Boroline: ৯৫ বছরে একটুও বদলায়নি, কী আছে বাঙালির ভরসা বোরোলিনের ফর্মুলায়, জানেন?
Magic Cream, Boroline Antiseptic Cream: ১৯২৯ সাল, সেই সময় ভারতের নিজের পণ্য বলতে খুব বেশি কিছু ছিল না। এমনকি হাত, পা কেটে গেলে বা শীতকালে পা ফাটলে সেই ক্রিমও আসত সুদূর বিলেত থেকে। আর সেই জায়গা থেকেই কলকাতার ব্যবসায়ী গৌরমোহন দত্ত শুরু করেন জিডি ফার্মাসিউটিক্যাল।

‘বঙ্গ জীবনের অঙ্গ’ কী জানেন? অথবা ‘জীবনের ওঠা পড়া যেন গায়ে না লাগে’, তার জন্য কী ভরসা জানেন? আচ্ছা এসব ছাড়ুন। বলুন তো, শীতকালে পা ফাটে আপনার, কিম্বা ঠোঁট? আর সেই সব ফাটা মুহূর্তে জোড়া লাগায় এক ম্যাজিক ক্রিম। বাঙালি মাত্রেই চেনে সেই ক্রিমকে। ‘সুরভিত অ্যান্টি সেপটিক ক্রিম বোরোলিন…’, এই গান তো শুনেছেন আপনি। কিন্তু এই ম্যাজিক ক্রিম বাঙালি কীভাবে পেল? সেই গল্প জানেন কি?
১৯২৯ সাল, আইন অমান্য আন্দোলনে তখন উত্তাল গোটা দেশ। সেই সময় ভারতের নিজের পণ্য বলতে খুব বেশি কিছু ছিল না। এমনকি হাত, পা কেটে গেলে বা শীতকালে পা ফাটলে সেখানে লাগানোর মতো ক্রিমও আসত সুদূর বিলেত থেকে। আর সেই জায়গা থেকেই কলকাতার ব্যবসায়ী গৌরমোহন দত্ত শুরু করেন জিডি ফার্মাসিউটিক্যাল।
আর সেই সূত্র ধরেই জন্ম নেয় বোরোলিন। সবুজ অ্যালুমিনিয়ামের টিউবে যা খুব দ্রুতই স্থান করে নেয় বাঙালির মনের মণিকোঠায়। প্রতিটি বাঙালি পরিবারের প্রাথমিক চিকিৎসার ভরসা সেই বোরোলিন। শুরুর সময় এই ক্রিমের উদ্দেশ্য ছিল স্পষ্ট—এমন এক দেশীয় ক্রিম, যা সাধারণ মানুষের জন্যই এবং যা টক্কর দেবে বিদেশি সব ক্রিমকে। এক কথায় বলা যায় বোরোলিনের হাত ধরেই যেন বাংলা তথা গোটা ভারত শিখেছিল ‘আত্মনির্ভরতা’।
কীভাবে তৈরি এই ম্যাজিক ক্রিম?
বোরোলিনের ফর্মুলা সহজ কিন্তু কার্যকরী। বোরিক অ্যাসিড, জিঙ্ক অক্সাইড আর ল্যানোলিন; এই তিন উপাদানের মিশ্রণেই তৈরি করা হয় বোরোলিন। আর নামও আসে ওই বোরিক অ্যাসিডের বোরিক আর ল্যানোলিনের ওলিন থেকে। কাটা, পোড়া, পা বা ঠোঁট ফাটা ছাড়াও যে কোনও চর্মরোগে এর ব্যবহার আজও আমরা করে থাকি।
বোরোলিনের লোগোয় রয়েছে একটি হাতির ছবি। যা শক্তির প্রতীক। প্রায় আট দশক ধরে একটুও বদলায়নি এই লোগো। এমনকি বোরোলিনের সেই সবুজ টিউবও বদলায়নি। যদিও বর্তমানে প্লাস্টিকের কৌটোয় পাওয়া যায় এই ক্রিম।
স্বাধীনতার সঙ্গে যোগসূত্র
দেশের স্বাধীনতার সঙ্গেও ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে রয়েছে বোরোলিন। যে ক্রিমের উদ্ভাবন হয়েছিলও ব্রিটিশদের টক্কর দিতে, দেশের স্বাধীনতার সঙ্গে যে তা জড়িয়ে থাকবে সে কথা যদিও খুবই স্বাভাবিক। ১৯৪৭ সালের ১৫ই আগস্ট, কলকাতায় ১ লক্ষেরও বেশি বোরোলিন বিনামূল্যে বিতরণ করে জিডি ফার্মাসিউটিক্যাল। এক কথায় বলা যায় দেশের স্বাধীনতার উদযাপনে সঙ্গী ছিল এই স্বদেশী ক্রিম।
সময়ের সঙ্গে সঙ্গে প্রসার ঘটেছে জিডি ফার্মাসিউটিক্যালসের। চাকবাগির ২০ একর জমিতে প্রথম কারখানা তৈরি হয়। পরে গাজিয়াবাদেও ইউনিট খুলেছে তারা। ফলে, এক সময় ভারতীয়দের জন্য তৈরি হওয়া ক্রিম খুব সহজেই পৌঁছে যেতে পেরেছে বিশ্ববাসীর কাছে। ওমান, তুরস্ক এবং সংযুক্ত আরব আমিরশাহির মতো দেশে পৌঁছে গিয়েছে বাংলার এই ব্র্যান্ড। বোরোলিনের পর সুথল, গ্লোসফটের মতো একাধিক পণ্য নিয়ে আসে জিডি ফার্মাসিউটিক্যালস। কিন্তু শুরুর ৯৫ বছর পরে সংস্থার মুখ আমার আপনার প্রিয় সেই সবুজ টিউবের বোরোলিনই।
