নয়া দিল্লি: জম্মু-কাশ্মীরের বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতা ইয়াসিন মালিকের (Yasin Malik) কথা মনে আছে? বেআইনি কার্যকলাপ (প্রতিরোধ) আইন বা ইউএপিএ(UAPA)-র একাধিক ধারায় অভিযুক্ত উপত্য়কার বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন জেকেএলএফের নেতা ইয়াসিন বর্তমানে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের সাজা কাটছেন তিহাড় জেলে। তবে সম্প্রতিই একটি খবরে সকলের ভুরু কপাল ছেড়ে মাথায় উঠেছে। তা হল পাকিস্তানের অন্তর্বর্তী সরকারের মন্ত্রী করা হয়েছে ইয়াসিন মালিকের স্ত্রী মুশাল হুসেন মালিক(Mushaal Hussein Mullick)-কে। যার স্বামী প্রতিবেশী দেশে বিচ্ছিন্নতাবাদী কার্যকলাপের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে জেলের ঘানি টানছেন, তাঁকেই মন্ত্রিসভায় স্থান দেওয়া নিয়ে পাকিস্তান সরকারের মনোভাব নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে আন্তর্জাতিক মহলে। কিন্তু কে এই মুশাল? কেনই বা তাঁকে নিয়ে এত চর্চা?
গত সপ্তাহেই পাকিস্তানের অন্তর্বর্তী সরকার গঠন করা হয় শেহবাজ শরিফ প্রধানমন্ত্রী পদ থেকে ইস্তফা দেওয়ার পর। অন্তর্বর্তী প্রধানমন্ত্রী করা হয় আনওয়ার-উল-হক-কাকরকে। তাঁর সরকারেই মানবাধিকার বিষয়ক দফতরের উপদেষ্টা হিসাবে নিয়োগ করা হয় মুশাল হুসেন মালিককে। পাক সরকারের এই পদক্ষেপের তীব্র সমালোচনা করে ভারত।
১৯৮৫ সালে পাকিস্তানের রাওয়ালপিন্ডিতে জন্মগ্রহণ করেন মুশাল হুসেন মালিক। তাঁর মা পাকিস্তান মুসলিম লিগের মহিলা সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। পরবর্তী সময়ে সেক্রেটারি জেনারেলের দায়িত্বও পান। অন্যদিকে, মুশালের বাবা এমএ হুসেন অর্থনীতির অধ্যাপক ছিলেন। তবে তিনি বিশ্বজুড়ে পরিচিতি অর্জন করেছিলেন নোবেল পুরস্কারের জুরি কমিটির সদস্য হিসাবে। তিনি প্রথম পাকিস্তানি, যিনি নোবেল পুরস্কার জুরি কমিটির সদস্য় ছিলেন। মুশালের দাদাও অধ্যাপক। আমেরিকার একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ান তিনি।
ছোট থেকেই পড়াশোনায় দুর্দান্ত ছিলেন মুশাল। বাবার মতোই তিনিও অর্থনীতি নিয়ে পড়াশোনা করেছেন। ব্রিটেনের লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিক্স থেকে স্নাতক হন তিনি।
২০০৫ সালে ইয়াসিনের সঙ্গে আলাপ হয় মুশালের। তাদের গোটা প্রেম পর্বটাই সিনেমার গল্পের মতো ছিল। জানা গিয়েছে, ২০০৫ সালে জম্মু-কাশ্মীরের বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতা পাকিস্তানে গিয়েছিলেন। সেখানেই মুশালের সঙ্গে দৃষ্টি আদান-প্রদান হয়। মঞ্চে তখন ইয়াসিন, তাঁর ভাষণ শুনে মুগ্ধ হয়ে যান মুশাল। বক্তৃতা শেষে ব্যক্তিগতভাবে দেখা করতে ও অটোগ্রাফ নিতে যান ইয়াসিনের সঙ্গে। সেখান থেকেই আলাপ। এরপরে প্রেম।
বয়সের বিশাল ব্যবধান থাকলেও তাতে প্রেম আটকে থাকেনি। ২০০৯ সালে ২৩ বছরের মুশালের সঙ্গে বিয়ের বাঁধনে বাঁধা পড়েন ৪২ বছরের ইয়াসিন। ইসলামাবাদে তাঁদের বিয়েতে উপস্থিত ছিলেন পাকিস্তানের নেতা-মন্ত্রীরা। এমনকী, তাঁদের বিয়ের অনুষ্ঠান পাকিস্তানের সংবাদমাধ্য়মে সম্প্রচারিতও করা হয়। বর্তমানে তাদের একটি কন্যাসন্তানও রয়েছে।
সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যাপক জনপ্রিয় মুশাল। তিনি নিজেকে চিত্রশিল্পী হিসাবে পরিচয় দেন। মূলত নারী শরীরের ছবিই আঁকেন মুশাল। তবে তাঁর ক্যানভাসে কাশ্মীরের চিত্রও ধরা পড়েছে। ইয়াসিন মালিকের গ্রেফতারির পর থেকে মুশাল তাঁর মেয়েকে নিয়ে ইসলামাবাদে থাকেন। সেখানের একটি বেসরকারি সংস্থার প্রেসিডেন্টও তিনি। ইয়াসিনের সূত্রেই পাকিস্তানের নেতা-মন্ত্রীদের সঙ্গে ওঠাবসা ছিল মুশলের। সেই পরিচয় থেকেই উত্থান। এবার মন্ত্রিপদও পেলেন তিনি। হোক না সে অন্তর্বর্তী সরকার।