ইজরায়েল-হামাস যুদ্ধে কাঁপছে গাজা। প্রাণহানি, মৃত্যুভয়, ক্ষয়ক্ষতির খতিয়ানে উদ্বেগ গোটা বিশ্বে। সূত্রের খবর, এখনও পর্যন্ত কমবেশি ৪ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছে। এদের মধ্যে অন্তত ২ হাজার ৩৫০ জন প্যালেস্তাইনের নাগরিক। ১ হাজার ৬৫০ জন ইজরায়েলি নাগরিক। এই সংখ্যাগুলোর সঙ্গেই জড়িয়ে ৮০ জনের উপর শিশু আর ১৯০ জন টিন-এজার। যুদ্ধের দশম দিনেই এই অবস্থা। গাজায় গত সাতদিনে খাবার, জল, ওষুধ কিছুই ঢোকেনি বলে জানা যাচ্ছে। আন্তর্জাতিক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ডক্টরস উইথআউট বর্ডার এদিন জানিয়েছে, এই মুহূর্তের গাজার যা অবস্থা, তাকে বলা যায়, গত দুই দশকে দুনিয়ার সবচেয়ে বড় হিউম্যানিটোরিয়ান ক্রাইসিস। গাজার হাসপাতালে মেঝেতেও আর জায়গা নেই।
জলের ড্রামে আশ্রয় নিয়েছেন আহত মানুষ। কারণ ড্রামে জল নেই। ডক্টরস উইথআউট বর্ডারের আবেদন, অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি ঘোষণা হোক। গাজায় জল ও খাবার ঢুকতে না দিলে আরও বহু মানুষ মারা পড়বেন। ইজরায়েল নদার্ন গাজা ছাড়ার সময়সীমা দেওয়ার পর সেখানকার অধিকাংশ বাসিন্দাই ঘর ছেড়েছেন। এদের মধ্যে অন্তত ৫ লক্ষ মানুষ রাফাহ সীমান্তে অপেক্ষায়। গাজা থেকে এই সীমান্ত হয়ে মিশরে ঢোকা যায়। কিন্তু হলে কী হবে? রাফাহ সীমান্ত সিল করা। মিশরের বিদেশমন্ত্রী জানাচ্ছেন, ইজরায়েলের সঙ্গে আলোচনা ফলপ্রসূ না হওয়া পর্যন্ত সীমান্ত খোলা যাবে না। তাঁরা ওই প্যালেস্তাইনীয়দের ফিরিয়ে নেওয়ার গ্যারান্টি চান। কার হয়ে কে গ্যারান্টি দেবে বলুন তো? অর্থাত্ মিশর সীমান্তে ৫ লক্ষ মানুষ জল, খাবার ছাড়া অপেক্ষায়। আবার দক্ষিণ গাজায় আরও কয়েক লক্ষ মানুষ একইরকম অনিশ্চয়তার মুখে। সূত্রের খবর, রাফাহ বর্ডার, দক্ষিণ গাজা, নদার্ন গাজা – এই এলাকাগুলোই সবচেয়ে বড় মানবিক সঙ্কটের মুখে। ইজরায়েলে যুদ্ধকালীন তদারকি সরকার সাফ জানাচ্ছে, যুদ্ধবিরতিও হবে না। সংঘর্ষ বিরতিও হবে না। এই পরিস্থিতিতে বুধবার ইজরায়েলে আসছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। প্যালেস্তাইন প্রেসিডেন্ট মেহমুদ আব্বাসের সঙ্গেও কথা বলেছেন বাইডেন। তাঁর বিদেশসচিব অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন ইজরায়েল থেকে প্যালেস্তাইন গিয়ে মেহমুদ আব্বাসের সঙ্গে দেখা করেছেন গত শুক্রবার। তাই গাজায় ত্রাণ পৌঁছনো নিয়ে নেতানিহুয়াকে রাজি করানোর একটা দায় বাইডেনের উপর থাকছে বলে মনে করছেন আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞ মহলের একাংশ।
