কলকাতা: ঝুঁকি নিতে ভয় পায় বলেই কী বাঙালি ব্যবসা থেকে বরাবর মুখ ফিরিয়ে থেকেছে? সরকারি চাকরির নিরাপত্তাকে আঁকড়ে ধরতে চায়? এই প্রশ্ন প্রায়শই ওঠে নানা মহল থেকে। কিন্তু, সরকারি সমীক্ষা বলছে সম্পূর্ণ অন্য কথা। ব্যবসা করার উচ্চাকাঙ্খার নিরিখে গোটা ভারতের মধ্যে এক নম্বরে রয়ছে বাংলা। বাংলার আগ্রহ, প্রচেষ্টা, লক্ষ্য অন্য সমস্ত রাজ্যের তুলনায় বেশি। এ কথা কিন্তু বলছে না পশ্চিমবঙ্গ সরকার। বলছে খোদ মোদী সরকার। ‘বিজনেস রিফর্ম অ্যাকশান প্ল্যান ২০২০’ কতটা বাস্তবায়িত হয়েছে, তা জরিপ করতে সমীক্ষা চালায় কেন্দ্রীয় সরকার। তখনই তৈরি করে ফেলা হয় ‘ইজ অফ ডুইং বিজনেস’ তালিকা। ওই তালিকায় ব্যবসার উচ্চাকাঙ্খা শীর্ষক তালিকায় একেবারে ফার্স্ট বয় হয়েছে পশ্চিমবঙ্গ। অর্থাত্ বাঙালি মানেই ব্যবসাকে দূরছাই করা, এই ধারণা কিন্তু ঠিক নয় বলেই প্রমাণ মিলল। বা হতে পারে, আগে ব্যবসা নিয়ে একটা নাকউঁচু মনোভাব থাকলেও এখন সেসব ঝেড়ে ফেলে ব্যবসাকেই আঁকড়ে ধরতে চাইছে বাঙালির ইয়ং ইজ। চাকরির তুলনায় ব্যবসাতেই মোক্ষলাভ। অবশেষে কী বাঙালির বোধোদয় হল?
এদিকে পরিসংখ্য়ান বলছে রাজ্যে বড় কারখানা ১০ হাজারের কম। ছোট ও মাঝারি শিল্প ইউনিট তুলনায় বেশি। সোজা কথায় রাজ্যে ছোট ও মাঝারি শিল্প তুলনায় বেশি। স্টার্ট আপেও পিছনে সারিতে রাজ্য। ব্যবসা করার জন্য উচ্চকাঙ্খী হতেই হয়। এ কথা বারেবারেই বলেন সকলে। সেদিক থেকেও কি বাঙালি পিছিয়ে? বাঙালির ইতিহাস কিন্তু সেকথা বলছে না। ইতিহাস বলছে, বাঙালি উচ্চাকাঙ্খী, ঝুঁকি নিতে কখনই পিছপা হয়নি। ঝুঁকি নিয়েই ঝাঁপিয়েছে স্বাধীনতা আন্দোলনে। বাংলা থেকেই সশস্ত্র অভ্যুত্থান।
দুর্গম পাহাড়েও তো রয়েছে বিরাট ঝুঁকি। সেখানেও বাঙালিদেরই রমরমা। গোটা দেশে পর্বতারোহনে যে রেকর্ড হচ্ছে, তার বড় অংশ বাঙালিদের হাত ধরে। তা হলে বাঙালির বিরুদ্ধে ঝুঁকি নিতে ভয় পাওয়ার অভিযোগ এত প্রবলভাবে ওঠে কেন? ওঠে কারণ, ব্যবসা এবং বিনিয়োগের ব্যাপারে ঝুঁকি নিতে বাঙালির বরাবরের অনীহা। এখানেও বেশ কিছু ব্যতিক্রম আছে, কিন্তু সেগুলো ব্যতিক্রমই। এমনকি লগ্নির বাজারেও সেটা বড় বেশি করে চোখে পড়ে। পরিসংখ্য়ান বলছে শেয়ারে লগ্নি করছে এ রাজ্যের মাত্র ৩ শতাংশ বাসিন্দা। মিউচুয়াল ফান্ডে এ রাজ্যের ভাগ মাত্র ৫.২ শতাংশ। আবার এলআইসি, অর্থাত্ বাঙালি যেখানে লগ্নি করে ভরসা পায় সেখানে রয়েছে অন্য ছবি। এলআইসি-র পলিসিতে প্রথম চারে বাংলা। দিল্লি, তামিলনাড়ু, মহারাষ্ট্রের পরেই রয়েছে পশ্চিমবঙ্গ।