AQI
Sign In

By signing in or creating an account, you agree with Associated Broadcasting Company's Terms & Conditions and Privacy Policy.

Russia-Ukraine War: ‘হেরে গেলেও’ জেতার আশা ছাড়েননি ওঁরা

খারকিভের হাসপাতাল আর ও এক যুদ্ধক্ষেত্র (Russia-Ukraine Conflict)। প্রতিদিন অ্যাম্বুল্যান্সে কত মানুষ আসছে, যার চিত্র সত্যিই ভয়াবহ। কারোর পা নেই, হাত নেই, মাথায় গভীর ক্ষত, কেউ মানসিকভাবে বিপর্যস্ত।

Russia-Ukraine War: ‘হেরে গেলেও’ জেতার আশা ছাড়েননি ওঁরা
ভাইস নিউজের রিপোর্টার হিন্দ হাসান
| Updated on: Mar 27, 2022 | 6:39 PM
Share

পূর্ব ইউরোপের বেশ পুরনো শহর খারকিভ। বাণিজ্য, শিক্ষা, বিজ্ঞান, প্রযুক্তি এবং সংস্কৃতির উৎকর্ষতা এই শহরের ডিএনএ-তে। মস্কোর ইর্ষাণ্বিত হওয়ার কারণও তার মধ্যে একটি। কারণ এই শহরকে তো নিজের হাতে সাজিয়েছে মস্কোই। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছিল খারকিভ। যুদ্ধ শেষে সেই ভগ্ন শহরকে আবার তিল তিল করে সাজায় সোভিয়েত রাশিয়া। খারকিভকে সোভিয়েত ইউক্রেনের প্রথম রাজধানী করা হয়। কিন্তু আশ্চর্য, কিয়েভের মতো রাশিয়ার হাতেই ফের ধ্বংসলীলার সাক্ষী থাকল ‘হিরো সিটি অব ইউক্রেন’ । শুধুই কি এই শহর ধ্বংস হয়েছে, তা তো নয়। মানুষ হারিয়েছে স্বজনদের। মানুষ হারিয়েছে নিজেকেও। খারকিভবাসীর মনের উপর বুলডোজার চালিয়েছে রুশ সেনা। তারই খণ্ড-বিখণ্ড চিত্র ধরা পড়েছে ভাইস নিউজের সাংবাদিক হিন্দ হাসানের রিপোর্টিংয়ে।

Kharkiv

সাবেক ও আধুনিকতার মিশেলে তৈরি খারকিভ শহর এখন ‘হন্টেট হাউজ’ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ক্ষেপণাস্ত্রের অভিঘাতে হাড়-কঙ্কাল বেরিয়ে গিয়েছে বহুতল বাড়িগুলির। তার উপর বরফের প্রলেপ। রাস্তার এদিক ওদিক দাঁড়িয়ে ভাঙাচোড়া গাড়ি। দেখলে মনে হবে কত শতাব্দী ধরে স্থবির হয়ে আছে সেগুলি। ভগ্নস্তূপ খারকিভের সিকিউরিটি সেন্টারের সামনে দাঁড়িয়ে এক বৃদ্ধ। মাথায় কালো ডাক বিল শেপের টুপি, ফুল টাইট জ্যাকেট। কিছুদিন আগে পর্যন্ত ওই সিকিউরিটি সেন্টারে কাজ করতেন তিনি। আজ সেই সিকিউরিটি সেন্টারকে রুশ সেনা ধুলোয় মিশিয়ে দিয়েছে। তার সামনে দাঁড়িয়ে রাগে গজগজ করে বলছেন, “আমার পা খারাপ ভাবে জখম হয়েছে। নইলে সে দিনই শুট আউট করতাম রুশ সেনাদের।” বয়সের কারণে হয়তো তিনি সেটা পারতেন না। কিন্তু রাশিয়া যে ভাবে তাঁর প্রিয় শহরকে শেষ করে দিয়েছে, সেই রাগের বহির্প্রকাশই তাঁর এই মন্তব্য।

Kharkiv

ধ্বংসস্তূপ থেকে মৃতদেহ উদ্ধারে রাতদিন কাজ করে চলেছেন খারকিভের বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের কর্মীরা। ভারী ভারী স্তম্ভ মেশিনে কেটে সেখান থেকে বার করছেন মৃতদেহ। কোথাও বা ভাঙা বহুতলে ল্যাডার বেয়ে প্রায় তিরিশ চল্লিশ ফুট উপরে উঠে যাচ্ছেন কর্মীরা। সামান্য ভারসাম্য হারালেই মৃত্যু অনিবার্য। তেমনই এক বহুতলে দশ-বারো দিন ধরে আটকে এক বৃদ্ধা। বড় বড় ক্রেন নিয়ে চলছে উদ্ধারকার্য। উদ্ধারকারী দলের প্রধান গরভিকব জানান, কয়েক দিন আগে ওই বৃদ্ধার ছেলে ফোন করে বলেন, তাঁর বাড়িতে বোমা পড়েছে। মা একা রয়েছে। বুঝতে পারছি না কী হবে! এ ঘটনার তিন চার দিন পর এসে উদ্ধারকারীরা দেখেন বিধ্বস্ত বহুতল। ধ্বংসস্তূপ সরালেই মৃতদেহ। চার তলায় পৌঁছে যান রিপোর্টার। ওই বৃদ্ধার ঘর পুরোপুরি ভেঙে গিয়েছে। দেওয়ালে রক্তের দাগ। আসবাব, সোফা ভাঙা দেওয়ালের নীচে। তবে শো-কেজে দাঁড় করানো বৃদ্ধার ফোটোফ্রেম তখনও অটুট।  গরকিভ বলছেন, “এ শহর ছেড়ে আমরা কোনও দিন যাব না। যদি ইউক্রেনের আকাশ ক্লোজ করা যেত, তাহলে দেখিয়ে দিতাম আমরা। স্থলভূমিতে কোনও ভাবেই টেক্কা পাচ্ছে না রুশ সেনা।” কথা কথা বলতে ৭৩ বছর বয়সী ওই বৃদ্ধার দেহ উদ্ধার হয় ধ্বংসস্তূপ থেকে। মানুষের শরীর বলে মনে হল না। মানুষের মতো দেখতে যেন সিমেন্টের দলা। কাপড়ে মুড়ে সারি সারি মৃতদেহের সামনে রেখে দেওয়া হল। এরপর গরকিভ বৃদ্ধার ছেলেকে ফোন করে জানালেন, “দুঃখের সঙ্গে জানাচ্ছি আপনার মা আর নেই। ক্ষমা করবেন।”

