নয়া দিল্লি: ‘রেল আপনার সম্পত্তি…’, ভারতে ট্রেনে ভ্রমণ করতে গেলে এই ঘোষণাটি শোনা যায়। এর মানে আপনি রেলের মালিক, তা নয়। রেলকে নিজের সম্পত্তি হিসেবে বিবেচনা করে যাত্রীরা সেই সম্পদ সামলে রাখেন, সেই বিষয়ে সচেতন করতেই এই ঘোষণা করা হয়। ভারতীয় রেল এবং তার সমস্ত সম্পত্তির মালিক ভারত সরকার। তবে, ভারতীয় রেলের ইতিহাসে এমনও এক ব্যক্তি আছেন, যিনি একবার একটি গোটা ট্রেনের ব্যক্তিগত মালিক হয়েছিলেন। না কোনও জালিয়াতি করে নয় বা এটা কোনও ভুয়ো ঘটনাও নয়। আইনি পথেই একটা গোটা ট্রেনের মালিক হয়েছিলেন তিনি। কী ভাবছেন? ওই ব্যক্তি নিশ্চয় মুকেশ অম্বানী, গৌতম আদানি বা অন্য কোনও বড় শিল্পপতি?
ভুল করছেন। দেশের এই ধনকুবেরদের কার আছে ব্যক্তিগত জেটবিমান, কারও ব্যক্তিগত জাহাজ, কোটি টাকা দামের গাড়ি। আদানি গ্রুপের হাতে কয়লা বইবার জন্য কিছু মালগাড়ি আছে বটে। তবে, কারও মালিকানায় ব্যক্তিগত যাত্রীবাহী ট্রেন নেই। ভারতে একটি গোটা ট্রেনের মালিক হয়েছিলেন একমাত্র যে ব্যক্তি, তিনি এক সাধারণ কৃষক। নাম, সম্পুরন সিং। পঞ্জাবের লুধিয়ানার কাতানা গ্রামের বাসিন্দা এই কৃষক, ২০১৭ সালে আচমকা দিল্লি থেকে অমৃতসরগামী, দিল্লি-অমৃতসর স্বর্ণ শতাব্দী এক্সপ্রেস ট্রেনের মালিক হয়ে গিয়েছিলেন। কীভাবে ঘটেছিল এই আশ্চর্যজনক ঘটনা? আসুন জেনে নেওয়া যাক।
২০০৭ সালে, ভারতীয় রেলের পক্ষ থেকে লুধিয়ানা-চণ্ডীগড় রেললাইন নির্মাণের জন্য কৃষকদের জমি কেনা হয়েছিল। যে যে জমি রেলের প্রয়োজন ছিল, তর মধ্যে সম্পূর্ণ সিং-এর জমিও ছিল। একর প্রতি ২৫ লাখ টাকা দরে ক্ষতিপূরণ দিয়ে সম্পূরণের জমি অধিগ্রহণ করেছিল ভারতীয় রেল। সবকিছু ঠিকঠাকই ছিল। কিন্তু কিছু দিন পরই সম্পূর্ণ সিং জানতে পেরেছিলেন, তাঁদের গ্রামেই তাঁর জমির সমান পরিমাণ আরেকটি জমি, রেলওয়ে অধিগ্রহণ করেছে প্রতি একর ৭১ লক্ষ টাকা হিসেবে। অর্থাৎ, দুটি জমি দুই রকমের দরে কিনেছে রেল। রেলের এই দ্বৈত মানদণ্ড স্থির করার বিরুদ্ধে আদালতের দ্বারস্থ হন সম্পূর্ণ।
শুনানির পর, আদালত ভারতীয় রেলওয়েকে সম্পূর্ণকে দেওয়া ক্ষতিপূরণের পরিমাণ ২৫ লক্ষ টাকা থেকে ৫০ লক্ষ টাকা করার নির্দেশ দেয়। পরে ক্ষতিপূরণের পরিমাণ আরও বাড়িয়ে ১.৪৭ কোটি টাকা করার নির্দেশ দেওয়া হয়। ২০১৫ সালের মধ্যে সম্পূর্ণ সিংকে ক্ষতিপূরণের এই টাকাটা দেওয়ার জন্য উত্তর রেলকে নির্দেশ দিয়েছিল আদালত। কিন্তু, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ভারতীয় রেল মাত্র ৪২ লাখ টাকা পরিশোধ করেছিল। তখনও বাকি ছিল ১.০৫ কোটি টাকা। ২০১৭ সালের মধ্যেও ওি টাকাটা শোধ করতে না পারায়, ওই বছর জেলা ও দায়রা আদালতরে বিচারক জসপাল ভার্মা, লুধিয়ানা স্টেশনে ট্রেনটি বাজেয়াপ্ত করার নির্দেশ দিয়েছিলেন। স্টেশন মাস্টারের কার্যালয়ও বাজেয়াপ্ত করার নির্দেশ দেওয়া হয়।
আদালতের এই আদেশের পর, কৃষক সম্পূর্ন সিং লুধিয়ানা স্টেশনে গিয়েছিলেন। অমৃতসর স্বর্ণ শতাব্দী এক্সপ্রেস সেখানে আসতেই আদালতের আদেশনামা দেখিয়ে ট্রেনটি বাজেয়াপ্ত করেন এবং সেই ট্রেনের মালিক হন। এই ভাবেই ভারতের ইতিহাসে তিনি একমাত্র ব্যক্তি হিসেবে একটি যাত্রীবাহী ট্রেনের মালিক হয়েছিলেন। তবে কিছুদিন পরই আদালতে গিয়ে ট্রেনটিকে খালাস করেছিলেন ভারতীয় রেলের কর্তারা। বিষয়টি এখনও আদালতে বিচারাধীন বলে জানা গিয়েছে।
আরও খবর পড়তে ডাউনলোড করুন Tv9 বাংলা অ্যাপ (Android/ iOs)