সূত্রের খবর, হামাসকে এড়িয়ে কীভাবে গাজায় ত্রাণ পৌঁছানো যায়, তার রূপরেখা ঠিক করছে ইজরায়েল ও আমেরিকা। বাইডেনের হাত ধরে সেই ঘোষণা হতে পারে। এদিনও ইজরায়েল অভিযোগ করেছে, প্রতি বছর গোটা বিশ্ব থেকে গাজায় যে টাকা ও ত্রাণ আসে, তার পুরোটাই হামাস সন্ত্রাসের কাজে লাগায়। গাজার বাসিন্দাদের ঘর তৈরির যে উপকরণ পাঠানো হয়, সেগুলি ব্যবহার করেই হামাস জঙ্গিরা টানেল ও ঘাঁটি তৈরি করে। ইজরায়েলের এই অভিযোগ নিয়ে এদিন মার্কিন বিদেশমন্ত্রকের মুখপাত্রকে প্রশ্ন করা হয়েছিল। উত্তর ছিল, ত্রাণের জিনিস যাতে অন্য কাজে ব্যবহার না হয়, তা নিশ্চিত করতে হবে ডোনার দেশগুলিকে। কিন্ত এই মুহূর্তে ত্রাণ পৌঁছে দেওয়াটাই জরুরি। আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, কূটনৈতিক স্বার্থের কথা ভেবে ঘুরপথ নিতে হচ্ছে আমেরিকাকে। অনেকে বলছেন আরব লীগকে চটানোর ক্ষমতা আমেরিকার নেই। তেলে কোম্পানির স্বার্থ সহ আরও অনেক কারণ আছে। আবার, ইজরায়েল কিংবা নেতানিহুয়ার পাশ থেকে সরে যাওয়ার সাহসও নেই।
অন্যদিকে ইতিমধ্যেই আবার গাজার পাশাপাশি এবার লেবানন সীমান্তেও নতুন ফ্রন্ট খোলার ইঙ্গিত দিয়েছে ইজরায়েল। সেদেশের সংসদে প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিহুয়া বলেছেন, ইরান ও লেবানন সীমান্ত থেকে যুদ্ধের উস্কানি আসছে। আমাদের প্রয়োজনে দ্বিতীয় ফ্রন্ট খুলে লড়তে হবে। আমি সেনাকে সেই নির্দেশই দিয়েছি। এদিন খুব ভোরে লেবানন সীমান্তে ইজরায়েলের লেজার গাইডেড কাঁটাতারের সামনে আত্মঘাতী বিস্ফোরণের চেষ্টা হয়। হিজবুল্লার সেই জঙ্গিকে গুলি করে মারে আইডিএফ। আইডিএফ মুখপাত্র এদিন দাবি করেছেন, গাজার মূল ভূখণ্ডে সেনা অভিযান হলেই লেবানন সীমান্তে হামলা করবে হিজবুল্লা। গোয়েন্দা সতর্কতা পেয়েই পাল্টা প্রস্তুতি নিচ্ছেন তাঁরা। গাজার মূল ভূখণ্ডের ঠিক আগে এখনও থমকে আইডিএফ। আকাশপথেও হামলার তীব্রতা কমেছে বলে জানাচ্ছেন টিভি নাইনের প্রতিনিধিরা।
তবে ইজরায়েল সেনা বলছে, তাঁরা পরিকল্পিতভাবে এগোচ্ছে। গত দশ দিনে হামাসের দুশোর বেশি গুঁড়িয়ে দেওয়া গিয়েছে। হামাসের শীর্ষনেতা পরিবার সমেত বিদেশে গা-ঢাকা দিয়ে রয়েছে। তাঁদেরকেও ছাড়া হবে না। গাজার পরিস্থিত নিয়ে আলোচনায় এদিনই বৈঠকে বসছে মুসলিম দেশগুলি সংগঠন অর্গানাইজেশন অফ ইসলামিক কান্ট্রিজ। সৌদি আরবের ডাকা এই বৈঠকের দিকে তাকিয়ে আছে আন্তর্জাতিক দুনিয়া। গাজা নিয়ে রাষ্ট্রসংঘের বিশেষ অধিবেশনও বসেছিল। সূত্রের খবর, সেখানে রাশিয়া, হামাসের নাম বাদ দিয়ে নিন্দা প্রস্তাব আনতে চাওয়ায় তা খারিজ করে দেয় বাকি দেশগুলি।