নয়া দিল্লি: চতুর্দিকে এখন একটাই চর্চা, “ইস আমার কাছেও যদি ২০ কোটি টাকা থাকত…”। ২০ কোটি টাকা উপার্জনের জন্য কোনও দুর্নীতি বা কুপথে হাঁটার প্রয়োজন নেই। যদি সঠিক পরিকল্পনা ও বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে বিনিয়োগ করেন, তবে আপনিও ২০ কোটির মালিক হতে পারবেন। হ্যাঁ, রাতারাচি বা ৫-১০ বছরের মধ্যে নয়, এই বিপুল পরিমাণ অর্থ আয়ের জন্য আপনার আরও বেশ কিছুটা সময় লাগবে। যদি ধৈর্য্য ধরে এবং খরচ নিয়ন্ত্রণে রেখে বিনিয়োগ করলে এই স্বপ্ন সত্যি সম্ভব।
এবার আসা যাক, কীভাবে ২০ কোটি টাকা উপার্জন করা সম্ভব। যদি শুরু থেকে একটি বড় অঙ্ক বিনিয়োগ করতে পারেন এবং বার্ষিক রিটার্নকে ফের বিনিয়োগে লাগাতে পারেন, তবে ২০ বছরের মধ্যে ১০ কোটি টাকা আয় সম্ভব অর্থাৎ ২০ কোটি টাকা আয়ের জন্য মোট ৪০ বছর সময় লেগে যাবে আপনার। যদি আপনি বিনিয়োগের প্রথম বছরে ১০ লক্ষ টাকা বিনিয়োগ করেন এবং বার্ষিক ২৫.৯ শতাংশ রিটার্ন পান, তবে ২০ বছরের মধ্যে আপনার জমা অর্থ ১০ কোটি এবং ৪০ বছরের মধ্যে তা ২০ কোটিতে পৌঁছে যাবে। যদি আপনার বিনিয়োগ পুঁজি আরও একটু বেশি থাকে, প্রথম বছরেই ২৫ লক্ষ টাকা বিনিয়োগ করেন, তবে ২০.৩ শতাংশ রিটার্নের হারেও আগামী ৪০ বছরের মধ্যে ২০ কোটি টাকার মালিক হয়ে যাবেন।
এবার প্রশ্ন উঠতেই পারে যে, কোন বিনিয়োগ সংস্থা ২০ বা ২৫ শতাংশ রিটার্ন দেবে। বিগত দুই দশকের বিনিয়োগের ইতিহাস ঘাটলে দেখা যাবে, এমন প্রায় ২০টি সংস্থা রয়েছে, যেখানে বিনিয়োগ করে ২০ থেকে ২৫ শতাংশ রিটার্ন পাওয়া গিয়েছে। এইরকমই কয়েকটি সংস্থা হল-
১. নিপ্পো ইন্ডিয়া গ্রোথ ফান্ড – রিটার্নের হার ২৫.৩ শতাংশ।
২. ফ্রাঙ্কলিন ইন্ডিয়া প্রাইমা ফান্ড- রিটার্নের হার ২৪.৫ শতাংশ।
৩. এসবিআই ম্য়াগনাম গ্লোবাল ফান্ড- রিটার্নের হার ২২.৬ শতাংশ।
৪. এইচডিএফসি ফ্লেক্সি ক্যাপ ফান্ড- রিটার্নের হার ২২.২ শতাংশ।
৫. আইসিআইসিআই প্রুডেনশিয়াল লং টার্ম ইক্যুয়িটি ফান্ড- রিটার্নের হার ২১.৯ শতাংশ।
৬. নিপ্পো ইন্ডিয়া ভিশন ফান্ড- রিটার্নের হার ২১.৯ শতাংশ।
৭. এসবিআই কনট্রা ফান্ড- রিটার্নের হার ২১.৯ শতাংশ।
৮. ডিএসপি ইক্যুয়িটি অপারচুনিটিস ফান্ড- রিটার্নের হার ২১.৬ শতাংশ।
৯. ডিএসপি ফ্লেক্সি ক্যাপ ফান্ড- রিটার্নের হার ২১.৪ শতাংশ।
১০. আদিত্য বিড়লা সান লাইফ ফ্লেক্সি ক্যাপ ফান্ড- ২১.২ শতাংশ রিটার্ন।
ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে এমনিই ১০ লক্ষ বা ২৫ লক্ষ টাকা পড়ে রয়েছে, যা বিনিয়োগে কাজে লাগাবেন, এটা অবিশ্বাস্য। মিউচুয়াল ফান্ডে বড় বিনিয়োগ করার জন্য আপনাকে পাশাপাশি ফিক্সড ডিপোজিট, পিপিএফেও বিনিয়োগ করতে হবে, যেখানে প্রতি বছর ন্যূনতম ৫ থেকে ৭ শতাংশ রিটার্ন পাবেন। ধরুন আপনি ৭০ হাজার টাকা বিনিয়োগ করেছেন, যেখানে সুদের হার পাচ্ছেন ৮ শতাংশ। তবে বছর শেষে আপনার জমা অর্থের পরিমাণ বেড়ে দাঁড়াবে ৭৫ হাজার ৬০০ টাকায়। পরের বছর ফের আরও ৭০ হাজার টাকা জমা রাখলে, ৮ শতাংশ সুদের হারে বছর শেষে জমা অর্থের পরিমাণ বেড়ে দাঁড়াবে ১ লক্ষ ৫৭ হাজার ২৪৮ টাকা। এভাবে যত অর্থ বাড়তে থাকবে, সুদের হারও বাড়বে, ফলে বছর শেষে রিটার্নের পরিমাণও বৃদ্ধি পাবে। এভাবেই ন্যূনতম ১৫ বছর বিনিয়োগ করলে আপনার জমা অর্থের পরিমাণ ৩০ লক্ষ টাকায় পৌঁছবে। এবার এই অর্থ ইএলএসএস ফান্ডে জমা রেখে ২০ বছরেই কোটিপতি হওয়া সম্ভব।
এছাড়াও আপনি সিস্টেমেটিক ইনভেস্টমেন্ট প্ল্যান বা সিপ-এ বিনিয়োগ করেও কোটিপতি হতে পারেন। এসআইপি-তে বিনিয়োগ করার সময় অধিকাংশই ১৫-১৫-১৫ নিয়ম মেনে চলেন। অর্থাৎ ১৫ হাজার টাকা ১৫ বছরের জন্য় ১৫ শতাংশ সুদের হারে জমা রাখছেন। ১৫ বছরের মেয়াদ শেষের পর এই জমা অর্থের পরিমাণই ১ কোটিতে বেড়ে দাঁড়ায়। যদি আপনি এই নিয়মকেই কিছুটা বদলে ১৫-১৫-৩০ করেন, অর্থাৎ ১৫ শতাংশ সুদের হারে ১৫ হাজার টাকা ৩০ বছরের জন্য জমা রেখে ১০ কোটি টাকা আয় করতে পারেন। সময়ের মেয়াদের মতো জমা অর্থ ও সুদের হারও কমানো-বাড়ানো যায়। এভাবে এসআইপিতে বিনিয়োগ করেও আপনি ৩০ থেকে ৪০ বছরের মধ্যেই ২০ কোটির মালিক হতে পারেন।