নয়া দিল্লি: প্রত্যাশা ছিল অনেক, তবে করোনাকালে দেশের অর্থনীতির হাল ধরতে একটু সাবধানী পদক্ষেপই নিলেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন (Nirmala Sitharaman)। এ দিন কেন্দ্রীয় বাজেটের (Union Budget 2022) ঘোষণায় তিনি আয়করে (Income Tax) বিশেষ ছাড় ঘোষণা না করলেও, ভুল সংশোধন করে দুই বছরের মধ্যে রিটার্ন ফাইল করার কথা তিনি ঘোষণা করলেন। এই প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “আয়কর জমা দেওয়ার ক্ষেত্রে ভুল সংশোধনের একটি সুযোগ দেওয়া হচ্ছে। এবার থেকে আয়করদাতারা করের হিসাব ও জমা দেওয়ার ক্ষেত্রে ভুল সংশোধন করে দুই বছরের মধ্যে সেই রিটার্ন দাখিল করার সুযোগ পাবেন।”
বিশ্বের দ্রুততম অর্থনীতি বৃদ্ধির যে তকমা ভারতের রয়েছে, তা ধরে রাখার লক্ষ্যেই এদিন কেন্দ্রীয় বাজেট পেশ করেন অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন। এই নিয়ে চতুর্থবার তিনি বাজেট পেশ করলেন। উল্লেখ্যযোগ্যভাবে এইবারই সবথেকে কম সময়ে বাজেট পেশ করলেন অর্থমন্ত্রী।
বাজেট পেশের আগেই আয়করে ছাড় নিয়ে অনেক প্রত্যাশা থাকলেও, বাজেট ঘোষণায় সেভাবে তেমন কোনও ছাড়ের কথাই উল্লেখ করেননি অর্থমন্ত্রী। বাজেটের শেষভাগেও তিনি জানিয়ে দেন এই বাজেটে করের কাঠামোয় কোনও পরিবর্তন করা হচ্ছে না। তবে আয়করে ছাড় দেওয়া হচ্ছে পেনশনভোগীদের, জাতীয় পেনশন প্রকল্পে করে ছাড়ের হার বেড়ে হল ১৪ শতাংশ।
আয়কর রিটার্নের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত সময় দেওয়ার ঘোষণা করে তিনি বলেন, “এবার থেকে আয়করদাতারা ভুল সংশোধনের সুযোগ পাবেন। যদি করের হিসাবে কোনও ভুল থাকে, তবে যে বছরে সেই হিসাব করা হয়েছে, তার পরবর্তী দুই বছরের মধ্যে সংশোধন করে দাখিল করা যাবে।”
একইসঙ্গে অর্থমন্ত্রী বলেন, “কোঅপারেটিভ সোসাইটিগুলির জন্য করে ছাড় ঘোষণা করা হচ্ছে। কর্পোরেট ও কো-অপারেটিভ সংস্থাগুলির মধ্য়ে ভারসাম্য বজায় রাখতে কো-অপারেটিভ সোসাইটির উপর থেকে কর কমিয়ে ১৫ শতাংশ করা হচ্ছে। কো-অপারেটিভের উপর সারচার্জও কমিয়ে ৭ শতাংশ করা হচ্ছে।”
অর্থমন্ত্রী জানান, কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকারি কর্মীদের সুবিধা ও সুরক্ষা নিশ্চিত করতে, রাজ্য সরকারি কর্মীদের করের ছাড় ১০ শতাংশ থেকে বৃদ্ধি করে ১৪ শতাংশ করা হবে। ন্যাশনাল পেনশন স্কিমের অধীনে এতদিন কেন্দ্রীয় সরকারের কর্মীরা ১৪ শতাংশ ও রাজ্য সরকারি কর্মীরা ১০ শতাংশ হারে করে ছাড় পেতেন। এবার কেন্দ্র-রাজ্য সরকারি কর্মীদের মধ্যে সামঞ্জস্য রাখতেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে।.
মূলধন বিনিয়োগ ও খরচের ক্ষেত্রে বড় সিদ্ধান্ত ঘোষণা করে কেন্দ্র। অর্থমন্ত্রী জানান, ভার্চুয়াল ডিজিটাল সম্পত্তির উপর কর বসতে চলেছে। ভার্চুয়াল সম্পত্তি লেনদেনের মাধ্যমে যে আয় হবে, তার উপর ৩০ শতাংশ কর বসতে চলেছে। এক্ষেত্রে কেউ যদি অন্য কাউকে ভার্চুয়াল ডিজিটাল সম্পত্তি উপহার দেন, তবে উপহার গ্রহণকারীকে কর প্রদান করতে হবে। সম্পত্তি অধিগ্রহণের খরচ ছাড়া অন্য কোনও ক্ষেত্রে করে ছাড় দেওয়া হবে না এবং লেনদেন কোনও ক্ষতি হলে, তা এগিয়ে নিয়ে যেতে দেওয়া হবে না। একটি নির্দিষ্ট সীমার উপরে ক্রিপ্টো সম্পত্তি লেনদেনের জন্য যে অর্থ খরচ করা হবে, তার উপরও ১ শতাংশ হারে টিডিএস বসবে।
সাধারণ করের কাঠামোয় কোনও পরিবর্তন না হলেও, বিশেষভাবে সক্ষম ব্যক্তিদের জন্য এক গুরুত্বপূর্ণ ঘোষণা করা হয়েছে কেন্দ্রের তরফে। এদিন অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন বলেন, “অনেক সময় বিশেষভাবে সক্ষম ব্যক্তিদের মা-বাবা বা আইনত অভিভাবকরা বীমা গ্রহণ করেন। বর্তমান আইন অনুযায়ী, অভিভাবকের মৃত্যুর পরই ওই বিশেষভাবে চাহিদা সম্পন্ন ব্যক্তি বীমার অর্থ পান। তবে এমন পরিস্থিতিও হতে পারে যেখানে অভিভাবক জীবিত থাকাকালীনই বীমা অর্থের প্রয়োজন পড়তে পারে। এক্ষেত্রে অভিভাবকের বয়স যদি ৬০ বছর পার করে যায়, তবে সেক্ষেত্রে বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন বা বিশেষভাবে সক্ষম ব্যক্তিরা ওই অর্থ পেতে পারেন।”