নয়া দিল্লি: দীপাবলি (Diwali) উৎসব হল আলোর উৎসব। এই সময়ে সকলে নিজেদের ঘর রঙিন আলোয় সজ্জিত করে। বিভিন্ন ধরনের রকমারি আলোর পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের মাটির প্রদীপ দিয়েও ঘর আলোকিত করতে মেতে ওঠে দেশবাসী। আর ধনতেরাসে সংসারের ধন-সম্পদ বৃদ্ধির জন্য আলো, বাসন থেকে শুরু করে সোনা-রুপো, হীরের গয়না-সহ বিভিন্ন সামগ্রী কেনাকাটা করে। স্বাভাবিকভাবেই এই সময় বাজার থাকে তুঙ্গে। আলোর জন্য সাধারণত বিখ্যাত চিনা লাইট। তুলনামূলক কম দামে রকমারি আলোর বাহারের জন্য সাধারণ মানুষ চিনা লাইটের প্রতি ঝোঁকে। গত কয়েক বছর ধরেই চিনা পণ্য বর্জন করে দেশীয় পণ্য ব্যবহারের জোর দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী (PM Narendra Modi)। এবছর দেশবাসীর কাছে ‘ভোকাল ফর লোকাল’ (Vocal for local) হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। আর প্রধানমন্ত্রীর এই আহ্বানে ইতিমধ্যে লাভের মুখ দেখতে শুরু করেছেন দেশীয় ব্যবসায়ীরা। কনফেডারেশন অফ অল ইন্ডিয়া ট্রেডার্সের (CAIT) জাতীয় সভাপতি প্রবীণ খান্ডেলওয়াল বলেন, আজ এবং আগামিকাল ধনতেরাস উপলক্ষে সারা দেশে খুচরা ব্যবসা প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকার হতে চলেছে বলে অনুমান করা হচ্ছে।
অন্যদিকে, প্রধানমন্ত্রীর আহ্বানে সাড়া দিয়ে দেশবাসী এই দীপাবলিতে ভোকাল ফর লোকাল-এর উপর ঝুঁকেছে। প্রায় সমস্ত কেনাকাটাই ভারতীয় পণ্যের হচ্ছে। যার ফলে বিপুল লোকসান হতে চলেছে চিনের। দীপাবলি-সংক্রান্ত চিনা পণ্য সেভাবে বিক্রি না হওয়ায় চিন প্রায় ১ লক্ষ কোটি টাকার লোকসান করছে বলে ব্যবসায়ী মহলের অনুমান।
ভোকাল ফর লোকাল আহ্বানের প্রভাব
এই দীপাবলিতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ‘ভোকাল ফর লোকাল’-এর আহ্বান জানিয়েছেন। অন্যদিকে, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী স্মৃতি ইরানি মহিলাদের কেনাকাটা করা ও ব্যবসা শুরু করার আবেদন জানিয়েছেন। তাঁদের সেই আহ্বানে সমর্থন জানিয়ে, CAIT সারা দেশের ব্যবসায়িক সংস্থাগুলিকে তাদের এলাকার মহিলাদের দীপাবলি-সম্পর্কিত ব্যবসায়িক কাজকর্মে অংশগ্রহণ করতে উৎসাহিত করার আহ্বান জানিয়েছে। পাশাপাশি পণ্য উৎপাদকদের বিক্রয় বাড়াতে স্থানীয়দের এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছে।
কনফেডারেশন অফ অল ইন্ডিয়া ট্রেডার্স (ক্যাট) এর জাতীয় সভাপতি বিসি ভরতিয়া এবং জাতীয় সাধারণ সম্পাদক প্রবীণ খান্ডেলওয়াল জানান, ধনতেরাসের দিনে সিদ্ধিবিনায়ক শ্রী গণেশ, সম্পদের দেবী শ্রী মহালক্ষ্মী এবং শ্রী কুবেরের পুজো করা হয়। এদিন নতুন জিনিস কেনা শুভ বলে মনে করা হয়। ফলে এই সময় কেনাকাটার বৃদ্ধি হয়। বিশেষ করে সোনা-রুপোর গয়না, বাসনপত্র, রান্নাঘরের জিনিসপত্র, যানবাহন, জামাকাপড় এবং তৈরি পোশাক, ইলেকট্রনিক্স, বৈদ্যুতিক পণ্য ও সরঞ্জাম, ব্যবসায়িক সরঞ্জাম যেমন কম্পিউটার এবং কম্পিউটার সম্পর্কিত সরঞ্জাম, মোবাইল, খাতা, আসবাবপত্র ইত্যাদি কেনা হয়।
গয়না শিল্পের ব্যবসা বৃদ্ধির আশা
অল ইন্ডিয়া জুয়েলার্স অ্যান্ড গোল্ডস্মিথ ফেডারেশনের জাতীয় সভাপতি পঙ্কজ অরোরা জানান, আগামিকাল ধনতেরাস নিয়ে দেশজুড়ে গয়না ব্যবসায়ীদের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ রয়েছে। সোনা, রোপো, হীরার নতুন ডিজাইনের গয়নার মজুত রাখা হয়েছে। পাশাপাশি এবছর বাজারে কৃত্রিম গয়নার ব্যাপক চাহিদাও দেখা যাচ্ছে। গয়না ছাড়া ধনতেরাসে সোনা এবং রুপোর মুদ্রা, নোট এবং প্রতিমাও প্রচুর পরিমাণে কেনার সম্ভাবনা রয়েছে।
হোটেল ও মিষ্টির ব্যবসা বৃদ্ধির আশা
CAT-এর দিল্লির রাজ্য সভাপতি বিপিন আহুজা এবং রাজ্য সাধারণ সম্পাদক দেব রাজ বাওয়েজা জানিয়েছেন, ধবতেরাস ও দীপাবলিতে গয়না, বাসন-সহ বিভিন্ন সামগ্রী কেনার পাশাপাশি হোটেল-রেস্তোরাঁয় খাবারের ঝোঁকও বাড়ে। এছাড়া মিষ্টির চাহিদাও বৃদ্ধি পায়। ফলে ক্যাটারিং ব্যবসা থেকে হোটেল এবং রেস্তোঁরা ব্যবসায়ীরা এবং মিষ্টি ব্যবসায়ীরা বিশেষ লাভবান হবেন বলে আশা করা হচ্ছে।