অযোধ্যা: চারিদিকে শুধু একটি বিষয় নিয়েই চর্চা, রাম মন্দির(Ram Mandir)। চলতি মাসের ২২ জানুয়ারি উদ্বোধন হতে চলেছে রাম মন্দিরের। ওই দিন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী (PM Narendra Modi) রামলালার মূর্তি মন্দিরের গর্ভগৃহে স্থাপন করবেন। এই রাম মন্দিরকে ঘিরে ভক্তদের মধ্যে যেমন উন্মাদনা রয়েছে, তেমনই রাজ্যের অর্থনীতিও বদলে যাচ্ছে শ্রী রামের দৌলতে। কীভাবে জানেন?
অযোধ্যা। রামের জন্মভূমি মনে করা হয় এই পবিত্র মাটিকে। সেই অযোধ্যাতেই আদালতের অনুমতি মেলার পর তৈরি হয়েছে বিশালাকার রাম মন্দির। এই মন্দিরকে ঘিরেই চলছে বিশাল কর্মযজ্ঞ। শুধু মন্দিরের আশেপাশে তৈরি হওয়া দোকানপাট নয়, বরং শহরের প্রতিটা কোণই লাভবান হবে রাম মন্দির উদ্বোধনের পর থেকে। বদলে গিয়েছে রিয়েল এস্টেটের চিত্রও। হু হু করে চড়ছে অযোধ্যায় জমির দাম। বিগত কয়েক বছরের তুলনায় রাম মন্দির তৈরির পর অযোধ্যায় জমির দাম কমপক্ষে চার গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে।
সাধারণভাবে কোনও দেশ বা রাজ্যের রাজধানী শহরই সবচেয়ে বড় হয়। সবথেকে বেশি মানুষ সেখানে থাকেন। সেই কারণেই রাজধানীকে কেন্দ্র করেই আর্থিক কর্মকাণ্ড চলে। কিন্তু ব্যতিক্রম হয়ে উঠেছে উত্তর প্রদেশ। রাজ্যের সবচেয়ে বড় শহর লখনউ, সেটিই রাজধানী। ৪০ লাখ জনগণের বসবাস সেখানে। দ্বিতীয় বড় শহর কানপুর, সেখানে থাকেন ৩২ লাখ মানুষ। সেই তুলনায় অযোধ্যা খুবই ছোট একটা শহর। জনসংখ্যা ৮০ হাজারেরও কম। তবে রামমন্দির হওয়ার সুবাদে এই ছোট্ট শহরটাই এখন যাবতীয় লগ্নির গন্তব্য। সরকারি তো বটেই। বেসরকারিও।
সম্প্রতিই একটি ট্রাভেল সংস্থার তরফে জানানো হয়েছিল, পাহাড় ও জঙ্গলের পর দেশে জনপ্রিয় টুরিস্ট পর্যটন কেন্দ্র বা ডেস্টিনেশনের তালিকায় উঠে আসছে ধর্মীয় স্থানগুলি। আর একটা চমকে দেওয়ার মতো বিষয় হল, ধর্মীয় স্থানে যাঁরা বেড়াতে যাচ্ছেন, তাঁদের ৩৫ শতাংশের বয়সই ২০ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে। মানে প্রবীণরাই শুধু ধর্মীয় স্থানে যাচ্ছেন না, নবীনরাও এখন মন্দিরমুখী।
রামমন্দির তৈরি হয়ে গেলে অযোধ্যা শুধু ভারত নয়. সারা পৃথিবীর ধর্মীয় পর্যটন মানচিত্রে চলে আসবে বলে মনে করা হচ্ছে। ফলে লাভের আশায় বেসরকারি সংস্থাগুলি বিপুল লগ্নি করছে। ফুড চেন থেকে মুদি সামগ্রী, ভোগপণ্য থেকে কনজিউমার গুডস, এফএমসিজি পণ্যের বিক্রি ও উৎপাদন বাড়ছে অযোধ্যায়। যাঁরা এইসব ব্যবসা করেন, তারা অযোধ্যায় কারখানা খুলতে চাইছেন।সেই সুযোগ না পেলে মন্দিরনগরীতে ডিস্ট্রিবিউশনকে আরও শক্ত করতে টাকা ঢালছেন।
পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০২৩ সালে বাইরে থেকে অযোধ্যায় গিয়েছেন প্রায় ২ কোটি মানুষ। মন্দির তৈরি হওয়ার পর এই বছর তা বেড়ে হবে প্রায় ১০ কোটি। অর্থাৎ ৫ গুণ বেড়ে যাবে পর্যটকের সংখ্যা। পর্যটক এলে ব্যবসাও বাড়বে। ফলে রাস্তার ধারে ধারে
তৈরি হচ্ছে নানারকম আউটলেট।
জানা গিয়েছে, শুধু ব্যবসাই নয়, অযোধ্যায় স্থায়ী বাসিন্দার সংখ্যাও কয়েক গুণ বাড়বে। রাম-মন্দির নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের রায়ের আগে অযোধ্যায় ১ কাঠা জমির দাম ছিল খুব বেশি হলে ২ লাখ টাকা। এখন ১ কাঠা জমির দাম বেড়ে হয়েছে ১ কোটি
টাকা। আর মন্দিরের কাছাকাছি হলে ২ কোটি টাকায় হাতবদল হচ্ছে ১ কাঠা জমি।
অযোধ্যায় তৈরি হচ্ছে প্রায় ১২টা বড় হোটেল। হোটেল-হসপিটালিটি সেক্টরেই বিনিয়োগ হচ্ছে প্রায় ৭ হাজার কোটি টাকা। পাশাপাশি সরকারি লগ্নিও আসছে ভরপুর। উত্তরপ্রদেশ সরকার রাস্তা তৈরি এবং শহর সংস্কারের পিছনে খরচ করছে কয়েকশো কোটি টাকা।
মন্দির উদ্বোধনের দিনই প্রধানমন্ত্রী অযোধ্যার জন্য ৩২ হাজার কোটি টাকার ট্যুরিজম প্যাকেজ ঘোষণা করতে পারেন। অযোধ্যার মূল শহরের পাশে টাউনশিপ তৈরি করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। ১২০০ একর জমিতে এই নতুন টাউনশিপ তৈরির জন্য খরচ হবে ২ হাজার কোটি টাকা। মনে করা হচ্ছে আগামী ১০ বছরের মধ্যে প্রতি বছর ১০ কোটি মানুষ অযোধ্যায় আসবেন। বছরে ব্যবসার অঙ্ক ছাড়িয়ে যাবে ১ লক্ষ কোটি টাকা।