জেনেভা: বর্ষশেষেও পিছু ছাড়ল না করোনা(COVID-19), বিশ্বজুড়ে ডমিনেন্ট ভ্যারিয়েন্টে পরিণত হয়েছিল ডেল্টা (Delta Variant)। উপরি পাওনা হিসাবে জুটেছে নয়া ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রন(Omicron)-ও। দুই সংক্রমণের ঠেলায় বিশ্বের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ও পরিকাঠামোর উপর প্রবল চাপ সৃষ্টি হতে চলেছে বলেই জানানো হল বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা(World Health Organization)-র তরফে। বুধবার হু(WHO)-র তরফে জানানো হয়, ওমিক্রন ও ডেল্টা সংক্রমণ মিলিতভাবে করোনা সংক্রমণের সুনামি (Tsunami) ডেকে আনতে পারে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তরফে জানানো হয়, ডেল্টা ও ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্ট হল জো়ড়া বিপদ, যার জেরে নতুন আক্রান্তের সংখ্যা আকাশছোঁয়া পর্যায়ে পৌঁছেছে। এরফলে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার ও মৃত্যুর সংখ্যাও ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। মঙ্গলবারই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তরফে জানানো হয়েছিল, বিগত এক সপ্তাহে বিশ্বে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ১১ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। বুধবার ফ্রান্স ও আমেরিকায় দৈনিক করোনা আক্রান্তের সংখ্যা নয়া রেকর্ড তৈরি করে।
সাংবাদিক বৈঠকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান টেড্রোস আধানম গ্রেবেয়াসিস (Tedros Adhanom Ghebreyesus) বলেন, “একদিকে যখন বিশ্বে ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট এখনও ছড়াচ্ছে, সেই মুহূর্তে নয়া ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রন, যা ডেল্টার থেকেও অধিক সংক্রামক, তাও ছড়িয়ে পড়ছে। দুই ভ্যারিয়েন্টের প্রভাবে সংক্রমণের সুনামি আসতে পারে, এই বিষয় নিয়েই আমি উদ্বিগ্ন।”
করোনা সংক্রমণ বাড়লে হাসপাতালে রোগী ভর্তির সংখ্যাও বৃদ্ধি পাবে, এ কথাই উল্লেখ করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান বলেন, “সংক্রমণের এই জোড়া আক্রমণ বর্তমানে এবং আগামিদিনেও স্বা,স্থ্যকর্মী ও স্বাস্থ্য পরিকাঠামোর উপর প্রচন্ড চাপ সৃষ্টি করবে। দীর্ঘ দেড় বছরেরও বেশি সময় ধরে লড়াই চালাতে চালাতে স্বাস্থ্যকর্মীরা ক্লান্ত, এর উপর নতুন করে চাপ সৃষ্টি হলে স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ভেঙে পড়ার মুখে পৌঁছবে।”
শুধুমাত্র নতুন করোনা সংক্রমণ ও রোগার চাপেই বিশ্বের স্বাস্থ্য পরিকাঠামো সঙ্কটের মুখে পড়েনি, একইসঙ্গে স্বাস্থ্যকর্মীদের একটি বড় অংশও করোনা সংক্রমিত হওয়ায়, হাসপাতালগুলিতে চরম সঙ্কট দেখা দিয়েছে। কম সংখ্যক স্বাস্থ্যকর্মী নিয়ে বিপুল পরিমাণ রোগী সামলানো বড় দায় হয়ে উঠেছে।
২০২১ সালে যেভাবে করোনা সংক্রমণের বিরুদ্ধে গোটা বিশ্ব লড়াই করেছে, তার প্রশংসা করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তরফে জানানো হয়, আগামী বছর হয়তো আমরা প্যান্ডেমিকের যে ভয়ঙ্কর পর্যায়, তা কাটিয়ে উঠতে পারব। তবে এটি নির্ভর করবে ভ্য়াকসিনের সমবন্টনের উপরই।
বিশ্ব জুড়ে টিকাকরণ কর্মসূচি শুরু হওয়ার পরই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তরফে প্রতিটি দেশের কমপক্ষে ৪০ শতাংশ জনগণকে করোনা টিকা দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা স্থির করা হয়েছিল। ২০২২ সালের মাঝামাঝি সময়ের মধ্যে বিশ্বের ৭০ শতাংশ মানুষকে করোনা টিকা দেওয়ার পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু গতকালই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান টেড্রোস আধানম গ্রেবিয়াসিস জানান, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ১৯৪টি সদস্য দেশের মধ্যে ৯২টি দেশই ৪০ শতাংশ টিকাকরণের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে পারেনি।
তিনি বলেন, “এই লক্ষ্যমাত্রা পূরণ সম্ভব হয়নি কারণ পিছিয়ে পড়া বা অল্প আয়যুক্ত দেশগুলিতে সীমিত সংখ্যক টিকা সরবরাহের জন্য। আবার যখন টিকাগুলি পৌঁছেছে, তার মেয়াদ প্রায় শেষের মুখে ছিল এবং টিকাকরণের গুরুত্বপূর্ণ অংশ যেমন সিরিঞ্জ সরবরাহই করা হয়নি।”
গোটা ঘটনার সমালোচনা করে তিনি বলেন, “এটা কেবল নৈতিক লজ্জাজনক বিষয় নয়, এর ফলে মানুষের প্রাণহানি হয়েছে এবং ভাইরাসকেও আরও ছডিয়ে পড়তে ও অভিযোজিত হওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়েছে। ২০২১ সাল কঠিন হলেও, আমি সকলকে অনুরোধ করছি যে নতুন বছরে যাতে টিকাকরণের ৭০ শতাংশের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে পারি, সেই শপথ নিই।”