ওয়াশিংটন: শুধু মনে মনে ভাববেন, আর তাতেই ভাবনার ওই ব্যক্তির কাছে চলে যাবে ফোন বা মেসেজ। না এটা কোনও অলীক স্বপ্ন নয়, বাস্তবেই ঘটতে চলেছে। ভাবনাকে বাস্তবতায় পরিণত করছেন ইলন মাস্ক। বিশ্বের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ধনী ব্যক্তি ইলন মাস্কের সংস্থা নিউরালিঙ্ক কোম্পানি এমন একটি যন্ত্র বা ডিভাইস আবিষ্কার করেছে, যা মানুষের মননকে পড়ে ফেলে, ফোন করা বা কম্পিউটার চালানোর কাজ করবে। ইতিমধ্যেই পরীক্ষামূলকভাবে মানুষের মস্তিষ্কে চিপ বসানো হয়েছে এবং প্রাথমিক পরীক্ষায় তার ভাল ফলাফলও পাওয়া গিয়েছে। চিপ বসানোর পর সম্পূর্ণ সুস্থ রয়েছেন ওই ব্যক্তি।
নিউরালিঙ্ক একটি নিউরো-টেকনোলজি কোম্পানি। ২০১৬ সালে ইলন মাস্ক এই সংস্থার সূচনা করেছিলেন। সম্প্রতিই ৩০ জানুয়ারি ইলন মাস্ক, যিনি এক্স সংস্থার মালিক, তিনি নিজের এক্স হ্যান্ডেলে লেখেন, ‘”নিউরালিঙ্কের প্রথম পণ্যটির নাম টেলিপ্যাথি।”
The first @Neuralink product is called Telepathy
— Elon Musk (@elonmusk) January 29, 2024
নিউরালিঙ্কের এই ডিভাইসটি মস্তিষ্কের সঙ্গে কম্পিউটারকে যোগ করার ইন্টারফেস। সহজ ভাষায় বলতে গেলে, এটি এক ধরনের ব্রেন চিপ, যা মস্তিষ্ক ও মোবাইল মধ্যে সংযোগ স্থাপন করবে। এই চিপে শয়ে শয়ে ইলেক্ট্রোড তার রয়েছে, যাকে বলা হয় মাইক্রোন-স্কেল থ্রেড। এই ইলেক্ট্রোডগুলি মস্তিষ্কের নিউরন সংকেতগুলিকে প্রক্রিয়া করে। এর পরে, সেই তথ্য পৌঁছে যায় নিউরালিঙ্ক অ্যাপে। সেখানে সফটওয়্যারটি ডেটা বা তথ্য ‘ডিকোড’ করে, তার ভিত্তিতে পদক্ষেপ করে। অর্থাৎ ধরুন আপনি মনে মনে ভাবলেন, কাউকে ফোন করবেন। এই চিপ সেই তথ্য সিগন্যালটি প্রক্রিয়া করে অ্যাপে পাঠাবে। সেখান থেকে তথ্য ডিকোড করে, লিউরোলিঙ্ক অ্যাপ আপনার হয়ে ফোন করে দেবে। এক কথায় বলতে গেলে, শুধুমাত্র চিন্তা করেই আপনি ফোন বা কম্পিউটার নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন।
প্রাথমিকভাবে, যে সকল ব্যক্তির অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ বিকল, তাঁদের ব্যবহারের জন্য এই চিপ ব্যবহার করা হবে।
এই ডিভাইসটিতে একটি ছোট ব্যাটারি রয়েছে, যা একটি কমপ্যাক্ট চার্জারের মাধ্যমে তার ছাড়াই চার্জ দেওয়া যাবে। নিউরালিঙ্কের চিপের মাধ্যমে মানুষ তাদের মস্তিষ্ক দিয়ে ফোন ও কম্পিউটার চালাতে পারবে। যারা স্নায়ুর রোগে ভুগছেন, তাদের জন্য এটি অত্য়ন্ত সুবিধাদায়ক হবে।
মস্তিষ্কে এই যন্ত্র ইমপ্লান্ট করা একটু কঠিন। যন্ত্রের ইলেক্ট্রোড তারগুলি এত লম্বা যে মানুষের হাতে সেগুলি মস্তিষ্কে লাগানো যায় না। তাই মস্তিষ্কে ডিভাইসটি বসানোর জন্য আলাদা সার্জিক্যাল রোবট তৈরি করা হয়েছে। মেশিনে খুব পাতলা সূঁচ এবং সেন্সর ইনস্টল করা আছে। এই রোবট মাথার খুলিতে একটি গর্ত তৈরি করবে এবং মস্তিষ্কের যে অংশ নড়াচড়া নিয়ন্ত্রণ করে, সেখানে ইলেক্ট্রোড তার ঢুকিয়ে দেবে।
গত বছরের মে মাসে, নিউরালিঙ্ক মানুষের উপর পরীক্ষা চালানোর জন্য মার্কিন প্রশাসনের কাছ থেকে অনুমোদন পায়। মানুষের উপর পরীক্ষা করার আগে, নিউরোলিঙ্ক ২০২১ সালে বানরের মস্তিষ্কে এই চিপটি পরীক্ষামূলকভাবে বসিয়েছিল। এর একটি ভিডিয়োও শেয়ার করা হয়।
ভিডিয়োয় দেখা যায়, একটি বানর কম্পিউটারে একটি গেম খেলছে। এর জন্য হাত-ও নাড়ছে না সে, কেবল মন দিয়েই নিয়ন্ত্রণ করছে গেম। বানরের মস্তিষ্কে যে তার লাগানো রয়েছে,তা মস্তিষ্কের সংকেত কম্পিউটারে পাঠাচ্ছে। ইলন মাস্ক ওই ভিডিয়ো পোস্ট করে লিখেছিলেন, “নিউরালিঙ্ক ডিভাইসটির সাহায্যে পক্ষাঘাতে আক্রান্ত ব্যক্তিরা মস্তিষ্কের শক্তি দিয়ে স্মার্টফোন ব্যবহার করতে সক্ষম হবে।”
Monkey plays Pong with his mind https://t.co/35NIFm4C7T
— Elon Musk (@elonmusk) April 9, 2021
ইলন মাস্কের লক্ষ্য শুধু মন বা মস্তিষ্ক দিয়ে ফোন নিয়ন্ত্রণ করাই নয়। পক্ষাঘাতগ্রস্তদের নিজের পায়ে দাঁড় করানোই পরবর্তী পরিকল্পনা। নিউরালিঙ্ক শরীরের মোটর ফাংশন এবং তার সঙ্গে কথা বলার ক্ষমতা পুনরুদ্ধার করার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে।