মুম্বই: ফের লাইমলাইটে এশিয়ার ধনীতম ব্যক্তি মুকেশ অম্বানির ছোট ভাই অনিল অম্বানি। একসময় অনিল ছিলেন ১.৮৩ লক্ষ কোটি টাকারও বেশি সম্পদের মালিক, বিশ্বের ষষ্ঠ ধনীতন ব্যক্তি। সেই সময় মিডিয়ার সব মনোযোগ ছিল তাঁর উপর। তারপর, ২০১০ থেকে তাঁর দুর্ভাগ্যজনক পতন। সেই থেকে লাইমলাইট থেকে প্রায় অদৃশ্যই হয়ে গিয়েছিলেন তিনি। ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে ব্রিটেনের এক আদালতের সামনে নিজেকে দেউলিয়া বলে ঘোষণা করেছিলেন তিনি। কিন্তু, ২০২৪-এ এসে ফের উত্থান ঘটছে তাঁর। ঘটছে আশ্চর্যজন কামব্যাক। মিডিয়ার স্পটলাইট ফের অনিল অম্বানির উপর। কারণ তাঁর সংস্থাগুলির ভাগ্য ফের ঊর্ধ্বমুখী। রিলায়েন্স পাওয়ার, রিলায়েন্স ইনফ্রা, রিলায়েন্স রিটেইল – একের পর এক সংস্থার শেয়ারের দর ফের বাড়ছে। তিন-তিনটি ব্যাঙ্কের ঋণ শোধ করে দিয়েছেন অনিল অম্বানি।
গত এক বছরে অনিল অম্বানির রিলায়েন্স পাওয়ারের শেয়ারের দর ১২০ শতাংশ বেড়েছে। গত সপ্তাহের শেষ দুদিনে, শেয়ার বাজারে রিলায়েন্স পাওয়ারের দর ৫ শতাংশের বেশি বেড়েছে। বম্বে স্টক এক্সচেঞ্জের তথ্য অনুসারে, ১৮ মার্চ রিলায়েন্স পাওয়ারের শেয়ার ২৩.২৩ টাকায় বিক্রি হয়েছে। ২০০৮ সালে ভারতের বৃহত্তম আইপিও হিসেবে আইপিও লঞ্চ করেছিল রিলায়েন্স পাওয়ার। ৬০ সেকেন্ডেরও কম সময়ে সাবস্ক্রাইব হয়েছিল। প্রায় ২৬০.৭৮ টাকায় বিক্রি হয়েছিল। তারপর দামের ব্যাপক পতন ঘটে। ২০২০ সালের ২৭ মার্চ, সর্বোচ্চ মূল্য থেকে ৯৯ শতাংশের বেশি কমে রিলায়েন্স পাওয়ারের দর ১.১৩ টাকায় নেমে এসেছিল।
রিলায়েন্স পাওযারের সাম্প্রতিক লাভের মনে করা হচ্ছে রিলায়েন্স পাওয়ারের সাম্প্রতির ফাইলিং। সংস্থা জানিয়েছে, তারা এবং রিলায়েন্স ইনফ্রাস্ট্রাকচার আইসিআইসিআই ব্যাঙ্কের ঋণ শোধ করে দিয়েছে। ১৪ মার্চ আইসিআইসিআই ব্যাঙ্ক লিমিটেডের সঙ্গে ঋণ নিষ্পত্তির চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছে বলে জানিয়েছে অনিল অম্বানির সংস্থা। একই কারণে রিলায়েন্স রিটেইলের শেয়ারের দামও উল্লেখযোগ্য পরিমণে বেড়েছে। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, রিলায়েন্স পাওয়ার এর আগে অ্যাক্সিস ব্যাঙ্ক এবং ডিবিএস ব্যাঙ্কের পাওনাও শোধ করেছিল। এরপর, অনিল অম্বানি জেসি ফ্লাওয়ারস অ্যাসেট রিকনস্ট্রাকশন সংস্থার সঙ্গে ২১০০ কোটি টাকার ঋণ নিষ্পত্তির চুক্তি করার পরিকল্পনা করছেন বলে শোনা যাচ্ছে।
গত জানুয়ারিতে এই সংস্থার সঙ্গে অনিল অম্বানির রিলায়েন্স ইনফ্রাস্ট্রাকচারের একটি চুক্তি হয়েছিল। যার ফলে, জেসি ফ্লাওয়ার্স, ২০২৪ সালের মার্চের শেষ পর্যন্ত অনিল অম্বানির সংস্থার বিরুদ্ধে কোনও আইনি ব্যবস্থা নেবে না। তার আগেই ঋণ মিটিয়ে দিতে পারেন অনিল অম্বানি। অনিল অম্বানির সংস্থাগুলির মূল ঋণদাতা ছিল ইয়েস ব্যাঙ্ক। ইয়েস ব্যাঙ্ক তাদের ৪৮,০০০ কোটি টাকার ঋণ, জেসি ফ্লাওয়ার্সে স্থানান্তর করেছিল। এর মধ্যে রিলায়েন্স ইনফ্রাস্ট্রাকচার এবং রিলায়েন্স পাওয়ারকে দেওয়া ঋণও ছিল। ইয়েস ব্যাঙ্কের অনুমান, রিলায়েন্স পাওয়ার চলতি অর্থবর্ষের শেষের মধ্যেই সম্পূর্ণ ঋণমুক্ত হয়ে যাবে। বাকি থাকতে পারে শুধু আইডিবিআই ব্যাঙ্কের ঋণ।
রিলায়েন্স ইনফ্রা সংস্থা বিদ্যুৎ, রাস্তা, মেট্রো রেল এবং অন্যান্য পরিকাঠামো খাতের জন্য ইঞ্জিনিয়ারিং এবং নির্মাণ পরিষেবা ব্যবসায় নিযুক্ত। কেন্দ্রীয় সরকারের প্রতিরক্ষা খাত এবং পরিকাঠামোগত প্রকল্পের উন্নয়ন, পরিচালনা এবং রক্ষণাবেক্ষণে নিযুক্ত রয়েছে সংস্থাটি। মুম্বই মেট্রো লাইন ওয়ান প্রকল্পও এই সংস্থার হাতে রয়েছে। গত সোমবার (১৮ মার্চ) রিলায়েন্স ইনফ্রার শেয়ারের দাম ২৬০.৮০ টাকায় পৌঁছেছে। যা, গত পাঁচ বছরের মধ্য়ে সর্বোচ্চ। আইসিআইসিআই ব্যাঙ্কের সঙ্গে নিষ্পত্তি চুক্তি স্বাক্ষরের কারণে মাত্র তিনদিনে তাদের শেয়ারের দর ৪১ শতাংশ বেড়েছে। আর তাই, ২০২০-তে দেউলিয়া হওয়া অনিল অম্বানি ফের ফিরে আসছেন সংবাদ শিরোনামে, প্রচারের আলোকবৃত্তে।