কথায় বলে, মানুষ নাকি অভ্যাসের দাস। প্রত্যেকটা মানুষের বেশ কিছু খারাপ আর কিছু ভাল অভ্যাস থাকে। কারও হয়তো সেই অভ্যাসের কারণেই অর্থনৈতিক লাভ হয়। আবার কেউ আছেন, যাঁদের বিভিন্ন অভ্যাসের কারণে অর্থনৈতিক ক্ষতিও হয়। নতুন বছরে অনেকেই অনেক প্রতিজ্ঞা করেন, রেজোলিউশন নেন। কিন্তু, এখানে যে ৯টা অভ্যাসের কথা বলা হবে, তার মধ্যে কয়েকটিও যদি কেউ প্রতিজ্ঞা করে পূর্ণ করতে পারেন, তবে তাঁর আগামী বছর শুরুর আগে জীবনে বেশ কিছুটা অর্থনৈতিক স্বাধীনতা আসবে।
১. অকারণে ধার নয়:
অনেকেই আছেন, প্রয়োজনে বা অপ্রয়োজনে অফিস কলিগ বা বন্ধুদের থেকে টাকা ধার নেন। সত্যিই যদি দরকারে কেউ ধার নিয়ে থাকেন, তবে সেটা ঠিক আছে। কিন্তু অনেকেই এমন আছেন যাঁরা অপ্রয়োজনেও ধার করে থাকেন। ধরা যাক, হঠাৎ কেউ দেখলেন কোনও ব্র্যান্ডেড কোম্পানি তাদের পণ্যের উপর অনেকটা ছাড় দিচ্ছে। কিন্তু হাতে টাকা নেই, ফলে কোনও বন্ধু বা কাছের মানুষের দ্বারস্থ হয়ে সেই পণ্য কিনে ফেললেন ওই ব্যক্তি। ভেবে দেখলে দেখা যাবে, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই আমরা শুধুমাত্র চোখের দায়েই বেশ কিছু জিনিস কিনে ফেলি। যা আমাদের হয়তো আসলে অতি প্রয়োজনীয় নয় বা এখুনি কিনতে হবে এমনও নয়। সেই ধরণের অভ্যাস বর্জন করতে পারলে অনেক টাকা বাঁচিয়ে ফেলতে পারবেন আপনিও।
২. হিসাব রাখুন:
বেশিরভাগ মানুষের কাছেই কোনও হিসাব থাকে না ঠিক কী কী ভাবে তিনি খরচ করেন। ফলে, আপনি কী খরচ করছেন, তার একটা যথাযথ হিসাব রাখুন। কোনও ডায়রিতে বা কম্পিউটারে এক্সেল শিট বানিয়ে তাতে আপনার মোট মাসিক আয় ও ব্যায়ের হিসাব রাখুন তাতে মাসের শেষে বুঝতে পারবেন ঠিক কত টাকা অকারণে খরচ হয়েছে আপনার।
৩. বদভ্যাস ত্যাগ করুন:
কর্মরত মানুষ যাঁরা, তাঁরা অনেকেই সিগারেট বা কোনও নেশার দ্রব্যের পিছনে বেশ অনেকটা টাকা খরচ করেন। অনেকেই হয়তো বলবেন, পঞ্চাশ-ষাট টাকার সিগারেট খেলেও দোষ? ওই টাকায় আজকের দিনে কী হয়? দৈনিক কেউ যদি পঞ্চাশ টাকা খরচ না করে কোথাও একটা বিনিয়োগ করে তাহলে কী কী হতে পারে জানেন কী? ১৩ জানুয়ারি ২০২৫ -এর হিসাব বলছে গত ৫ বছরে নিফটি ৫০ ইনডেক্স ৮৭ শতাংশ রিটার্ন দিয়েছে অর্থাৎ গড়ে বার্ষিক ১৭.৫০ শতাংশ। সেই হিসাবে কেউ যদি দৈনিক নিফটি ৫০ সূচকেও বিনিয়োগ করে তবে ২০৩৫ সালে সেই বিনিয়োগের পরিমাণ গিয়ে দাঁড়াবে ৩ লক্ষ ৬০ হাজার টাকায়। আর সেই বিনিয়োগ আরও ১০ বছর চালিয়ে গেলে ২০৪৫ সালে এই অর্থের পরিমাণ হবে ২৪ লক্ষ ৪০ হাজার টাকা।
৪. সমস্ত দরকারি তথ্য রাখুন:
আমরা আমাদের বিভিন্ন দরকারি তথ্য, নথি গুছিয়ে রাখি কিন্তু দরকারের সময় আমাদের মনে পড়ে না ঠিক কোথায় যেন রেখেছিলাম। আর এই স্বভাবের কারণেই আমাদের অনেক ক্ষতি হতে পারে। ফলে যে সব নথি খুবই দরকারি, যে কোনও মুহূর্তেই দরকার হতে পারে, সে গুলো হাতের কাছে রাখাই বাঞ্ছনীয়। কী কী হাতের কাছে রাখবেন? প্রথমত, ইনসিওরেন্সের সব নথি। টার্ম ইনসিওরেন্স, মেডিক্লেম বা আপনার বাহনের বিমার যে কোনও নথি সবসময় হাতের কাছে রাখুন। সফট কপি আপনার পরিবারের সকলের ফোনে ও আপনার কয়েকজন শুভানুধ্যায়ীর ফোনে পাঠিয়ে রাখুন। তাতে দরকারের সময় হাতের কাছে পাবেন সে সব তথ্য। এছাড়া, যে কোনও মেডিক্যাল রেকর্ড, ব্যাঙ্ক রেকর্ড অর্থাৎ পাসবুক, চেকবুক, বিভিন্ন পণ্যের ওয়ারেন্টি কার্ড, আয়করের রেকর্ড সবসময় রাখুন হাতের কাছে। সঙ্গে আপনার আধার কার্ড, প্যান কার্ড, ভোটার আইডি কার্ডও রাখতে ভুলবেন না।
