নয়া দিল্লি: শেষ হচ্ছে জ্বালানির ভাণ্ডার। আর কয়েক বছর পর পেট্রোল-ডিজেলের চরম সঙ্কট দেখা দিতে পারে। সেই সঙ্গে জ্বালানি থেকে দূষণ তো রয়েইছে। আর সেখান থেকেই চিন্তাভাবনা বিকল্প জ্বালানি নিয়ে। কয়েক বছরের মধ্যে অফিস, রাস্তাঘাটে শুধুই বিকল্প জ্বালানিতে গাড়ি চলবে। পেট্রোল- ডিজেল চালিত গাড়ি থাকবে শুধু প্রতিরক্ষা ও জরুরি কিছু ক্ষেত্রের জন্য। কয়েক মাস আগে কেন্দ্রকে এমনই এক পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় সড়ক পরিবহণ মন্ত্রী নিতিন গড়করি। সেই পরিকল্পনার পথে এক লাফে অনেকটা এগোল মোদী সরকার। কেন্দ্রের লক্ষ্য, দেশ জুড়ে চার্জিং স্টেশনের পাশাপাশি বৈদ্যুতিন গাড়ি ব্যাটারি কারখানা তৈরি করা হবে।
কেন্দ্রীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, দেশজুড়ে অন্তত ১৩টি বৈদ্যুতিন গাড়ির ব্যাটারি কারখানা গড়ার পরিকল্পনা করছে কেন্দ্র। এই কারখানা গড়তে ৮ হাজার কোটি টাকার ইনসেনটিভ প্যাকেজও দেওয়া হবে। ভারতে কারখানা তৈরি করলে ইনসেনটিভ বা ভাতা পাবে উত্পাদক সংস্থা। পাশাপাশি দেশজুড়ে সাড়ে ৫ হাজার চার্জিং স্টেশন তৈরি করা হবে। ইতিমধ্যেই লিথিয়াম উত্তোলনে দরপত্র ডাকার প্রক্রিয়াও শুরু হয়ে গিয়েছে।
চলতি মাসেই দিল্লিতে বিশ্বের সেরা ব্যাটারি নির্মাতা সংস্থাগুলির সঙ্গে বৈঠকে বসেছিল মোদী সরকার। সেখানেই কারখানা গড়তে ভাতা বা ইনসেনটিভের কথা বলা হয়। তবে এক্ষেত্রে কিছু শর্তও রাখা হয়েছে। যেমন, অত্যাধুনিক প্রযুক্তিতে ব্যাটারি প্ল্যান্ট তৈরি হবে। উত্পাদন ক্ষমতা হতে হবে ঘণ্টায় ২০ গিগাওয়াট।
বৈদ্যুতিন গাড়ির চার্জিং স্টেশন এবং বৈদ্যুতিন গাড়ির ব্যাটারি – দুটি ক্ষেত্রেই ভারত পিছিয়ে। এখনও ভারতে বৈদ্যুতিন গাড়ি তৈরির ক্ষেত্রে ৮৫ শতাংশ পণ্যই আমদানি করতে হয়, বিশেষত যন্ত্রাংশ। তবে কেন্দ্রের পরিকল্পনা, ভারতকে ব্যাটারি হাব হিসাবে গড়ে তোলা। তার লক্ষ্যেই ব্যাটারি কারখানার জন্য ইনসেনটিভ ঘোষণা করে মোদী সরকার। ২০২২ সালেই রিলায়েন্স, ওলা ইলেকট্রিক ও রাজেশ এক্সপোর্টকে এই যন্ত্রাংশ তৈরির জন্য বাছাই করে কেন্দ্র। তিন সংস্থাই কারখানা গড়ার কাজ শুরু করেছে।
কেন্দ্রের হিসাব অনুযায়ী, ২০৩০ সালে ভারতে ঘণ্টায় ২৬০ শক্তির ব্যাটারি প্রয়োজন হবে। এর অন্তত ৮০ শতাংশ দেশেই তৈরি করার পরিকল্পনা। আর এই উৎপাদন বাড়াতেই ইনসেনটিভের ঘোষণা। এই পরিকল্পনা যদি সফল হয়, ব্যাটারি ও স্টোরেজ সেন্টারে অন্য দেশের উপর নির্ভরতা কাটিয়ে উঠবে ভারত।
পাশাপাশি ভারতে লিথিয়ামের খোঁজ মেলার পরই দ্রুত এগোচ্ছে কেন্দ্র। ডিসেম্বরেই লিথিয়াম উত্তোলনে ই-নিলাম শুরু হচ্ছে। ৩০ দিনের মধ্যে এই প্রক্রিয়া শেষ করার টার্গেট নেওয়া হয়েছে। সরকারি সূত্রে খবর, ২০২৫ সালেই গুজরাটে লিথিয়াম-আয়ন ব্যাটারি কারখানায় উত্পাদন শুরু করতে পারে টাটা সংস্থা। তার আগেই বেঙ্গালুরুতে এক্সাইডের কারখানায় উত্পাদন শুরু হতে পারে।
পাশাপাশি আগামী বছরের মধ্যে দেশজুড়ে ৫ হাজার চার্জিং স্টেশন তৈরির কাজও শেষ হয়ে যাবে বলে আশাবাদী কেন্দ্র।
পরিবেশ দূষণ এবং আবওহয়ার বিরূপ পরিবর্তন রুখতে দূষণকারী জ্বালানি ও তা থেকে তৈরি বিদ্যুৎ শক্তির উৎপাদন কমাতে উদ্যোগী ভারত-সহ গোটা বিশ্ব। যে কারণে সৌর বিদ্যুৎ, বায়ু বা জল বিদ্যুতের মতো বিকল্পে জোর দেওয়া হচ্ছে। এখন কিছুটা পিছিয়ে থাকলেও বিকল্প জ্বালানির পথে ভারত ঘাটতি পূরণ করে ফেলবে বলে মনে করছে শিল্পমহলও।