মস্কো: সোমবারই তিন দিনের রাশিয়া সফরে মস্কোয় গিয়েছেন চিনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। মস্কোয় প্রথমদিনই রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে বৈঠক করেন তিনি। ক্রেমলিনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, প্রথম আলোচনায় দুই রাষ্ট্রনেতা ইউক্রেনে যুদ্ধবিরতির জন্য বেজিং-এর দেওয়া প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা করেছেন। বস্তুত, শি জিনপিং-এর রাশিয়া সফর নির্ধারণ হওয়ার পর থেকেই, সম্ভাব্য শান্তি-স্থাপনকারী হিসাবে বিশ্বে নিজেদের তুলে ধরতে চাইছে। তবে, এই যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবের উদ্দেশ্য নিয়েই প্রশ্ন তুলেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং তাদের পশ্চিমী মিত্রশক্তিগুলি। ওয়াশিংটনের মতে, ভ্লাদিমির পুতিনকে “কূটনৈতিক সহায়তা” দিতেই রাশিয়া সফরে এসেছেন চিনা প্রেসিডেন্ট। এই সফর মস্কো এবং বেজিংয়ের মধ্যে সম্পর্কের ঘনিষ্ঠতা আরও বাড়বে এবং তার ফলে পশ্চিমী দুনিয়ায় চিন-রাশিয়া চ্যালেঞ্জ আরও বাড়বে।
ক্রেমলিনের পক্ষ থেকে জানা গিয়েছে, সোমবার চার ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে কথা হয় পুতিন এবং শি জিনপিং-এর। ক্রেমলিনে শি-এর সম্মানে একটি রাষ্ট্রীয় নৈশভোজও দেন পুতিন। দুই রাষ্ট্রনেতা একে অপরকে ‘প্রিয় বন্ধু’ বলে উল্লেখ করেছেন। ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ জানিয়েছেন, “সোমবার ইউক্রেনে যুদ্ধের তীব্রতা কমানো এবং শেষ পর্যন্ত যুদ্ধবিরতির বিষয়ে চিনা প্রস্তাবের বিষয়ে কথা বলেছেন ভ্লাদিমির পুতিন এবং শি জিনপিং। দিমিত্রি পেসকভ বলেছেন, “দুই পক্ষে পুঙ্খানুপুঙ্খ মত বিনিময় হয়েছে।” তবে এই বিষয়ে আর বিশদ তথ্য দেয়নি রাশিয়া। মঙ্গলবার, দুই নেতার মধ্যে আরও এক বৈঠক হওয়ার কথা। সেই বৈঠকের পর দুই নেতা যৌথ বিবৃতি দেবেন বলে জানা গিয়েছে। সূত্রের খবর, চিনা নথিতে ইউক্রেন যুদ্ধ থামানোর জন্য এক ১২-দফা পরিকল্পনা রয়েছে। তাতে যুদ্ধ বন্ধের বিষয়ে কিছু সাধারণ নীতি থাকলেও, যুদ্ধ কীভাবে শেষ করা যায় সেই সম্পর্কে বিশদ কোনও বিবরণ নেই।
চিন যতই নিজেদের শান্তি-স্থাপনকারী হিসেবে তুলে ধরুক না কেন, আমেরিকা এবং অন্যান্য পশ্চিমী শক্তিগুলির আশঙ্কা, এই যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব আসলে রাশিয়ার জন্য সময় কেনার চেষ্টা। এর ফলে বাহিনীকে নতুন করে সংগঠিত করতে পারবেন পুতিন। ইতিমধ্যেই ইউক্রেনের যে যে এলাকা তারা দখল করেছে, সেই সব এলাকায় রুশ বাহিনী তাদের মুঠি শক্ত করার সুযোগ পাবে। ইউক্রেনে সরকারিভাবে আক্রমণ শুরু করার পর থেকে, প্রত্যাশিত সাফল্য পায়নি রুশ বাহিনী। যুদ্ধবিরতির সুযোগে ভুল-ত্রুটি শুধরে নেবে মস্কো।
মার্কিন বিদেশমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন বলেছেন, শি জিনপিং-এর রাশিয়া সফরের অর্থ হল, ইউক্রেনে যে নৃশংসতা চালিয়েছে রুশ বাহিনী, তার জন্য ক্রেমলিনের জবাবদিহি চাওয়ার বিষয়ে কোনও দায়বদ্ধতা নেই চিনের। এমনকি, তাদের নিন্দা করার পরিবর্তে, রাশিয়াকে সেই গুরুতর অপরাধ চালিয়ে যাওয়ার জন্য কূটনৈতিক সহায়তা প্রদান করছে।” উল্লেখ্য, এখনও পর্যন্ত ইউক্রেন যুদ্ধের জন্য রাশিয়ার নিন্দা করা থেকে বিরত থেকেছে বেজিং। বরং, রাশিয়ার উপর পশ্চিমী নিষেধাজ্ঞার সমালোচনা করেছে শি জিনপিং-এর দেশ। বরং পশ্চিমী দুনিয়ার সন্দেহ, শি-এর এই মস্কো সফরের ফলে রাশিয়া চিনের কাছ থেকে সামরিক সমর্থন পাবে।
বস্তুত, শান্তি স্থাপনে শি জিনপিং সশরীরে মস্কোয় হাজির হলেও, ইউক্রেনের রাষ্ট্রপতি ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে তিনি টেলিফোনেই কথা বলবেন বলে শোনা যাচ্ছে। কিয়েভের পক্ষ থেকে অবশ্য চিনের এই উদ্যোগের বিষয়ে সতর্কভাবে বিবৃতি দেওয়া হয়েছে। বেজিংয়ের শান্তি প্রস্তাবকে গত মাসে তারা স্বাগতই জানিয়েছে। তবে জেলেনস্কির সঙ্গে শি ঠিক কবে কথা বলবেন, তা এখনও স্পষ্ট নয়। ইউক্রেনের উপ-প্রধানমন্ত্রী ইরিনা ভেরেশচুক বলেছেন, “আমরা অপেক্ষা করছি। যুদ্ধের প্রেক্ষিতে এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হতে চলেছে।”