মুম্বই: শুধু দেশেরই সবথেকে ধনী ব্যক্তি নন, বিশ্বের সর্বাধিক ধনী ১০ ব্যক্তির তালিকাতেও নাম রয়েছে অম্বানী পরিবারের (Ambani Family)। কয়েক হাজার কোটি টাকার সম্পত্তির মালিক মুকেশ অম্বানী (Mukesh Ambani) নিজের পরিশ্রমে রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজ(Reliance Industries)-কে আজকের জায়গায় নিয়ে গেলেও ধীরে ধীরে পরবর্তী প্রজন্ম অর্থাৎ মুকেশ অম্বানীর ছেলে-মেয়েও ব্য়বসার ভার গ্রহণ করেছে। এদিকে, একের পর এক বাণিজ্যের সাম্রাজ্যের পরিবারে ফাটল ধরায় অম্বানী পরিবার ও তাদের ব্যবসা বাণিজ্যের ভবিষ্যত কী হবে, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।
তবে কাঁচা খিলাড়ি নন মুকেশ অম্বানী। জানা গিয়েছে, তিনি বহু বছর ধরেই বাকি কোটিপতি পরিবারগুলির উপর নজর রেখেছেন, যারা তাদের বিপুল সাম্রাজ্য়কে পরবর্তী প্রজন্মের হাতে তুলে দিয়েছেন। ওয়াল্টন থেকে শুরু করে কোচ, বিশ্বের ধনীতম পরিবারগুলি কীভাবে পরবর্তী প্রজন্মের হাতে তাদের সাম্রাজ্যকে হস্তান্তর করেছেন এবং কীভাবে তাতে আরও প্রতিপত্তি এসেছে, তার নিয়ে রীতিমতো পড়াশোনা করেছেন মুকেশ অম্বানী।
সম্পত্তি নিয়ে নিজের পরিবারেও ভাঙন দেখেই মুকেশ অম্বানীর পরিকল্পনা, নিজের বিপুল সাম্রাজ্য় তিন ছেলেমেয়ের মধ্যে এমনভাবে ভাগ করা, যাতে পরিবার একত্রিতই থাকে। বিশ্বের সবথেকে বড় বিপনন সংস্থা ওয়ালমার্টের মালিক ওয়ালটন পরিবার যেভাবে নিজেদের ব্যবসাকে পরবর্তী প্রজন্মের হাতে তুলে দিয়েছে, সেই পরিকল্পনা অনুসরণ করেই এগোতে চাইছেন মুকেশ অম্বানীও। জানা গিয়েছে, মুকেশ অম্বানী নিজের পরিবারের যাবতীয় সম্পত্তিকে “ট্রাস্ট” কাঠামোয় পরিবর্তিত করার পরিকল্পনা করছেন, যেখান থেকে মুম্বইয়ের অবস্থিত রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজ নিয়ন্ত্রিত হবে।
নতুন এই বাণিজ্যিক কাঠামোয় মুকেশ অম্বানী, তাঁর স্ত্রী নীতা অম্বানী ও তিন ছেলে মেয়ে- ইশা, আনন্দ ও অনন্ত রিলায়েন্সের বোর্ডের সদস্য হবেন। এছাড়াও দীর্ঘদিনের সঙ্গী বিভিন্ন পরামর্শদাতা ও ম্যানেজমেন্টের অংশও থাকবেন তাঁরা। তবে পরিবারের সদস্যরা নয়, বাইরে থেকে নিয়োগ করা পেশাদার কর্মীরাই দেশের সবথেকে বড় ও প্রভাবশালী সংস্থার নিত্যনৈমিত্তিক কাজ সামলাবেন বলে জানা গিয়েছে।
একা অম্বানী নন, একই পরিকল্পনা রয়েছে এশিয়া বিভিন্ন কোটিপতি পরিবারেরও। সম্পত্তি তৈরি থেকে পরবর্তী প্রজন্মের হাতে তা বৃদ্ধির জন্য তুলে দেওয়ার ক্ষেত্রে পরিবারকে সরাসরি ব্যবসায় জড়াতে চাইছেন না বড় বড় শিল্পপতিরা। তবে এই পরিবর্তনে বেশ ঝুঁকিও রয়েছে বলেই মনে করছেন বাণিজ্যিক বিশেষজ্ঞরা। কারণ, ক্ষমতা হস্তান্তরের ক্ষেত্রে সামান্য ভুলচুকও গোটা বাণিজ্যিক সাম্রাজ্যকেই ডুবিয়ে দিতে পারে। দেশ তথা বিশ্বের অন্যতম ধনী পরিবার হওয়ায় অম্বানীদের সিদ্ধান্তের উপর নজর থাকবে গোটা বিশ্বেরই।
অম্বানী পরিবারের তরফে তাদের ভবিষ্যত পরিকল্পনা নিয়ে মুখ না খোলা হলেও, ধীরে ধীরে বাণিজ্যিক ময়দানে মুকেশ অম্বানীর বদলে তাঁর ছেলে মেয়েদেরই দেখা যাচ্ছে। আকাশ ও ইশা অম্বানী বর্তমানে রিলায়েন্স সংস্থায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন।
জনসন বা হেরমেস ফ্য়াশনের মতো বড় বাণিজ্য়িক সংস্থাগুলি তাদের সন্তান ও পরিবারকে সংযুক্ত রাখলেও, বিশ্বের ধনীতম পরিবার ওয়ালটন কেবল সংস্থার বোর্ডের সদস্যপদই নিজেদের হাতে রেখেছেন। ওয়ালটন পরিবার বর্তমানে ওয়ালমার্ট সংস্থার ৪৭ শতাংশ নিয়ন্ত্রণই পরিবারের হাতে রেখেছে, তাও ট্রাস্ট কাঠামোর অধীনে। এর অন্য়তম আরেকটি বড় সুবিধা হল, এর ফলে সদস্যরা ব্যবসা সামলানোর বদলে, তা কীভাবে আরও বাড়ানো যায়, তার দিকে বেশি নজর দিতে পারেন।
আরও পড়ুন: বিদ্যুৎ খাতে কয়লার সরবরাহ ২৩ শতাংশ বাড়িয়ে করা হল ২৯.১৭ কোটি টন, এই লক্ষ্যকে পাখির চোখ করল CIL