নিউ জিল্যান্ড: চারদিন আগে নিউজিল্যান্ডের সংসদে নাচতে, নাচতে বিল ছিঁড়ে ফেললেন সে দেশের এক মহিলা সাংসদ। ওটাই ছিল তাঁর প্রতিবাদ। নিউজিল্যান্ডের ইতিহাসে সবচেয়ে কমবয়সী সাংসদ হানা রাউহিতি কারিরিকি ক্লার্ক ওরফে মাইপি ক্লার্ক সেই থেকেই ইন্টারনেট সানসেশন। নিউজিল্যান্ডে ঐতিহ্যবাহী হাকা ডান্সের সঙ্গে তাল মিলিয়ে নাচতে দেখা গিয়েছিল হানাকে। শুরুটা তিনি একাই করেছিলেন। পরে তাঁর সঙ্গে যোগ দেন আরও ৭ থেকে ৮ জন এমপি। সেই ঘটনা ছাইচাপা আগুনের জ্বালামুখ সরিয়ে দিয়েছে যেন।
রবিবার নিউজিল্যান্ডের ছোট – বড় শহর এমনকী গ্রামেও প্রতিবাদ – বিক্ষোভে সামিল হন বহু মানুষ। কীসের প্রতিবাদ? সোজা কথায় একটা বিলের প্রতিবাদ। নিউজিল্যান্ডের আদি বাসিন্দা, ভূমিপুত্রদের অধিকার ও সংস্কৃতি রক্ষার যে অঙ্গীকার, তা থেকে সরে আসার প্রতিবাদ। ১৮৪০ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি নিউজিল্যান্ডের আদি বাসিন্দা মাওরিদের সঙ্গে একটি চুক্তি করে ব্রিটিশ সরকার। সেই চুক্তির মাধ্যমে নিউজিল্যান্ড অফিশিয়ালি ব্রিটেনের কলোনিতে পরিণত হয়। পরিবর্তে, নিউজিল্যান্ডের আদি বাসিন্দা মাওরিদের বিশেষ কিছু অধিকার দিয়েছিল ব্রিটিশরা।
৫০০ বছরের জন্য ওয়াইটাঙ্গি চুক্তি হলেও সভ্যতার শেষদিন পর্যন্ত চুক্তি বলবত্ থাকবে। নিউজিল্যান্ডের কয়েকটি ভৌগলিক এলাকায় মাওরিদের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয় এই চুক্তিতে। ফলে, এখনও এইসব এলাকায় অন্য কেউ জমি কিনতে বা ব্যবসা করতে পারেননা। এইসব এলাকায় নিউজিল্যান্ডের জাতীয় ও সংসদীয় আইনকানুনও চলে না। বহুদিন ধরে এই চুক্তির বিরুদ্ধে সরব হচ্ছিল নিউজিল্যান্ডের রাজনৈতিক দলগুলো। চলতি সপ্তাহে ওয়াইটাঙ্গি চুক্তিতে বেশ কয়েকটি সংশোধন যোগ করে বিল আনেন কয়েকজন সাংসদ। ডিসকাশন অ্যান্ড ইউটিলিটি বিল। অর্থাত্ শুধু দৃষ্টি আকর্ষণ করতেই এই বিল আনা হয়।
এটি আইনে পরিণত হওয়ার কোনও সম্ভাবনাই ছিল না। এর প্রতিবাদেই সংসদে অভিনব প্রতিবাদ শুরু করেন মাওরি সম্প্রদায়ের সদস্য হানা। তার সঙ্গে যোগ দেন মাওরি সম্প্রদায়ের অন্য সদস্যরাও।
সংসদের রীতিনীতি ভাঙার অভিযোগে হানাকে সাসপেন্ড করেছে ওদেশের পার্লামেন্টারি কমিটি। দেশ জুড়ে বিক্ষোভের মুখে বুধবার এই নিয়ে বিবৃতি দেবেন নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী। শুধু এটা ঘোষণা করতে যে, মাওরিদের অধিকার ও সংস্কৃতিতে হাত দেওয়ার কোনও ইচ্ছে সরকারের নেই। যদিও ওদেশের ভূমিপত্র মাওরি-দের দাবি, সরকারকে বিশ্বাস করতে পারছি না। ১৮৪০ সালের চুক্তি মেনে চলা নিয়ে লিখিত গ্যারান্টি দিতে হবে। সেটা না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে।