লস অ্যাঞ্জেলস শহরে কী এমন হল? সেই গল্পটা চমকে দেওয়ার মতো
লস অ্যাঞ্জেলসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রবিবার ন্যাশনাল গার্ড নামানোর নির্দেশ দিয়েছিলেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। পরিস্থিতি বুঝলে গুলি চালানোর ক্ষমতাও দেওয়া হয়েছে ন্যাশনাল গার্ডকে।

লস অ্যাঞ্জেলস: আগুন-গুলি-দাঙ্গা, পুলিশে পুলিশে ছয়লাপ। এভাবেই কাটছে রাত থেকে ভোর। শহরের বিভিন্ন এন্ট্রি পয়েন্টে চোখে পড়ছে বিশাল বড় হোডিং। সেখানে লেখা, কী দেখছ দেবদূতের শহর? সত্যিই এমন দিন, এরকম রাত লস অ্যাঞ্জেলস কখনও দেখেনি। গত ১০০ বছরে আমেরিকাই এরকম দেখেছে কি না সন্দেহ।
শুক্রবার রাত থেকে শুরু দাঙ্গা, সংঘর্ষে জ্বলছে লস অ্যাঞ্জেলস। সিটি অব অ্যাঞ্জেলস অর্থাত্ দেবদূতদের হাতে তৈরি শহর। সেই বিশ্বাস থেকেই শহরের নামকরণ। সেই শহরে ৭২ ঘণ্টা পার হলেও সংঘর্ষ থামার কোনও লক্ষ্মণ নেই। বরং তা নতুন, নতুন জায়গায় ছড়িয়ে পড়ছে।
লস অ্যাঞ্জেলস সিটি পুলিশের ব্রিফিংয়ে দাবি করা হয়েছে ১০০-র বেশি গাড়ি, বাস জ্বালিয়ে দিয়েছে বিক্ষোভকারীরা। সরকারি কর্মীদের বাড়ি, অফিস এমনকী ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান, দোকানেও হামলা হচ্ছে। যদিও লস অ্যাঞ্জেলসের বাসিন্দারা সোশ্যাল মিডিয়ায় দাবি করছেন, ৩০০-র উপর গাড়ি জ্বালানো হয়েছে। রাস্তায় যখন তখন গুলির শব্দ শোনা যাচ্ছে। অভিবাসীদের গ্রেফতারির বিরুদ্ধে চলছে বিক্ষোভ। সেটাই এখন দাঙ্গার আকার নিয়েছে
তবে মুশকিল হল, এখন আর বিষয়টা পুলিশ আর বিক্ষোভকারীদের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। একদিকে পুলিশ ভার্সেস বেআইনি অভিবাসী। অন্যদিকে অভিবাসী ভার্সেস আদি বাসিন্দাদের লড়াই দেখছে লস অ্যাঞ্জেলস। তাই ব্যাপারটা এদিকে গড়াতেও বাড়ি, দোকানে হামলা, পাল্টা হামলা শুরু হয়েছে।
লস অ্যাঞ্জেলসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রবিবার ন্যাশনাল গার্ড নামানোর নির্দেশ দিয়েছিলেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। পরিস্থিতি বুঝলে গুলি চালানোর ক্ষমতাও দেওয়া হয়েছে ন্যাশনাল গার্ডকে। ২০২১ সালে হোয়াইট হাউসে ট্রাম্প সমর্থকদের তান্ডব থামাতে ন্যাশনাল গার্ডকে তলব করা হয়েছিল। ৪ বার পর আবার সেই ন্যাশনাল গার্ডকেই রাস্তায় নামার নির্দেশ দেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। তবে তাতেও পরিস্থিতি খুব একটা বদলায়নি। উল্টে ন্যাশনাল গার্ডের বিরুদ্ধে গুলি চালানোর অভিযোগে রাস্তায় নেমেছেন কয়েক হাজার মানুষ। সেখানে পুলিশ-বিক্ষোভকারী সংঘর্ষে অন্তত ১৬ জন গুরুতর আহত বলে খবর।
হলিউডের তুতো ভাই, আমেরিকার অন্যতম মহার্ঘ শহর হিসাবে পরিচিত লস অ্যাঞ্জেলস শহরে কী এমন হল? সেই গল্পটা চমকে দেওয়ার মতো। লস অ্যাঞ্জেলস শহরের দুটি বড় এলাকায় অভিবাসী কলোনি হিসেবে পরিচিত। এর একটায় এশিয়া এবং আফ্রিকান দেশগুলো থেকে আসা মানুষের বসবাস। অন্য একটি অংশে থাকেন মূলত হিসপ্যানিক অর্থাত্ লাতিন আমেরিকার বিভিন্ন দেশ থেকে আসা অভিবাসীরা। এদের একটা অবৈধভাবে আমেরিকায় বসবাস করেন।
শুক্রবার সকাল থেকে লস অ্যাঞ্জেলসের হিসপ্যানিক কলোনিতেগুলো অভিযান শুরু করে পুলিশ। মাঝেমধ্যেই এই ধরণের অভিযান হয়। কয়েকদিনের মধ্যে আবার সব ধাপাচাপাও পড়ে যায়। শুক্রবারের অভিযানে সেটা হয়নি। তার একটা কারণও ছিল। এবারই প্রথম ঘরে ঢুকে তল্লাশির পাশাপাশি অবৈধ অভিবাসীদের গ্রেফতার করেছিল পুলিশ। যাদের কাছে অস্থায়ীভাবে আমেরিকায় থাকার ছাড়পত্র রয়েছে, তাদের ৭২ ঘণ্টার মধ্যে থানায় রিপোর্ট করার নির্দেশ দেওয়া হয়।
গুজব রটে যায়, হিসপ্যানিকদের জোর করে আমেরিকা ছাড়া করতেই অভিযানে নেমেছে পুলিশ। এবার বৈধ অভিবাসীরাও পার পাবে না। কয়েক হাজার বাড়িতে লিফলেট ছড়িয়ে দেওয়া হয়। ওইদিন রাত থেকেই প্রথমে বিক্ষোভ, তারপর পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ। হিসপ্যানিকদের পাশাপাশি এশিয়ান এবং আফ্রিকানদের বিরুদ্ধেও দাঙ্গা, সরকারি সম্পত্তিতে ভাঙচুর, পুলিশকে খুনের চেষ্টার মতো গুরুতর অভিযোগ ওঠে। রবিবার সকালে শহরের পুলিশ চিফ জানিয়েছিলেন, পুলিশকে লক্ষ্য করে হাজার হাজার মলোটাভ ককটেল ছোড়া হয়েছে। দুষ্কৃতীরা খোলাখুলি গুলি চালাচ্ছে। তবে সোমবারের পর এটা স্পষ্ট যে বিষয়টা শুধু অভিবাসী বনাম পুলিশে সীমাবদ্ধ নেই। অভিবাসীদের সঙ্গে আদিবাসীদের লড়াই দেখছে লস অ্যাঞ্জেলস।
শহরের আদি বাসিন্দারা, বিশেষত হোয়াইট আমেরিকানদের একটা অংশ চাইছে, বেআইনি অধিবাসীদের দেশ ছাড়া করতে আরও কঠোর হোক পুলিশ ও সেনা। তাঁরাও পুলিশের পাশে দাঁড়িয়ে অভিবাসীদের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিতে ব্যস্ত। লস অ্যাঞ্জেলস এই ছবি কখনও দেখেনি।