খারকিভের হাসপাতাল আর ও এক যুদ্ধক্ষেত্র। প্রতিদিন অ্যাম্বুল্যান্সে কত মানুষ আসছে, সত্যিই সে চিত্র ভয়াবহ। কারোর পা নেই, হাত নেই, মাথায় গভীর ক্ষত, কেউ মানসিকভাবে বিপর্যস্ত। খারকিভের যে জায়গায় যুদ্ধ চলছে, তার অদূরেই এই হাসপাতাল। গুরুতর আহত অবস্থায় ভর্তি এক মধ্যবয়সী মহিলা। তাঁকে প্রশ্ন করে জানা গেল, তিনি কয়েকদিন আগে তাঁর সন্তান এবং বোনকে হারিয়েছেন। “সকালেই আমার ২১ বছরের ছেলে আমাকে হাগ করে জানায়, ভয় করো না। সব ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু…”, সে দিনের ঘটনা বলতে বলতে ভেঙে পড়েন ওই মহিলা। তিনি আরও বলেন, “আমার চোখের সামনে ছিন্নভিন্ন হয়ে গেল দেহটা।” মোবাইলটা বার করে তিনি বলেন, “দেখো আমার ছেলেটাকে। কিছু একটা করো। এভাবে চলতে পারে না।” মাস্কটা পরে নিয়ে চোখের জল ঢাকার চেষ্টা করেন মহিলা।

বেডে শুয়ে আর এক মহিলা। তাঁর একটি পা বাদ গিয়েছে। আর একটি পা গুরুতর জখম হওয়ায় প্লেট বসানো হয়েছে। তাঁর কথায়, “দোকানে জিনিস কিনতে লাইনে দাঁড়িয়ে ছিলাম। অনেক মানুষ ছিলেন সেখানে। হঠাৎ এক বিমান বোমা ছুড়তে থাকে। একটা গাড়ির তলায় আশ্রয় নিই। তারপর আর কিছু মনে ছিল না।” হতাশার একটা রুদ্ধশ্বাস ফেলে মহিলা বলতে থাকেন, “আমরা শান্তি চাই। আমি চাই না কোনও শান্তিপ্রিয় মানুষের এইভাবে ক্ষতি হোক। এত সুন্দর শহর খারকিভ। আপনিই ভাবতেই পারবেন না কত সুন্দর ছিল আমাদের শহর। আমি চাই আমাদের শহরের স্বাধীনতা। আমার বিশ্বাস আমাদের ছেলেরা যেভাবে লড়াই করছে, জয়ী হবই।”

Kharkiv

তড়িঘড়ি করে স্ট্রেচারে এক কিশোরকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে এমআরআই করানোর জন্য। হুঁশ নেই। চোখ-মুখ ফুলে গিয়েছে। ইতিউতি নল লাগানো। রুশ রকেট হানায় ক্ষতি হয়েছে তার মস্তিষ্ক, ফুসফুস এবং পাকস্থলী। কীভাবে অস্ত্রোপচার করবে চিকিৎসকরা বুঝতেই পারছেন না। শিশু চিকিৎসক অলেকজ়ান্দ্রা ডুকোভস্কি ছেলেটির মাকে বোঝাচ্ছেন, মস্তিষ্কের সফ্ট টিস্যুতে শেলিংয়ের টুকরো আটকে রয়েছে। আস্তে আস্তে ক্ষতির দিকে যাচ্ছে মস্তিষ্ক। কিন্তু তার অস্ত্রোপচার এই মুহূর্তে সম্ভব নয়। শিশুটির মা নিশ্চুপ। চিকিৎসকও। “আপনি কি ভয় পাচ্ছেন?” হিন্দ হাসান জিজ্ঞাসা করলে চিকিৎসক অলেকজ়ান্দ্রা বলেন, “শিশুটিকে দেখে আমার হৃদয় ভেঙে গিয়েছে…”। কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি। তারপর একটু সামলে রিপোর্টারকে দ্বর্থ্যভাষায় জানান, “আমরা জিতবই। দেখবেন ইউক্রেন জিতবেই…।”