পড়েছে শহরের এক বড় অংশের বাড়ি-ঘর-দোকান-বাজার। ৭৩০০০ মানুষের এই ছোট শহরটির রাস্তাঘাট সবই এখন ডুবে আছে জলের তলায়।
ভেনেজ়ুয়েলার ভাইস প্রেসিডেন্ট ডেলচি রডরিগেজ় জানিয়েছেন, সরকারের অগ্রাধিকার এখন কাদামাটি বা পাথরের নিচে এখনও যাঁরা চাপা পড়ে আছেন, তাঁদের উদ্ধার করা। উদ্ধার কাজে নিযুক্ত করা হয়েছে সেনাকর্মীদের। উদ্ধারকারীরা নদীর পারেও দেহের সন্ধান করছেন। স্রোতের টানে অনেকেই নদীখাতেও ভেসে গিয়েছেন বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। নিখোঁজদের বেঁচে থাকার সম্ভাবনা প্রায় নেই বললেই চলে। তেহেরিয়াসের বন্যা-প্লাবিত রাস্তা থেকে রড্রিগেজ় বলেছেন, “আমরা আমাদের ছেলে-মেয়েদের হারিয়েছি। তেহেরিয়াস শহরে বড় মাপের বিপর্যয় ঘটে গিয়েছে।”
স্থানীয় এক ব্যবসায়ী গুস্তাভো আরেভালো জানিয়েছেন, শনিবার নদীগুলিতে দ্রুত জল বাড়তে শুরু করেছিল। এরপর শহরের টেলিফোন অ্যান্টেনাটি ভেঙে পড়েছিল। তারপর বাঁধভাঙা স্রোত নেমে এসেছিল শহরের কেন্দ্রে। বন্যার জল কিছুটা কমে যাওয়ার পর, এখন শহরের আর প্রায় কিছুই অবশিষ্ট নেই বলে জানিয়েছেন তিনি। এই বন্যা ও ধসের ধ্বংসযজ্ঞের পরপরই প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরো, ওই এলাকাকে বিপর্যয়-প্রবণ বলে ঘোষণা করেছেন। এই বিপর্যয়ের প্রেক্ষিতে তিনি দেশে তিনদিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করেছেন। তবে, বৃষ্টি এখনও থামেনি। মাঝে মাঝেই ঝেপে বৃষ্টি আসছে। রবিবারও, মধ্য ভেনেজ়ুয়েলার আরও তিনটি প্রদেশে ধস নেমেছে।