৫. লোক দেখানোর জন্য খরচ বন্ধ করুন
আপনার হয়তো একটা গাড়ি কেনার শখ। সেক্ষেত্রে বাজারের সবচেয়ে ভাল যে গাড়িটার ইএমআই আপনি চালাতে পারবেন, সেটাই আপনাকে নিতে হবে এমন নয়। যে গাড়িটা আপনার সব দরকার পূরণ করতে পারবে সেই গাড়ির দিকেই নজর দেওয়া উচিৎ। হয়তো কোনও ৫/৬ লাখ টাকার গাড়িতেই আপনার সব প্রয়োজন মিটে যাবে। কিন্তু আপনি যদি শুধুমাত্র আপনার বন্ধু বা কলিগ বা যার সঙ্গে আপনার স্টেটাস নিয়ে একটা ঠান্ডা যুদ্ধ চলে তাকে দেখানোর জন্য একটা ২৫ লাখের গাড়ি কেনেন সেটা অবশ্যই বোকার কাজ হবে। ফলে, যে কোনও ধরণের লোক দেখানো খরচ যদি বন্ধ করা যায়, তবে আগামী বছরের আগে আপনার হাতে অনেকটা অর্থ থাকবে যা আপনি বিনিয়োগ করতে পারবেন।
৬. বিনিয়োগ করুন:
অনেক মানুষ আছেন তাঁরা শুধুমাত্র অর্থ সঞ্চয় করেন। কিন্তু শুধু অর্থ সঞ্চয় করলেই তো হবে না। কারণ, মুদ্রাস্ফীতির কারণে জিনিসপত্রের দাম রোজই বাড়ছে। আর ভারতে মুদ্রাস্ফীতির হার সাড়ে ৫ থেকে সাড়ে ৬ শতাংশ। ফলে আপনার সঞ্চয়ের অর্থমূল্য রোজই কমে যাচ্ছে। তাই শুধু সঞ্চয় না করে বিনিয়োগ করুন। বিভিন্ন ব্যাঙ্ক ফিক্সড ডিপোজিটে সর্বোচ্চ সাড়ে ৯ শতাংশ পর্যন্ত সুদ দেয়। ফলে বিভিন্ন ব্যাঙ্কে এফডি করা যেতে পারে। বা কেউ শেয়ার বাজারে বা মিউচুয়াল ফান্ডেও বিনিয়োগ করতে পারেন।
৭. বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে কেনাকাটা করুন:
আমরা কেনাকাটা করি, অনেকটাই চোখের দায়ে। কিন্তু আমাদের তো সত্যিই অনেক কিছু কেনাকাটা করতে হয়। সেক্ষেত্রে কী করা যেতে পারে? ধরুন, দুর্গাপুজোর আগে আপনি জামাকাপড় কিনবেন। সেটা পুজোর আগে না কিনে আরও একটু আগে যদি কিনে ফেলেন? অনেক ব্র্যান্ডেড দোকানই কিন্তু জুলাই মাসে দারুণ, দারুণ অফার দেয়। সেই অফার কাজে লাগিয়ে অনেক ছাড়েই কেনাকাটা করে বাকি টাকা বাঁচিয়ে নিতে পারবেন আপনি। আবার ফোন বা ল্যাপটপের মতো কোনও গ্যাজেট কেনার দরকার হলে, বিভিন্ন অনলাইন বিপণনী সংস্থা পুজোর আগে বা দীপাবলিতে যে বিরাট ছাড় দেয়, সেই ছাড় কাজে লাগিয়েও কেনাকাটা করা যায়।
৮. স্বাস্থ্যই সম্পদ:
অনেকে অবসরপ্রাপ্ত মানুষই এই বলে আক্ষেপ করেন যে, সারাজীবন ধরে যা আয় তিনি করেছেন, তার সবই ডাক্তারের পিছনে খরচ হয়ে যাচ্ছে। এই আক্ষেপ যাতে আপনাকে না করতে হয়, সেই কারণে সময় থাকতে থাকতে নিজের স্বাস্থ্যের দিকে নজর দিন। সারা দিন বসে বসে কাজ করেন? তাহলে অবশ্যই দিনে অন্তত ৩০ মিনিট ওয়ার্কআউট করুন।
৯. শিখতে থাকুন:
হীরক রাজার দেশে সিনেমায় বিখ্যাত উক্তি ছিল ‘জানার কোনও শেষ নাই, জানার চেষ্টা বৃথা তাই’। কিন্তু জীবনে সেই উক্তি কখনই প্রযোজ্য হয় না। জীবনে জানার কোনও শেষ সত্যিই নেই। ফলে, রোজই নতুন কিছু জানার, শেখার চেষ্টা করে যেতে হবে। আজ হয়তো অনেকেই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নিয়ে কাজ করছে। জানচে, বুঝছে। আপনিও এমন কোনও বিষয় নিয়ে পড়াশোনা করুন, যা আপনার কাজের ক্ষেত্রকে, জ্ঞানের ক্ষেত্রকে আরও বৃহৎ করে দেবে। আর আপনার সার্বিক বিকাশে তা সহায় হবে।
যে কোনও বিনিয়োগে বাজারগত ঝুঁকি রয়েছে। ফলে, আগে বিনিয়োগ সংক্রান্ত সমস্ত নথি সাবধানে পড়ে নেবেন। তারপর বিনিয়োগ নিয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন।