কলকাতা: বাঙালি মানেই আরামপ্রিয়। এই ধারণা দীর্ঘদিনের। অনেকেই আবার বলেন, বাঙালির দ্বারা ব্যবসা হয় না। কিন্তু এটা কি সত্যি? ব্য়বসা থেকে বাঙালি মুখ ফিরিয়েছে বলেই কি সরকারি চাকরির নিশ্চিত নিরাপত্তাকে আঁকড়ে ধরে রাখতে চায়? আসলে ব্যবসার জন্য প্রয়োজন উচ্চাকাক্ষ্মার। আর বাঙালির নাকি এতেই ঘাটতি। কিন্তু ইতিহাস তো তা বলছে না। একাধিক উদাহরণ রয়েছে সফল বাঙালি ব্যবসায়ীর। বর্তমানে হয়তো ব্যবসা-বাণিজ্য়ের দিক থেকে কিছুটা পিছিয়ে পড়েছে বঙ্গ সন্তানরা। তাই এই দুর্নাম। কিন্তু সম্পূর্ণ ভিন্ন চিত্র এলআইসির ক্ষেত্রে। এলআইসির বিমা করানোর দিক থেকে চতুর্থ স্থানেই রয়েছে পশ্চিমবঙ্গ। তাহলে এই তারতম্য কীসের?
রাজ্যে বর্তমানে বড় কারখানার সংখ্য়া ১০ হাজারেরও কম। তুলনায় ছোট ও মাঝারি শিল্প ইউনিট বেশি। তবে স্টার্ট আপেও পিছনে সারিতেই রয়েছে রাজ্য। ব্যবসা ও বিনিয়োগের ক্ষেত্রে ঝুঁকি নিতে বাঙালি বরাবরই অনীহা প্রকাশ করেছে। তবে এখানেও ব্যতিক্রম রয়েছে, কিন্তু সেগুলি তো ব্যতিক্রমই। যদি শেয়ার বাজারের দিকেই দেখা যায়, সেখানেও চোখে পড়ে বাঙালির বিনিয়োগে অনীহা। পরিসংখ্যান বলছে, শেয়ারে লগ্নি করেন এ রাজ্যের মাত্র ৩ শতাংশ বাসিন্দা। মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগ করেন মাত্র ৫.২ শতাংশ বাঙালি।
কিন্তু সম্পূর্ণ ভিন্ন চিত্র এলআইসির ক্ষেত্রে। বিনিয়োগের ক্ষেত্রে সবসময়ই সবথেকে সুরক্ষিত অপশন বলে মনে করা হয় এলআইসি-কে। সেই কারণেই হয়তো এলআইসির উপরে চোখ বন্ধ করে ভরসা বাঙালির। এলআইসি-র বিমা করার দিক থেকে প্রথম চারটি রাজ্যের তালিকাতেই রয়েছে পশ্চিমবঙ্গ। রাজ্যের নিরিখে এলআইসির বিমা করানোর দিক থেকে প্রথম স্থানেই রয়েছে দিল্লি, এরপরে রয়েছে তামিলনাড়ু, মহারাষ্ট্র। চতুর্খ স্থানে রয়েছে পশ্চিমবঙ্গ।
দুর্গম পাহাড়ের অভিযানে যেখানে বিরাট ঝুঁকি, সেখানে বাঙালি পর্বতারোহীদের সংখ্যা অনেক বেশি। তাহলে ব্যবসা বা বিনিয়োগে ঝুঁকি নিতে কেন এত ভয়? বহুদিন অবধি শেয়ার বাজারের সঙ্গে ঘোড়ার মাঠ কিংবা জুয়ার ঠেককে একই গোত্রে ধরা হত। ফলে ব্যাঙ্ক বা পোস্ট অফিস ছেড়ে বাঙালি কখনওই বিনিয়োগের অনিশ্চয়তার দুনিয়ায় পা বাড়াতে চায়নি।
অথচ, এমনটা তো হওয়ার কথা ছিল না। ব্রিটিশ আমলের শুরুর দিকে চুটিয়ে ব্যবসা করেছে বাঙালি। রফতানি থেকে ব্যাঙ্ক – সবটাই বাঙালির হাত ধরে হয়েছিল। ব্যবসার মূলকেন্দ্র ছিল কলকাতাই। এই শহরেই তৈরি হয়েছিল হয়েছিল দেশের তথা এশিয়ার প্রথম শেয়ার বাজার। কিন্তু বাঙালি সেখানেও অংশগ্রহণ করেনি। ১৯১১ সালে কলকাতা থেকে দিল্লিতে রাজধানী সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। রাজধানী তকমা সরতেই বিনিয়োগেও খরা দেখা যায়।