উত্তর থেকে দক্ষিণ, ভারতীয়দের মধ্যে সোনার গয়নার একটা আলাদাই জনপ্রিয়তা রয়েছে। সামর্থ্য আর পকেটে টাকা থাকলে ঘরে সোনার গয়না আনার শুধুমাত্র ছুঁতো খোঁজেন মানুষ। কথায় রয়েছে বাঙালির বারো মাসে তেরো পার্বণ। আর সোনা ছাড়া বাঙালির পার্বণ যেন শেষ পাতে চাটনি ছাড়া ভোজের মতো। অন্নপ্রাসন থেকে বিয়েবাড়ি সোনার গয়না লাগবেই। অন্তত আদি অন্তকাল ধরে এমনটাই চলে আসছে। সোনা যেন শুধুমাত্র একটা ধাতুই নয়। একটা ঐতিহ্যকে শতকের পর শতক ধরে বহন করে চলেছে সোনা। এই বিভিন্ন পার্বণে সোনার গয়না ব্যবহারের রীতিতে সামান্য পরিবর্তন আসলেও তাতে মরচে একেবারে ধরে যায়নি। সোনার মাহাত্ম্য এখনও বিরাজমান।
আর এই ঐতিহ্যকে বহন করে নিয়ে যেতে হোক বা নিজের সখেই হোক, অনেকেই ভূরি ভূরি সোনা কিনে ফেলেন। কারণ সখ মেটোনা ছাড়াও সোনাকে অনেকেই বিনিয়োগের মাধ্যম হিসেবে মনে করেন। এছাড়া বিভিন্ন ধর্মীয় অনুষ্ঠান থেকে বিবাহ অনুষ্ঠানের জন্য তো সোনার গয়না কেনা হয়েই থাকে। তাছাড়া সামনেই ধনতেরাস। এই উপলক্ষে কম বেশি অনেকেই সোনার গয়না কিনে থাকেন। তবে সোনার কেনার আগে অকবাার জেনে নেওয়া প্রয়োজন ভারতে ঘরে সোনা রাখার ক্ষেত্রে কোনও বিধিনিষেধ রয়েছে কি না।
ভারতে ঘরে সোনা রাখার নিয়ম :
১৯৬৮ সালে ভারত সোনা নিয়ন্ত্রণ আইন (Gold Control Act) নিয়ে আসে। সেই আইনে ভারতীয় সোনা কেনার ক্ষেত্রে কিছু সীমা বেঁধে দেওয়া হয়েছিল। তবে ১৯৯০ সালে সেই আইন বাতিল করে দেওয়া হয়। ফলে সোনা কেনার ক্ষেত্রে বাধ্যবাধকতাও মুছে যায়। তাই বর্তমানে সোনা কেনার পরিমাণের উপর কোনও বিধিনিষেধ নেই। তবে আপনার কাছে সেই সোনার ক্রয় সংক্রান্ত নথি ও আয়ের উৎসের নথি থাকতে হবে। ২০১৬ সালের ১ ডিসেম্বর সেন্ট্রাল বোর্ড অব ডিরেক্ট ট্যাক্সেস (CBDT) একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তি জারি করে জানিয়েছে,সোনার গয়না রাখার পরিমাণের উপর কোনও ঊর্ধ্বসীমা নেই। সিবিডিটি স্পষ্ট করে দেয়, কোনও মানুষের অধিকৃত সোনার উৎস যতক্ষণ পরিষ্কার ততক্ষণ যেকোনও পরিমাণের সোনার রাখতে পারেন নাগরিকরা। তবে, অধিকৃত সোনার সঙ্গে সেই ব্যক্তির সঙ্গতি থাকাও গুরুত্বপূর্ণ। সমস্ত প্রয়োজনীয় নথিপত্র দিলে আয়কর বিভাগ থেকে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির বাড়িতে অভিযান চালানো হবে না। এক্ষেত্রে উল্লেখ্য, যদি আয়ের নথিপত্র, সোনার গয়নার নথিপত্রে গরমিল থাকে তাহলে আধিকারিকরা সেই সোনা বাজেয়াপ্ত করতে পারেন। তবে আয়ের সঙ্গে সঙ্গতি না থাকলেও ব্যক্তি বিশেষে কিছু ছাড় দেওয়া হবে এক্ষেত্রে। যেমন, কোনও বিবাহিত মহিলার কাছে নির্দিষ্ট পরিমাণ অবধি সোনার গয়না থাকলে তা বাজেয়াপ্ত না করার বিষয়ে জানানো হয়েছে সিবিডিটি-র তরফে।
কতটা সোনা রাখতে পারবেন ঘরে?
সরকারি নিয়ম অনুযায়ী, বিবাহিত মহিলারা ঘরে ৫০০ গ্রাম অবধি সোনা রাখলে তা বৈধ বলে বিবেচিত হবে। তবে কোনও অবিবাহিত মহিলা ২৫০ গ্রামের বেশি সোনা রাখলে ভারতে অবৈধ বলে বিবেচিত হয়। এদিকে সিবিডিটি প্রত্যেক পুরুষের পরিবারের ক্ষেত্রেও সোনা রাখার একটি ঊর্ধ্বসীমা নির্ধারণ করেছে। কোনও বিবাহিত বা অবিবাহিত পুরুষ ১০০ গ্রাম সোনা রাখতে পারবেন। এই ঊর্ধ্বসীমা মাথায় রেখে কেউ সোনা কিনলে আয়কর আধিকারিকরা কোনও সোনার গয়না বাজেয়াপ্ত করতে পারবেন না। তবে এক্ষেত্রে এটাও উল্লেখ্য, এই ঊর্ধ্বসীমার বাইরে কোনও নাগরিক সোনার গয়না রাখতেই পারেন। তবে তাঁকে সেই সোনার উৎস সম্বন্ধে যথাযথ তথ্য দিতে হবে আধিকারিকদের। অন্যথায় বাজেয়াপ্ত হতে পারে সেই সোনা।