TV9 Bangla Explained: কেন পাকিস্তানে হামলা করল ইরান? কারা এই জইশ আল-আদল গোষ্ঠী?
Iran attack Pakistan: ইসলামাবাদ সাফ জানিয়েছে, এই পদক্ষেপ গ্রহণযোগ্য নয়। 'গুরুতর পরিণতি'র সতর্কতাও জারি করেছে তারা। কিন্তু কেন পাকিস্তানে ঢুকে হামলা চালাল ইরান? কূটনৈতিক সম্পর্ককে ঝুঁকির মুখে ফেলতে গেল কেন? কারাই বা এই জইশ আল-আদল গোষ্ঠী?

তেহরান ও ইসলামাবাদ: নতুন করে ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনা তৈরি হয়েছে ইরান ও পাকিস্তানের মধ্যে। মঙ্গলবার (১৬ জানুয়ারি), পাকিস্তানের বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা লঙ্ঘন করে, সেই দেশের বেলুচিস্তানে সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠী জইশ আল-আদল বা জায়েশ আল-ধুলমের দুটি প্রধান ঘাঁটিতে ‘নির্ভুল ক্ষেপণাস্ত্র এবং ড্রোন হামলা’ চালিয়েছে ইরান। পাকিস্তানের ঘরে ঢুকে তেহরানের এই হামলায় দুই শিশুর মৃত্যু হয়েছে বলেও দাবি করা হয়েছে স্থানীয় সংবাদমাধ্যমে। মঙ্গলবার গভীর রাতে, ‘বিনা প্ররোচনা’য় ইসলামাবাদের আকাশসীমায় ঢুকে ইরানের এই আক্রমণ মোটেই ভালভাবে নেয়নি পাকিস্তান। ইসলামাবাদ সাফ জানিয়েছে, এই পদক্ষেপ গ্রহণযোগ্য নয়। ‘গুরুতর পরিণতি’র সতর্কতাও জারি করেছে তারা। কিন্তু কেন পাকিস্তানে ঢুকে হামলা চালাল ইরান? কূটনৈতিক সম্পর্ককে ঝুঁকির মুখে ফেলতে গেল কেন? কারাই বা এই জইশ আল-আদল গোষ্ঠী?
জইশ আল-আদল এক কুখ্যাত সুন্নি মুসলিম সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠী। সম্প্রতি, এক জঙ্গি হামলায় ইরানে ১১ জন পুলিশ সদস্যের মৃত্যু হয়। ঘটনাটি গত মাসের। ইরানের দক্ষিণ-পূর্বে সিস্তান ও বেলুচেস্তান প্রদেশের রাস্ক শহরে এক থানায় ঢুকে ওই অফিসারদের হত্যা করেছিল জঙ্গিরা। যার পিছনে এই গোষ্ঠীর হাত ছিল বলে দাবি তেহরানের। আর সেই ঘটনার প্রতিক্রিয়াতেই পাকিস্তানে ঢুকে হামলা চালিয়েছে ইরান। যদিও ওই ঘটনার পরপরই, ইরানের বিদেশমন্ত্রী হোসেন আমিরাবদুল্লাহিয়ান এবং তাঁর পাকিস্তানি প্রতিপক্ষ জলিল আব্বাস জিলানি এক বৈঠক করেছিলেন। তেহরান তাদের উদ্বেগ প্রকাশ করেছিল সেই বৈঠকে। কিন্তু, তারপরও সম্ভবত পাকিস্তানের পক্ষ থেকে কোনও পদক্ষেপ করা হয়নি। পাকিস্তানের এই রূপের সঙ্গে আমরা ভারতীয়রা অবশ্যই পরিচিত।
আসলে, ইরানের ই হামলা কোনও আকস্মিক ঘটনা নয়। দীর্ঘদিন ধরেই তেহরানের সন্দেহ, তাদের আঞ্চলিক চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী সৌদি আরবের নির্দেশে সুন্নি মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ পাকিস্তান সম্ভবত ইরান বিরোধী জঙ্গিদের নিরাপদ আশ্রয় দিয়েছে। এর আগে, পাক সীমান্ত এলাকায় সন্ত্রাসবাদীদের বিরুদ্ধে বহু হামলা চালিয়েছে ইরান। তবে, পাকিস্তানের অভ্যন্তরে ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা এক নজিরবিহীন পদক্ষেপ। পাক সরকারের এক ঊর্ধ্বতন কর্তা সংবাদ সংস্থা এএফপিকে জানিয়েছেন, এই হামলার আগে ইসলামাবাদকে কোনও ইঙ্গিতও দেয়নি তেহরান। আরও গুরুত্বপূর্ণ হল, হামলার দিনই সুইজারল্যান্ডের ডাভোসে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের বার্ষিক সভায় পাকিস্তানের তত্ত্বাবধায়ক প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার-উল-হক কাকরের সঙ্গে সাক্ষাৎ হয়েছিল ইরানের বিদেশমন্ত্রীর। তাও তিনি কিচ্ছুটি জানতে দেননি।
এবার আসা যাক জইশ আল-আদলের কথায়। ২০১২ সালে এই জঙ্গি সংগঠনের জন্ম হয়েছিল। জইশ আল-আদল কথার অর্থ ন্যায়বিচারের সেনা। ইরান এবং পাকিস্তান, দুই দেশেই এই এই বিচ্ছিন্নতাবাদী জঙ্গি সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর উপস্থিতি রয়েছে। অতীতে, ইরানে বেশ কয়েকটি জঙ্গি হামলার দায় স্বীকার করেছে এই গোষ্ঠী। সামগ্রিকভাবে শিয়া মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ ইরানের একমাত্র সুন্নি সংখ্যাগরিষ্ঠ প্রদেশ হল সিস্তান ও বেলুচেস্তান। তাদের মূল লক্ষ্য হল এই প্রদেশের স্বাধীনতা। ২০১৯ সালে, জইশ আল-আদল ইরানের একটি বাসে আত্মঘাতী বোমা হামলা চালিয়েছিল। ওই ঘটনায় ইরানের আধাসামরিক বাহিনীর ২৭ জন সদস্য নিহত হয়েছিলেন। এই ধরনের বহু হামলাই চালিয়েছে তারা। এবার উরি হামলার পর, বালাকোটে ভারত যেমন জইশ-ই-মহম্মদের প্রশিক্ষণ শিবিরে আকাশপথে হামলা চালিয়েছিল, ঠিক সেই ধাঁচেই পাকিস্তানের মাটিতে অবস্থিত জঙ্গি ঘাঁটিতে হামলা চালাল ইরান। এই দ্বন্দ্বের জল কতদূর গড়ায়, এবার সেটাই দেখার।
